রূপালী ও মেঘনা লাইফ ক্রেতাশূন্য হওয়ার পর ব্যবস্থা নেবে বিএসইসি, ডিএসই?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৬ জুন ২০২৩, ১৩:৫৬ | প্রকাশিত : ০৬ জুন ২০২৩, ১৩:০২

পুঁজিবাজারে ইন্স্যুরেন্স খাতের দুই কোম্পানি রূপালী ও মেঘনা লাইফের শেয়ার কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। কোম্পানি দুটি ‘দুর্বল’ এবং তাদের শেয়ারের ‘মৌল ভিত্তি’ নেই। এরপরও ভুয়া প্রচারণা চালিয়ে একটি ‘চিহ্নিত’ চক্র কোম্পানি দুটির শেয়ারদর বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ হাতানোর ছক কষছে।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এভাবে শেয়ারদর বাড়িয়ে চক্রটি ক্যাপিটাল গেইন অর্থাৎ শেয়ার বিক্রি করে বেশি মুনাফার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সর্বস্বান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ—ডিএসই বা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এ ব্যাপারে এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলছেন, রূপালী লাইফ ও মেঘনা লাইফ ক্রেতাশূন্য হওয়ার পরই কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? অভিযোগ ওঠার পরপরই ব্যবস্থা নিলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ হতো বলেই তারা মনে করছেন। অতীতেও এমন অভিযোগের দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের খেসারত দিতে হয়েছে।

তবে বিএসইসি বলছে, যেসব কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক বাড়ছে সেসব শেয়ারের ওপর নজর রাখছে তারা। উল্লম্ফনে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের বিষয়ে ‘অস্বাভাবিক কিছু’ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আর ডিএসই বলছে, শেয়ারের দর কমা-বাড়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে কোনো কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হলে তারা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়। এক্ষেত্রেও তাই করবে।

ঢাকা টাইমসের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে রূপালী লাইফের শেয়ার নিয়ে যে চক্রটি ‘গ্যাম্বলিং’ করছে, ঠিক একই চক্র মেঘনা লাইফকেও টার্গেট করেছে। এই চক্রের কারসাজিতেই দুর্বল কোম্পানি রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর ৯০ টাকা থেকে ২২৩ টাকায় পৌঁছেছে। আর আরেক দুর্বল কোম্পানি মেঘনা লাইফের শেয়ারও মাত্র ১৫ কার্যদিবসে ৬৭ টাকা থেকে ১১৩ টাকায় পৌঁছেছে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ১৪ মে মেঘনা লাইফের শেয়ার ছিল ৬৭ দশমিক ৮০ টাকা। ২৮ মে তা পৌঁছে ৯০ দশমিক ৮০ টাকায়। গত রবিবার ওই শেয়ারের দাম ওঠে ১০৩ দশমিক ১০ টাকা। আর গতকাল সোমবার ১১৩ টাকা ৪০ পয়সা। কোম্পানিটি এদিন পুঁজিবাজারের ২০ শীর্ষ কোম্পানির মধ্যে দ্বিতীয় নম্বরে ছিল।

বিনিয়োগকারীদের অনেকেই মনে করেন, বাজারে বড় ধরনের উত্থান-পতনের পেছনে একটি মহলের কারসাজি রয়েছে। বিনিয়োগকারী সেজে ছোট-বড় এসব চক্র দেশের পুঁজিবাজারে সক্রিয় রয়েছে।

এসব কথিত বিনিয়োগকারীরা (গ্যাম্বলার) লোভের ফাঁদে ফেলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ হাতানোর ছক কষছেন। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে আকৃষ্ট করা হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।

অভিযোগ উঠেছে, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতে অভিযুক্ত পুঁজিবাজারের বিতর্কিত বিনিয়োগকারী লুৎফুল গনি টিটুর পাতানো ছকেই রূপালী ও মেঘনা লাইফের শেয়ারদর রাতারাতি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এই চক্রটি একের পর এক বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারদর কৃত্রিমভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

