পুঁজিবাজারে সফল হবেন কীভাবে?

জয়ন্ত দে
| আপডেট : ১০ জুন ২০২৩, ১৪:৫২ | প্রকাশিত : ১০ জুন ২০২৩, ১৩:৫৩

ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগ করে যারা হতাশায় ভুগছেন প্রথমত তাদের বাফেটের একটি উক্তি স্মরণ করে দিচ্ছি— “In short bad news is an investor best friend, It lets you buy a slice of America’s future at a marked-down price.” (সংক্ষেপে খারাপ খবর হল একজন বিনিয়োগকারীর সেরা বন্ধু, এটি আপনাকে আমেরিকার ভবিষ্যতের এক টুকরো একটি চিহ্নিত মূল্যে কিনতে দেয়)। ২০০৮ সালে মন্দা চলাকালীন বাফেট মন্তব্যটি করেন।

মার্কেটে যখন পলিটিক্যাললি কিংবা অর্থনৈতিকভাবে কোনো খারাপ নিউজ আসে—মন্দা, আগ্রহ বৃদ্ধি, যুদ্ধ, নির্বাচনের মতো স্পর্শকাতর নিউজগুলো শেয়ার বাজারে অনেক সময় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, বাজার অনেক সময় ক্র্যাশও করে। এই সময় বাজারে চরম হতাশা কাজ করে, গভীর উদ্বেক ও অনিশ্চয়তা কাজ করে। আর বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী তখন সাইড লাইনে থাকে, অনেক বিনিয়োগকারী ফোর্স সেল, প্যানিক সেল ও ফিয়ার সেলের শিকার হন। আগ্রহজনকভাবে স্টকগুলো যখন তার পূর্বের দাম থেকে অনেক নিচে নেমে আসে তখন বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী আর স্টক পছন্দ করেন না, কেউ কেউ আবার ক্যাপিটাল মার্কেটকে ঘৃণা করতে শুরু করেন।

ক্যাপিটাল মার্কেটে সফল হতে হলে আগে ক্যাপিটাল মার্কেটের প্রকৃতি ও মার্কেট কীভাবে পরিচালিত হয় এ সম্পর্কে জানতে হবে। আমরা যদি পৃথিবীর সব থেকে বড় ও বেশি রিটার্ন দেয়া আমেরিকান মার্কেটের দিকে তাকাই এই মার্কেটটি গত ৯০ বছরে প্রায় ৫০ বারের মতো পতন হয়েছে প্রায় গড়ে ১০ শতাংশের মতো, আর এর মধ্যে ১৫টি পতন ছিল ২৫ শতাংশের বেশি। আমেরিকান পুঁজিবাজার প্রতি ২ বছরে একবার পতন হয় যা প্রায় ১০ শতাংশের মতো, আর প্রতি ৬ বছরে একটা বড় পতন হয় যা ২৫ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশে গত এক যুগে ২টি বড় পতন পরিলক্ষিত হয়। ২০১০-১১ সালে ৪০ শতাংশেরও বেশি পতন হয়েছিল, আর বর্তমানে কোভিডের সময় পতন হয়েছিল ১৫ শতাংশের মতো। যখন বাজার অনেক নিচে নেমে যায় তখন প্যানিক না হয়ে, কম দামে ভালো শেয়ার ক্রয় করতে পারেন।

এখন অনেকের হয়তো প্রশ্ন পুঁজিবাজার কেন, বিনিয়োগের আরও তো অনেক ক্ষেত্র আছে?

প্রথম কারণ হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজার অন্য অ্যাসেট ক্লাস থেকে বেশি রিটার্ন দেয়। গত ১০ বছরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের গড় রিটার্ন ছিল প্রায় ৫.৫৪ শতাংশ ২০১৯ এ পতন হয়েছিল প্রায় ১৪.১৪ শতাংশ আর ২০২১ সালে রিটার্ন ছিল সর্বোচ্চ প্রায় ২৭.৪৯শতাংশ। একই সময় পৃথিবীর ৮৭টি দেশের গড় রিটার্ন ছিল ৩২.২১শতাংশ।

গত ১০ বছর যাবৎ ব্যাংক ইন্টারেস্ট রেট কমছে, আর বর্তমানে ব্যাংক ইন্টারেস্ট রেট যে অবস্থানে আছে মুদ্রাস্ফিতীকে বিট করতে পারছে না।

বিনিয়োগের আর একটি বড় ক্ষেত্র হলো জমি অথবা ফ্ল্যাট। গত বিশ বছরে সর্বোচ্চ রিটার্ন হয়েছে গুলশান আর ধানমন্ডি এলাকায়, কিন্তু সাধারণত জমি বা ফ্ল্যাটে গত ১০ বছরে গড়ে রিটার্ন হয়েছে ৩.৫-৩.৮ শতাংশ। যদিও জমি অনেক নিরাপদ বিনিয়োগ। কিন্তু সবার পক্ষে জমি বা ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব হচ্ছে না।

