চা শ্রমিকের ‘মুল্লুকে চল’ আন্দোলনের রক্তমাখা দিন আজ
চা শ্রমিকরা দেশে ফিরে যাবার জন্য শতবর্ষ আগে একটি বিদ্রোহ করেন। যা মুল্লুকে চল আন্দোলন নামে পরিচিত। চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠীর ইতিহাসে একটি রক্তস্নাত দিন আজ ২০ মে। ১৯২১ সালের এই দিনে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে ব্রিটিশ বাহিনীর নেতৃত্বে আসাম গোর্খা পুলিশ শত শত চা-শ্রমিককে গণহত্যা করেছিল। সেই রক্তমাখা দিনের আজ ১০২তম বর্ষ।
দিবসটি এতবছর সীমিত আয়োজনের মধ্য থাকলেও এবার দেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক চা বাগান অধ্যুষিত জেলা হবিগঞ্জে ব্যাপকভাবে আয়োজন করা হবে।
জেলার চুনারুঘাট, মাধবপুর, বাহুবল ও নবীগঞ্জের বাগানগুলোতে র্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে।
চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি সাধন সাঁওতাল ঢাকা টাইমসকে জানান, তার বাগানসহ আশপাশের অন্য বাগানগুলো সকাল সাড়ে ৯টায় র্যালি করেছে। পরে লস্করপুর চা বাগান নাটমণ্ডপে গিয়ে আলোচনা সভায় অংশ নেবেন চা শ্রমিকরা।
একই উপজেলার দেউন্দি চা বাগানের প্রতীক থিয়েটারের সংগঠক উজ্জ্বল ঢাকা টাইমসকে বলেন, চা বাগানের অনেক মানুষই পূর্ব-পুরুষদের রক্তঝরা ইতিহাস সম্পর্কে অবগত নন। প্রতীক থিয়েটার প্রতিবছরই আলোচনা, নাটক ও প্রতিবাদী সঙ্গীতের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করছে। শনিবার সকাল ৯টায় দেউন্দি চা বাগানে অবস্থিত মুল্লুকে চল স্মৃতি ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। তবে এবার সবগুলো বাগানে দিবসটি উদযাপন হবে।
শ্রমিক ইতিহাসের নির্মম এ হত্যাযজ্ঞটি ঘটে ১০০ বছর আগে। যেটি ১৮৮৬ সালের ৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের ‘হে’ মার্কেটে শ্রমিক নিধনের ঘটনাকেও হার মানায়। সেদিন প্রায় ৩০ হাজার চা-শ্রমিক আসাম ও সিলেট অঞ্চল থেকে নিজ দেশ বিহার, উড়িষ্যা, মাদ্রাজ, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ফিরে যেতে ১৭ দিন পায়ে হেঁটে চাঁদপুরে লঞ্চঘাটে গিয়েছিলেন।
পণ্ডিত গঙ্গা দয়াল দীক্ষিত ও পণ্ডিত দেওশরনের নেতৃত্বে ওই দিন চা-শ্রমিকরা ‘মুল্লুকে চল’ স্লোগান দিয়ে দীর্ঘযাত্রা শেষে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে পৌঁছান।
পরে ক্লান্ত আর নিরস্ত্র এসব চা-শ্রমিককে হত্যা করেছিল আসাম রাইফেলসের গোর্খা বাহিনী। গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জে হতাহত শ্রমিকদের পেট কেটে মেঘনা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। যাতে লাশ নদীতে ভেসে না ওঠে এবং আন্তর্জাতিক মহলেও যেন এ গণহত্যার কথা প্রকাশ না পায়।
আরও পড়ুন: দুপক্ষের কথা কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষে ২ প্রাণহানি, আহত ১০
উল্লেখ্য, চা-শ্রমিক আন্দেলনকে শক্তিশালী করতে ২০০৮ সাল থেকে ‘চা শ্রমিক দিবস’ হিসেবে এ দিবসটি প্রথমবারের পালন করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন।
(ঢাকাটাইমস/২০মে/এসএম)