সুনামগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত ৪: মামলা ছাড়াই আটক ১৫, আতঙ্কে পুরুষশূন্য গ্রাম
![](/assets/news_photos/2023/07/12/image-316308.jpg)
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে মসজিদে কাঁঠাল নিলামকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে চারজন নিহতের পর গ্রামের পুরুষরা গ্রেপ্তারের ভয়ে গ্রাম ছেড়েছেন। কে কোথায় আত্মগোপন করেছেন কেউই জানে না। গ্রামজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রয়েছে পুলিশ মোতায়েন।
এদিকে, নিহতের ঘটনায় মামলা নেওয়ার জন্য পুলিশ অপেক্ষা করলেও কোনো পক্ষই অভিযোগ নিয়ে থানায় না যাওয়ায় ঘটনার তিন দিনেও মামলাও হয়নি।
গত সোমবার উপজেলার হাসনাবাজ গ্রামে সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার পর এলাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, কাঁঠাল নিলাম ইস্যুতে সংঘর্ষ হলেও মূল কারণ এলাকায় সরাইমরল ও মালদার গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘ ৪ যুগেরও বেশি সময় ধরে আধিপত্য বিস্তার, মামলা ও জমি জমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ বুধবার জানান, এ ঘটনায় পুলিশ অভিযোগ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু দুই পক্ষের লোকজনই এলাকা ছেড়ে পলাতক। আসলে অভিযোগকারী পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এখনো মামলা হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি। তবে এ বিষয়ে পুলিশ আজকেই একটা সিদ্ধান্ত নেবে বলে তিনি জানান। এছাড়াও সংর্ঘষের সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ অভিযান চালিয়ে উভয় পক্ষের তিন দিনে ১৫ জনকে আটক করেছে। বর্তমানে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
দেশ ছেড়ে পালানোর উদ্দেশ্যে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সোমবার (১০ জুলাই) রাতে সংর্ঘষে জড়িত ও সংঘর্ষে একটি পক্ষের হয়ে উস্কে দেয়ার কারণে এবাদুল হক এবাদ নামে এক আসামিকে দুবাইগামী একটি ফ্লাইট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান শান্তিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ খালেদ চৌধুরী।
ওসি জানায়, ফ্রান্স প্রবাসী তার ভাই মইনুল হোসেন ও যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে তার জন্য সব ইমিগ্রেশনে বার্তা পাঠানো হয়েছে।
শান্তিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, গত সোমবার (১০ জুলাই) বেলা ১১টায় জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের হাসনাবাজ গ্রামে সরাই মরল ও মালদার গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। এতে উভয় পক্ষের চারজন নিহত হয়। নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
হাসনাবাজ গ্রামের বাসিন্দা মকসুদ মিয়ার স্ত্রী রাজিয়া বেগম জানান,ঘটনার পর থেকে তাঁর স্বামী ও দুই ছেলে বাড়িছাড়া। তাঁরা কোথায় আছে কিছুই জানি না।
জামলাবাজ গ্রামের বাসিন্দা পারভেজ আহমদ বলেন,পুরো গ্রামই এখন নীরব। মনে হয় কোনো মানুষ নাই। বাড়িঘর খালি। তবে গ্রামে পুলিশ মোতায়েন আছে। নিহতের লাশ দাফন করেছে আশপাশের গ্রামের মানুষজন।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ জানিয়েছেন, হাসনাবাজ গ্রামে সংর্ঘষের খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। নির্দোষ কাউকে হয়রানি করা হবে না। তবে সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত
গ্রামের সরাই মরল গোষ্ঠী ও মালদার গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে আধিপত্য ও জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। গত ২০০৬সালের পর থেকে তাদের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আদালতে ৭-৮টি মামালা বিচারাধীন রয়েছে। বিগত সময়ে ঈদের জামাতে সংর্ষের ঘটনায় পুলিশ এসল্ট মামলাও রয়েছে এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে।