বিএসইসি সূত্র বলছে, একই কায়দায় লুৎফুল গনি টিটু ২০১৯ সালের ১ আগস্ট থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত সহযোগীদের নিয়ে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ারদর কৃত্রিমভাবে ২৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩২ টাকা ৭০ পয়সায় তোলে।

কারসাজির এই প্রক্রিয়ায় লুৎফুল গনি টিটু, তার স্ত্রী শাম্মি নেওয়াজ ও টিটুর প্রতিষ্ঠান সাতরং এগ্রো ফিশারিজ মোট ১ কোটি ১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৫৭ টাকা মুনাফা করে। এ কারসাজির দায়ে টিটুর দুটি কোম্পানিকে মোট ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।

এসব বিষয়ে কথা বলতে লুৎফুল গনি টিটুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে ঢাকা টাইমস। টিটুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোনকল করে এবং বার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া মেলেনি।

ইন্স্যুরেন্স খাতের এই দুই দুর্বল কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরাও। তারা বলছেন, এক শ্রেণির কথিত বিনিয়োগকারী পরিকল্পিতভাবে কৃত্রিম উপায়ে কিছু কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়াচ্ছেন।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে অর্থ হাতানোই তাদের মূল উদ্দেশ্য। শেয়ারবাজারে কারসাজি চক্র বেপরোয়া হয়ে ওঠায় এভাবে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে।

ডিএসইর একটি সূত্র জানিয়েছে, মেঘনা লাইফ ও রূপালী লাইফের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির পেছনে টিটুর হাত থাকার যে কথা বাজারে আলোচনা হচ্ছে, সে বিষয়ে ডিএসইর নজরদারি করছে।

অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলোকে নজরে রাখা হয়েছে বলে ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন ডিএসইর উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান।

তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দাম ওঠা-নামা শেয়ার বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানের দাম উঠতে থাকে, তাদের নজরে রেখে ডিএসই পর্যালোচনা করে থাকে। কারসাজি বা কৃত্রিমভাবে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

পুঁজিবাজারে এমন কারসাজির বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তেমন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয় না বলেই মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন।

ঢাকা টাইমসকে এ পুঁজিবাজার বিশ্লেষক বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ই দেখা যাচ্ছে, অনেক প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট শেয়ার কিনে নিয়ে কারসাজি করছে। তাদের কারসাজির কারণে সেসব শেয়ারের দাম বাড়ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ পুরো বাজার।’

‘তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তেমন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। কারসাজির ফলে ৩৫ টাকার শেয়ার হয়ে যায় ৩০০ টাকা, ৮০ টাকার শেয়ার হয়ে যাচ্ছে ১ হাজার টাকা। সবকিছু মিলিয়ে বাজারে যে তারল্যটা থাকার কথা তা আর থাকে না।’

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইন্স্যুরেন্স খাতের কিছু কোম্পানির শেয়ারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। তেমন কিছু দেখা গেলে আমরা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে তদন্তের নির্দেশ দেবো।’

(ঢাকাটাইমস/০৬জুন/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ করতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি ডিভাইস বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে: অর্থ প্রতিমন্ত্রী

পাটজাত পণ্যের বৈশ্বিক বাজারকে কাজে লাগাতে হবে: পাটমন্ত্রী

অধ্যাপক খলীলী ব্যাংক এশিয়ার বোর্ড অডিট কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত

স্বর্ণের দাম কমল ভরিতে ৩ হাজার ১৩৮ টাকা

জনতা ব্যাংকের ম‌্যানেজার্স ইন্ডাকশন প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন

বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে স্থানান্তরিত হলো ন্যাশনাল ব্যাংক ডিজাস্টার রিকভারি সাইট

ইসলামী ব্যাংকের ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম উদ্বোধন

টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে ওয়ালটন, মুনাফা বেড়েছে ৫১২ কোটি টাকা

মিনিস্টারের শতকোটি টাকার ঈদ উপহার জিতে আনন্দিত ক্রেতারা 

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স উদ্বোধন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :