সিন্ডিকেট ভাঙার বাজেট দেওয়ার আহ্বান এবি পার্টির

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ মে ২০২৩, ১৯:৩৭

আমার বাংলাদেশ (এবি পার্টি) নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সরকারের ভিতরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের ফলেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম তথা জীবনযাত্রার ব্যয় এত বেড়ে গেছে, বাজারে গিয়ে কাঁদতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বিপরীতে লাভবান হচ্ছে সিন্ডিকেটের সদস্য সরকার দলীয় মুষ্টিমেয় কিছু গোষ্ঠী। তাই আসছে নতুন অর্থবছরের বাজেট হতে হবে এই সিন্ডিকেট ভাঙার বাজেট।

রবিবার বিকালে রাজধানীর বিজয়নগরস্থ দলীয় কার্যালয়ে বাজেটপূর্ব এক সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির নেতারা এসব বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী। আরো বক্তব্য দেন দলের যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার; লিখিত, অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিষয়ক গবেষক জিয়া হাসান, ব্যবস্থাপনা বিষয়ক পরামর্শক আবুল কালাম আজাদ।

সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে বেড়ে চলা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার বাজেট। জনগণকে যেন বাজারে গিয়ে কাঁদতে না হয় বরং তাদের মুখে হাসি ফুটে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণের বাজেট। মুষ্টিমেয় কারো হাতে যেন সম্পদ কুক্ষিগত না হয় তার বিপরীতে সাম্য ও সমতা বিধানের বাজেট।

এবি পার্টির বক্তব্য, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান শক্তি হলো কৃষি, রপ্তানি ও রেমিটেন্স আয়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একক রপ্তানির বাজার। নতুন ভিসা নীতির কারণে বাংলাদেশ পশ্চিমে বড় ধরনের ভাবমুর্তির সংকটে পড়বে তাতে সন্দেহ নেই, এর প্রভাব রপ্তানিখাতেও পড়তে পারে। তখন ডলার সংকট আরো ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারলে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাবে না বাংলাদেশে। এমন পরিস্থিতিতে আসছে বাজেটে দেশের প্রধান দুই রপ্তানি গন্তব্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে রপ্তানি ধরে রাখতে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট দিক নির্দেশনার দাবি জানাচ্ছে এবি পার্টি।

বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেল ও অকটেনের দাম এখন ৫ থেকে ১০ টাকা কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছে গবেষকরা। আমরাও বলতে চাই, জনগণ যখন মূল্যস্ফীতির চাপে কষ্ট করছে তখন বিপিসিকে মুনাফায় রাখা মোটেই যৌক্তিক হবে না। আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ উঠে গিয়েছিল। যদিও প্রকৃত মূল্যস্ফীতি আরো অনেক বেশি। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় এটা উঠে এসেছে যে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১২ থেকে ১৪ শতাংশ। যদি এমনটা চলতে থাকে তাহলে ৭.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেশের কোন কাজে লাগবে না বলে মনে করে এবি পার্টি।

জার্মান ফেডারেল সরকারের শিক্ষা ও গবেষণানা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প গবেষক জিয়া হাসান বলেন, ঋণ করে ঘি খাওয়ার বাজেট নীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্রায় ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। বাকিটা দেশী ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ করা হবে। ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাকে অবাস্তব বলে মনে করি। কর ন্যায্যতা বা সাম্য নিশ্চিত করার জন্য যার আয় ও সম্পদ বেশি তার থেকে বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে সম্পদ কর আদায় জোরদার করার দাবি জানাচ্ছি, একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে কর ন্যায্যতার কোন বিকল্প নেই।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, কর, আয়কর, অগ্রিম আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক, আবগারী শুল্ক ইত্যাদি যদি প্রতিবছর হার পরিবর্তন হলে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, বিশেষ করে খরচ ও মূল্যের তালিকা করা দূরহ হয়ে পড়ে; এতে বাজেট কেন্দ্রিক ফটকা কারবার, হোর্ডিং ইত্যাদি বেড়ে যায়। তাই, উপরোক্ত ৫ টি হারের ব্যাপারে ৫ বছরের স্থিতিশীল নীতিমালা ঘোষনা করা আবশ্যক।

বাজেট বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে এবি পার্টি বাজেট বিষয়ক সংসদ গঠনের প্রস্তাব করছে যেটা স্থানীয় সকল নির্বাচিত জেলা পরিষদ ও ৫২০ টা উপজেলার চেয়ারম্যান, সকল পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদাধিকার বলে বাজেট প্রনয়ন পরিষদের সদস্য হবেন। অর্থমন্ত্রী পদাধিকার বলে এটার স্পীকার থাকবেন; রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, পরিকল্পনা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী প্যানেল স্পীকার হবেন। এছাড়া প্রাসঙ্গিক মন্ত্রী ও সুশীল সমাজের সদস্যরা বিশেষ করে দেশ বরেন্য অর্থনীতিবিদগন অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন বাজেট বিতর্কে অংশ নেবার জন্য।

ব্রিফিং এ প্রান, প্রকৃতি ও পরিবেশকে হেফাজতের লক্ষ্যে দূষণ কমানো, ব্যাপক হারে গাছ লাগানো, জলাধারকে দখলমুক্ত রাখার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবসহ বেকারত্ব হ্রাস, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবাকে আধুনিকায়ন করার জন্য কার্যকর প্রস্তাবের দাবী করা হয়। ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন দলের নেতৃবৃন্দ।

ব্রিফিংকালে নেতৃবৃন্দের মাঝে আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, এবি যুব পার্টির সদস্য সচিব শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, দিনাজপুর জেলার সদস্য সচিব মেহেদী হাসান চৌধুরী পলাশ, লক্ষ্মীপুর জেলা আহবায়ক আনোয়ার হোসেন ও সদস্য সচিব চৌধুরী সাকিব, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গাজী নাসির, সফিউল বাসার, বারকাজ নাসির আহমাদ, আব্দুল হালিম নান্নু, আমেনা বেগম, অ্যাড. আলী নাসের খান, ছাত্র নেতা মোহাম্মদ প্রিন্স, অপি তালুকদার, সুমাইয়া শারমীন ফারহানা, আমীরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/২৮মে/জেবি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :