সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আমাদের প্রজন্ম

এক.
‘আমি ডেন্টাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। কিছুদিন পরই আমার পরীক্ষা। কিন্তু লেখাপড়ার কোনো চিন্তা আমার নেই। পড়ার আগে অটোসাজেশন দেই ঠিকই, কিন্তু একটু পরই ঢুঁ মারি ফেসবুকে। তারপর সেখানে আটকে যাই। এভাবে একসময় রাত শেষে ভোর হয়ে যায়। তারপর আর পড়ার সময় থাকে না। আর যখনই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি তখনই ফেসবুককে সঙ্গী করে নেই এবং লেখাপড়ার কথা ভুলে যাই।’
দুই.
‘আমি উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনা বা অন্য কোনোকিছুই ভালো লাগে না। আমার বেশিরভাগ সময় কাটে ফেসবুকে। দিনের অনেকটা সময় আমি ফেসবুকে কাটাই। এখন মনে হচ্ছে এটা অনেক বেশি প্রভাব ফেলেছে আমার ওপর। ইদানিং পড়তে বসলে নেতিবাচক চিন্তায় মাথা এলোমেলো হয়ে যায়। মেডিটেশন করতেও তখন ভালো লাগে না। শুধু ফেসবুকের চিন্তা আসে মাথায়। পড়তে বসলে অনেক ধরনের চিন্তা আসে। আশেপাশের মানুষ কী বলছে তা-ও নেতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করি।’
অনলাইন আসক্তির ওপর এ দুটো ঘটনা সিআইডি সাইবার সাপোর্টে আসা অভিযোগ থেকে নেওয়া। বেশিরভাগ সময় ফেসবুকে কাটালে অন্য আর কিছুকে ভালো লাগানো আসলেই কঠিন। বিশ্বজুড়ে পরিচালিত একের পর এক গবেষণা থেকে এটা এখন এক প্রমাণিত সত্য যে ফেসবুকসহ এ জাতীয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অভূতপূর্ব সব মানসিক সমস্যা তৈরি করছে।
সম্প্রতি রয়াল সোসাইটি অব পাবলিক হেলথ একটি জরিপ চালায় ১১ থেকে ১৫ বছর বয়স্ক দেড় হাজার কিশোর-কিশোরীর ওপর। এতে দেখা যায় ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট এবং ইনস্টাগ্রাম তাদের মনে সবচেয়ে বেশি হীনমন্যতা এবং দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করে।
১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সের তরুণতরুণীদের অর্ধেকই বলেছে ফেসবুকের কারণে তাদের মানসিক দুশ্চিন্তা, অশান্তি আর উৎকণ্ঠা বেড়ে গেছে। দু-তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা বলেছে, ফেসবুকের কারণে সাইবার বুলিয়িং বা অনলাইনে অপমান-হয়রানি করার প্রবণতা আরো গুরুতর আকার নিয়েছে।
মনোবিজ্ঞানীদের কথায়, প্রতিনিয়ত যখন একজন মানুষ এসব দেখে, তখন অবচেতনভাবেই এর সাথে সে তার নিজেকে তুলনা করতে থাকে। পরিণাম আর কিছুই নয়- হতাশা, অশান্তি। ফেসবুকের ফ্রেন্ডরা আসলে কারা? আপনি কি আদৌ এদের চেনেন? দু চারটা হাইলি এডিটেট ছবি দেখে আর ঠুনকো ‘লাইক পেয়ে যাদের ‘বন্ধু’ ভাবছেন, তাদের বাস্তব জীবন সম্পর্কে কতটুকু জানেন আপনি?
ফেসবুকে বহু বছরের পুরনো পরিচিতকে খুঁজে পেয়েছেন ভেবে যতটা উল্লসিত হয়ে উঠছেন, সত্যিই কি অত উল্লসিত হবার কিছু আছে? যোগাযোগ তো সেই ফেসবুকের পেজেই সীমিত! অথচ এই ‘বায়বীয় বন্ধু’দের জন্যেই হয়তো দিনের পর দিন আপনি অগ্রাহ্য করছেন আপনার বাবা মার মত সেই প্রিয়জনদের যারা আপনাকে নিস্বার্থভাবে ভালবাসে। গভীর মমতায় যারা সেবা করে আপনার অসুস্থতায়। নিঃশর্ত সমর্থন নিয়ে পাশে দাঁড়ায় আপনার সকল বিপদে।
সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে এযাবৎকালে আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় আসক্তির নাম ফেসবুক। ফেসবুকের ফলে আমাদের বন্ধুত্ব বেড়েছে কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে মানুষ যত বেশি ফেসবুকে আসক্ত হচ্ছে ততই সে ধীরে ধীরে একা হয়ে যাচ্ছে।
মানুষের সময় কাটছে একাকীত্বে ফেসবুকের পাতায়, ডিজিটাল ছবি হয়ে। ফেসবুকে আসক্ত একজন ব্যক্তি সমাজ থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে। ফলে সে সামাজিকীকরণের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হয়। সমাজে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার সক্ষমতা তৈরি হয় না, আর বিশেষ করে তার মানসিক শক্তি লোপ পায়। মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও আচরণের মধ্যে একটা বিরাট পরিবর্তন তৈরী হয়, মানুষ সামাজিক দক্ষতা তৈরী করতে ব্যর্থ হয়। ফেসবুক বা ইন্টারনেট আসক্ত হলে সকল ধরনের শারীরিক মানসিক সক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।
চলবে...
লেখক: রেজাউল মাসুদ
পুলিশ কর্মকর্তা।
সংবাদটি শেয়ার করুন
ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
ফেসবুক কর্নার এর সর্বশেষ

শান্তির সন্ধানে

এখন আশ্বিন মাস: ঋতুর পালা বদলে গ্রীষ্ম বর্ষা পেরিয়ে এসেছে শরৎ

ঢাকাবাসীর জন্য একজন সুপারম্যান হয়ে আসছেন হাবিবুর রহমান

নাগা-সামান্থার ভাঙা সংসার কি জোড়া লাগছে?

সংগ্রামী মা সন্তানদের কষ্ট করে বুকে আগলে উচ্চ শিক্ষিত করেছেন

এডিসি হারুনের পরিবার বিএনপি-জামায়াত: রাব্বানী

মৃত্যু ভয়ে জীবন চলে অজানা আশঙ্কায়

আপনি চলচ্চিত্রে এসেছিলেন হ্যালীর ধূমকেতুর মতো!

বাংলাদেশ কখনোই শ্রীলংকা হতে পারবে না: আসিফ