কিন্তু পুঁজিবাজারে আপনি অল্প অল্প করে বিনিয়োগ করতে পারবেন আর এখন থেকে একটা ভালো রিটার্নও পেতে পারেন। আপনার বয়স যদি এখন বিশ বছর হয়, আপনি যদি প্রতি মাসে ৪০০ টাকা করে ইনভেস্ট করেন। বছরে যদি ১০ শতাংশ গড়ে রিটার্ন আসে তাহলে আপনার বয়স যখন ৬০ হবে আপনি প্রায় ২২ লাখ টাকা পাবেন। আপনার বয়স যদি ৩৫ হয় আপনি যদি ১৬০০ টাকা করে প্রতি মাসে বিনিয়োগ করে আর গড়ে যদি ১০ শতাংশ হারে রিটার্ন পান তাহলে ৬০ বছর বয়সে আপনি ২২ লাখ টাকা পাবেন।

পুঁজিবাজারে দীর্ঘ সময় ধরে বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাওয়া যায়। কিন্তু আপনি যদি স্বল্প মেয়াদে পুঁজিবাজারে এ বিনিয়োগ করেন তাহলে আপনি ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। প্রতিটি স্টক আর পূর্ববর্তী সর্বোচ্চ দাম থেকে বছরে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত উত্থানপতন হতে পারে। পুঁজিবাজারে সফল হতে হলে ৫-১০ বছর মেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে।

প্রতিটি পতনের পর উত্থান হবে আর প্রতিটি উত্থানের পরে হবে পতন। তাই বাজার পতন হলে বিচলিত না হয়ে ভালো মানের স্টকগুলো কম রেটে কিনে রাখুন।

ভালো মানের স্টক চিনবেন কীভাবে?

ভালো মানের কোম্পানি যাচাই করতে হলে খুব বেশি জটিল প্রক্রিয়ায় না গেলেও হয়। প্রথমত জানার চেষ্টা করবেন কোম্পানিটি কেমন, কোম্পানিটির প্রতি বছর আয় কেমন হচ্ছে, কোম্পানিটি প্রতি বছর ডিভিডেন্ট দেয় কেমন? তাদের ম্যানেজমেন্ট কেমন জানার চেষ্টা করুন, কোম্পানিটির ব্র্যান্ড ভ্যালু কেমন, তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের বাজারে চাহিদা কেমন, প্রযুক্তিগতভাবে তারা নিজেদের আপডেট করছে কি না। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা কেমন আর তাদের বিজনেস মডেল কতটা সফলতা দিচ্ছে, তাদের রিজার্ভ কেমন, এসব বিষয় আপনি অবসর সময় একটু মনোযোগ দিলেই পারবেন। এছাড়াও আপনি কোম্পানির ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট থেকেও কোম্পানির ব্যাপারে অনেক তথ্য পাবেন। এমনও হতে পারে কোম্পানিটির পণ্যের আপনি নিজেও একজন ক্রেতা, আপনি যে অফিসে কাজ করেন সেখান থেকে অনেক অফিসে যোগাযোগ করছেন, কিংবা আপনার একজন প্রতিবেশী ওই কোম্পানিতে জব করছেন, বিভিন্ন উপায়ে আপনি চাইলে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।

আর ভালো মানের ৩-৫টি কোম্পানি খুঁজে বের করা যথেষ্ট। সব কোম্পানি সম্পর্কে অযথা সময় নষ্ট করে লাভ নেই। ২-৩টি কোম্পানি খুঁজে বের করে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে থাকুন।

প্রতিটি স্টক উঠানামার পিছনে থাকে একটি কোম্পানি আর এই কোম্পানিটির সাফল্যের ওপর নির্ভর করে স্টকের প্রাইস বৃদ্ধি আর কোম্পানিটি যদি লোকসান করে তাহলে স্টকের দর পতন হয়। অনেক সময় ম্যানুপুলেশন হয়ে অনেক কোম্পানির দাম বাড়ে কিন্তু কোম্পানিটি একটি বড় পতনের শিকার হয় পরবর্তীতে। তাই কোম্পানির গ্রোথ ছাড়া অযথা দর বৃদ্ধি পেলে সে কোম্পানিতে বিনিয়োগ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।

বিনিয়োগ করার পূর্বে এই সব বিষয় নিয়ে ভালো চিন্তা করুন, বুঝে শুনে বিনিয়োগ করুন, নিজেকে বিশ্বাস করুন আর ধৈর্য ধরুন, সফলতা আসবেই।

লেখক: পুঁজিবাজার বিশ্লেষক, পুঁজিবাজারের আপডেট পেতে STOCK OBSERVER সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

ভর্তুকি কমানোর পদক্ষেপ জানতে চায় আইএমএফ

ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট ব্যাংকিং অফিসারদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ

ইসলামী ব্যাংকের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা

বাপেক্স ও এস.সি ইউরো গ্যাস সিস্টেমস এস.আর.এল রোমানিয়ার মধ্যে চুক্তি

সোনার দাম কমলো ভরিতে ২১৩৯ টাকা

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর নতুন ৫টি কালেকশন বুথের উদ্বোধন

ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি পেলেন নুরুল ইসলাম মজুমদার

প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবু জাফর

সোনালী লাইফের অফিস ভাড়াকে ভবনের ক্রয়মূল্যের অগ্রিম পরিশোধ দেখানোর দাবি

ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ করতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি ডিভাইস বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে: অর্থ প্রতিমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :