স্বীকৃতি পেয়ে বেপরোয়া মৎস্যজীবী লীগ, একের পর এক সমালোচনার জন্ম

জাফর আহমেদ, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৩ মে ২০২৩, ১১:১৭ | প্রকাশিত : ২৩ মে ২০২৩, ০৯:১২

আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে দলের সহযোগী সংগঠন হিসেবে মৎস্যজীবী লীগকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। অন্যান্য সহযোগী সংগঠন তাদের কার্যক্রমে স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারলেও মৎস্যজীবী লীগ তা পারেনি। বরং একের পর এক বিতর্ক আর সমালোচনার জন্ম দিয়ে চলেছে সংগঠনটি। স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে নেতাকর্মীরাও বেপরোয়া। মৎস্যজীবী লীগের কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও বিরক্ত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিতর্ক ছড়ানোয় এগিয়ে আছে সংগঠনটি। ‘কমিটি বাণিজ্য, ‘বিতর্কিত ব্যক্তিদের আশ্রয় দেয়া, সাংগঠনিক চর্চায় গঠনতন্ত্র না মানা, যখন-তখন অব্যাহতি, অনুষ্ঠান আয়োজনে ‘অসৌজন্যতাবোধ’ এমন নানা ঘটনায় জড়িত সংগঠনের শীর্ষ তিন নেতা।

২০১২ সালে আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১১ জন পোশাকশ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় মূল আসামি ওই প্রতিষ্ঠানটির এমডি মো. দেলোয়ার হোসেন। গত বছরের ১১ ও ১২ মে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি করা হয় দেলোয়ার হোসেনকে এবং সাধারণ সম্পাদক হন আবদুল জলিল। দেলোয়ার ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি হওয়ার পরে ব্যাপক সমালোচনায় মুখে পড়ে সংগঠনটি।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখার নিদের্শনা দেন মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। এরপর তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- মৎস্যজীবী লীগের সহসভাপতি আবুল বাশার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খান, আইন বিষয়ক সম্পাদক নিখিল দত্ত। তবে গত এক বছরেও সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি।

আরও পড়ুন>>বাধা ডিঙিয়ে কারওয়ান বাজারে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙবে ডিএনসিসি

আরও পড়ুন>>বিএনপি নেতা মজনুর মুক্তির দাবিতে নয়াপল্টনে বিক্ষোভ

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল বাশার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি দেলোয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ছিল, আমরা তদন্তে দেখেছি দেলোয়ার এখনো তাজরীন ফ্যাশনসের মামলায় আসামি।’

তদন্ত কমিটি করার পরে নানান কারণ দেখিয়ে ওই কমিটির সদস্য ও সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খানকে বহিস্কার করেন মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর নস্কর।

তদন্ত কমিটির রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ আজগর নস্কর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের পক্ষে রিপোর্ট দিয়েছে। দেলোয়ার হোসেন তো কোনো আসামি না। রিপোর্ট প্রকাশ করার কিছু নেই।’

দেলোয়ার হোসেনকে ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি করার পরে সংগঠনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদ করায় ও সাধারণ সম্পাদকের নিদের্শেনা না মানায় সংগঠনের গঠনতন্ত্র না মেনে পাঁচ নেতাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এমনকি পাঁচ নেতাকে অব্যাহতি তুলে নিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা নির্দেশনা দিলেও ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণে তা প্রত্যাহার করেননি সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর নস্কর।

মৎস্যজীবী লীগের দপ্তর সম্পাদক এম এইচ এনামুল হক রাজু ঢাকা টাইমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ নির্দেশনা দেওয়ার পরেও আমাদের বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি।’

মৎস্যজীবী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খান ও উপ-প্রচার বিষয়ক সম্পাদক ইউসুফ আলী বাচ্চু ঢাকা টাইমকে বলেন, ‘বিভিন্ন জেলায় কমিটি বাণিজ্য ও তাজরীন গার্মেন্টসের ঘটনার মূল আসামি দেলোয়ার হোসেনকে ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবি লীগের সভাপতি করার প্রতিবাদ করায় আমাদের সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়। মৎস্যজীবী লীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলের পদপদবি ব্যবহার করে আদালতের সাজা থেকে বাঁচার জন্য টাকার বিনিময়ে দেলোয়ার মৎস্যজীবী লীগের মতো সংগঠনের সভাপতির পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এসব বিষয়ে গার্মেন্টস সেক্টরের ভোটরা ক্ষেপে ওঠছে। এতে করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েত পারে।

এছাড়া সংগঠনটির সিলেট জেলা সভাপতি এমএম নবী জামায়াত পরিবারের সদস্য বলেও অভিযোগ রয়েছে। একই অভিযোগ কক্সবাজার জেলার সভাপতি আজিজ চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। গাজীপুর জেলার পুরো আহ্বায়ক কমিটিই বিতর্কিত। বগুড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক মাদকাসক্ত, সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি করা হয়েছে তাঁতী লীগের বহিষ্কৃত নেতাকে। এছাড়া থানা পর্যায়েও বিতর্কিতদের নেওয়া হয়েছে।

গতকাল আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আসেননি।

মৎস্যজীবী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংগঠনটির মধ্যে বিভিন্ন অনিয়ম ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আসেননি ওবায়দুল কাদের। এই নিয়ে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর নস্কর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মৎস্যজীবী লীগের কোনো কমিটিতে বাণিজ্য হয়নি। এসব অভিযোগ মিথ্যা। ইতোমধ্যে ৪১ জেলার সম্মেলন হয়েছেঅ। সব জায়গায় যাচাই-বাচাই করে কমিটির করা হচ্ছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমানকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/২৩মে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :