সৈয়দপুর পৌরসভায় দূষণে-দুর্গন্ধে দুর্বিষহ জনজীবন
নীলফামারীর সৈয়দপুর প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হলেও এই শহরের রাস্তাগুলোই যেন ডাস্টবিন। পাড়া মহল্লার অলিগলির রাস্তাই শুধু নয় প্রধান প্রধান সড়কগুলোও ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যত্রতত্র খোলাস্থানে রাস্তাজুড়ে ময়লার স্তুপ হওয়ায় এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ায় যান চলাচলসহ লোকজনের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।
বিশেষ করে জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জমে থাকা আবর্জনা দিনের পর দিন পরে থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে পৌরবাসী। পঁচা ময়লা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে দূষণে চারপাশের পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে। এর ফলে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। দীর্ঘ দিন থেকে এই পরিস্থিতি বিরাজ করলেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার থাকায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কের উত্তরের মাথায় স্মৃতি অম্লান চত্বরের সামনে গৃহস্থালি ও পয়বর্জ্যের স্তুপ। এখানে বছরের পর বছর ধরে এভাবে ময়লা ফেলে অনির্ধারিত উম্মুক্ত ডাস্টবিনে পরিণত করা হয়েছে।
পৌর কর্তৃপক্ষই এইস্থানে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করেছে। ফলে রেলওয়ে কারখানা, স্টেসন, হাসপাতালসহ ৩টি ওয়ার্ডের ও একটি ইউনিয়নের লোকজনের চলাচলের অন্যতম এই সড়কটি নোংরা আবর্জনার ভাগাড় হয়ে পড়েছে। এতে যাতায়াতে অসহনীয় কষ্ট পোহাচ্ছে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী ও পথচারীরা ।
একই অবস্থা বঙ্গবন্ধু চত্বর (পাঁচমাথা মোড়) থেকে আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়গামী সড়কের। এই রাস্তায় সাবেক মেয়ের মরহুম আখতার হোসেন আধুনিক পৌর সবজি বাজারের দক্ষিণ মাথায় কলাহাটি সংলগ্ন এলাকায় সড়কের উপর আবর্জনার বিশাল স্তূপ।
জনবহুল এলাকা এবং ব্যস্ততম সড়ক হওয়ায় প্রতিমুহূর্তে অকল্পনীয় ভোগান্তি সইতে হচ্ছে জনগণকে। সেইসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত সড়কটি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এছাড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন নিয়ামতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেটের দুপাশে মূল সড়কেই গড়ে উঠেছে স্থায়ী উম্মুক্ত ডাস্টবিন। স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ পথচারীরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন।
এছাড়াও বড় বড় প্রায় সব সড়কেসহ পাড়া মহল্লার প্রতিটি রাস্তায় এমন উম্মুক্ত ময়লার স্তূপের ছড়াছড়ি। এমন কোও ওয়ার্ড নেই যেখানে রাস্তায় খোলাভাবে আবর্জনা ফেলা হয়না। এসব ময়লা আবর্জনা সপ্তাহেও পরিস্কার না করায় সমগ্র শহরই স্থায়ী ডাস্টবিন পরিণত হয়েছে । সৈয়দপুর পৌরসভার কনজারভেন্সী ইনচার্জ মমিনুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পুরো সৈয়দপুর শহরেই সব কাজই রাস্তায় হয়। তাই রাস্তায় ময়লা আবর্জনা থাকলে সমস্যা কী? প্রতিদিনের জঞ্জাল তো দৈনিকই সরিয়ে ফেলা হয়। অনেক সময় বিকাল গড়িয়ে যায় এই আর কি। এতটুকু সহ্য করতে হবে। এটা সৈয়দপুর, সিঙ্গাপুর তো নয়।’
পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী সহিদুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘৩ লাখ জনসংখ্যার এই শহরে মাত্র ২০টি ডাস্টবিন রয়েছে। জনবহুল শহর হওয়ায় ময়লা আবর্জনা ফেলার পর্যাপ্ত জায়গার সংকট রয়েছে। জনগণ জায়গা না দেওয়ায় উদ্যোগ নেওয়ার পরও আর ডাস্টবিন তৈরি করা সম্ভব হয়নি।’
যেখানে যেখানে মানুষ ময়লা ফেলছেন, সেই জায়গাগুলোতে ডাস্টবিন করে দিলে অন্তত এলাকাগুলো নোংরা হওয়া থেকে রক্ষা পেত ও স্বাস্থ্যঝুঁকিমুক্ত হতো। কেন তা করা হচ্ছে না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনও মন্তব্য নেই। মেয়র ও সচিবই এ নিয়ে ভালো বলতে পারবেন।’
কামরান নামে জিকরুল হক সড়কের এক ব্যবসায়ী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার বাসিন্দা হয়েও আমরা ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সামান্য ময়লা ফেলার ডাস্টবিনও নেই। যে কারণে যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলতে হয়। এতে শহরের অধিকাংশ রাস্তাই আজ যেন ডাস্টবিন। চলাচলে দুর্বিষহ ভোগান্তি আর দুর্গন্ধে দম আটকানোর অবস্থা।’
আশরাফ আলী নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘চলতি পৌর পরিষদের কাছ থেকে আমরা সব ধরণের সেবা থেকে সৈয়দপুরবাসী বঞ্চিত। শহরের ৮০ শতাংশ রাস্তাই ভেঙে চলাচল অযোগ্য। তারওপর জায়গায় জায়গায় ময়লার স্তূপ। নোংরায় ভরা পুরো এলাকা। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম না চালানোয় উৎকট গন্ধে টেকা দায়। তার মধ্যেই চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। বিগত ৩ বছরে উন্নয়ন তো দূরের কথা স্বাভাবিক কার্যক্রমও হয়নি। ফলে প্রথম শ্রেণীর পৌরবাসী তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছি।’
পৌরসচিব সাইদুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি তাই এখনও সব বিষয়ে জানা হয়ে উঠেনি। সে কারণে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। তবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।’
পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী মুঠোফোনে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এ বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করে পরে জানাবো। এর কিছুক্ষণ পর নিজেই কল দিয়ে জানান, এসব এলাকায় ডাস্টবিন আছে কি না তা আগে যাচাই করতে হবে। ডাস্টবিন থাকার পরও যদি রাস্তায় ময়লা আবর্জনা ফেলে তাহলে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন: যৌতুকের জন্য অন্তঃসত্তা স্ত্রীকে নির্যাতন, মৃত সন্তান প্রসব
গত ৩ বছরেও কী এ বিষয়ে জানা বা বোঝা শেষ হয়নি? এমন প্রশ্নে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
(ঢাকাটাইমস/০৭মে/এসএম)