এর মধ্যে গত শুক্রবার (৭ জুলাই) জুম্মাবার হাসনাবাজ গ্রামের মসজিদে এক ব্যক্তি একটি কাঁঠাল দান করেন। মসজিদে গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে এই কাঠালটি নিলামে তোলা হয় এবং দাম হাঁকানো হয়। এতে গ্রামের সরাই মরল গোষ্ঠীর দ্বীন ইসলামের পক্ষের লোকজন দামের কথা শোনা যাচ্ছে না বলে আওয়াজ তুললে প্রতিপক্ষ একই গ্রামের মালদার গোষ্ঠী সুনু মিয়া ও জুনাব আলী বলে উঠেন মসজিদের ভেতরে অবস্থানকারী সবাই শুনলেও তোমরা কেন শুনতে পাওনি। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকটি হয়। এ সময় মালদার গোষ্ঠীর শেখ ফরিদ নামে একজন কাঁঠালে লাথি মারলে বিষয়টি নিয়ে বাগবিতণ্ড ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দু পক্ষের লোকজন।
এ ঘটনার জের ধরে রবিবার (৯ জুলাই) গ্রামের রাস্তা চলাচলে সরাই মরল গোষ্ঠী জাহাঙ্গীরকে মালদার গোষ্ঠীর লোকজন বাধা দিলে বিষয়টি নিয়ে আবারও উত্তেজিত হয়ে যায় দুই পক্ষ। পরে রাতভর দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র সংগ্রহ করতে থাকেন উভয়পক্ষ।
ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বাছিত সুজনসহ শালিস ব্যক্তিরা সোমবার (১০ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে মধ্যস্থতা করতে হাসনাবাদ গ্রামে গেলে উভয় পক্ষের আশ্বাসে বিচার সালিশের পরিবেশ সৃষ্টি করেন। এবং তারা কোনো পক্ষই সংর্ঘষে লিপ্ত হবে না হবে জানায়। কিন্তু তারা চলে যাওয়ার পর সরাই মরল গোষ্ঠীর দ্বীন ইসলামের লোকজনের সঙ্গে প্রতিপক্ষ মালদার গোষ্ঠীর সুনু মিয়া ও জুনাব আলীর লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় দু পক্ষে ঘর বাড়ি ভাংচুর করা হয়।
সংর্ঘষে ঘটনাস্থলে সরাই মরল গোষ্ঠীর দ্বীন ইসলাম পক্ষের হাসনাবাজ গ্রামের মৃত ছুফি মিয়ার ছেলে মো. বাবুল মিয়া (৫৮), একেই গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে নুরুল ইসলাম (৪২) ঘটনাস্থলে ও একই গ্রামের মালদার গোষ্ঠী জুনাব আলী পক্ষের আব্দুল বাছিতের ছেলে মো. শাহজাহান (৩৬) হাসপাতালে নেয়ার পথে ও সংঘর্ষের দিন গুরুতর আহত হয়ে গোপনে চিকিৎসা নিয়ে মঙ্গলবার ভোরে মালদার গোষ্ঠীর মৃত আজির মোহাম্মদের পুত্র মুখলেছুর রহমান (৬০) নিহত হয় ও উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হন।
প্রসঙ্গত, কাঁঠাল নিয়ে সংঘর্ষ নিহত ৪ জন, ঘটনার পর থেকে ১৫জন আটক,গ্রেফতার আতংকে পুরুষ শুন্য হাসনাবাজ গ্রাম। ঘটনার তিন দিনেও মামলা করে নি কোনো পক্ষ। কাঠাল নিলাম ইসু হলেও মুল কারন এলাকায় সরাইমরল ও মালদার গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘ ৪ যুগেরও বেশি সময় ধরে আধিপত্য বিস্তার,মামলা ও জমি জমা নিয়ে বিরোধ।
(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/এআর)
সংবাদটি শেয়ার করুন
বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ এর সর্বশেষ
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360309.jpg)
সাগরে লঘুচাপ, উপকূলে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360303.jpg)
টাঙ্গাইলে বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360302.jpg)
বিজিবির নিরাপত্তায় সারাদেশে জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন চলাচল শুরু
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360301.jpg)
রংপুরে ১২ মামলায় গ্রেপ্তার ১৫০
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360299.jpg)
কলাপাড়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি মুক্তা, সম্পাদক রাসেল
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360294.jpg)
এক সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৬ কোটি টাকা লোকসান
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360291.jpg)
তাড়াশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল শিক্ষকের
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360285.jpg)
বনভূমি দখল করে কারখানার সড়ক নির্মাণ
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360284.jpg)
নরসিংদী কারাগার থেকে পালানো জঙ্গী জুয়েল গাজীপুরে গ্রেপ্তার
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360281.jpg)