নানা সমস্যায় শত কোটি টাকার ব্যবসা হারাচ্ছেন শেরপুর স্টেডিয়ামের ব্যবসায়ীরা

নানা সমস্যায় জর্জরিত শেরপুর শহরের স্টেডিয়াম মার্কেটের আড়তদাররা। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ইজারাদারের পক্ষ থেকে মাত্রাতিরিক্ত খাজনা আদায়, বেহাল অবকাঠামো, জলাবদ্ধতা এবং পাইকারদের প্রাকৃতিক কাজ সারার ব্যবস্থা না থাকায় দিন দিন ক্রেতার সংখ্যা কমছে। ফলে এক সময়ের জনপ্রিয় এই পাইকারি বাজারটি আজ ধংসের দ্বারপ্রান্তে। এসব কারণে প্রতিবছর তারা অন্তত শত কোটি টাকার ব্যবসা হারাচ্ছেন। অন্যদিকে মাত্রারিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শেরপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে শহরের মাধবপুর এলাকার স্টেডিয়াম মার্কেটটি বাৎসরিক চুক্তি ভিত্তিতে ভাড়া নেয় শেরপুর পৌরসভা। স্টেডিয়াম গ্যালারির নিচে রয়েছে বিভিন্ন আয়তনের ১৭টি দোকান। এছাড়া মার্কেটের সামনে রয়েছে প্রায় তিন বিঘা জমি। সেখানে নিয়মিত সবজির আড়তদারি চলে।
দুই ভাই ট্রেডার্সের সত্বাধিকারি এবং আলু, পেঁয়াজ ও রসুনের আড়তদার ফরিদুল ইসলাম বলেন, ২০১২ সালের দিকে ৫০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে গ্যালারির নিচের ১টি দোকান ভাড়া নেই। ওই সময় ক্রীড়া সংস্থা মাসিক ১৩৫০ টাকা হারে দোকান ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। ব্যবসা শুরুর প্রথম থেকে প্রতি বস্তা পণ্য বিক্রিতে আমরা ইজারাদারকে সাড়ে তিন টাকা হারে খাজনা দিতাম। অন্যদিকে ক্রেতাদের কাছ থেকে ওই একই বস্তায় আরো পাঁচ টাকা খাজনা নিতো ইজারাদার। এখন আমাদের খাজনার পরিমাণ ঠিক থাকলেও পাইকারদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ১০-১৫ টাকা হারে খাজনা। কিন্তু এর কোনো রশিদ খাজনা আদায়কারী দেয় না। এছাড়া পৌরসভার পক্ষ থেকেও আজ পর্যন্ত খাজনা প্রদানে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে নির্দিষ্ট কোন তালিকাও বাজারে টাঙানো হয়নি।
ওই ব্যবসায়ী আরো বলেন, ২০০৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সহনীয় মাত্রায় খাজনা আদায় করায় বাজার জমজমাট ছিল। ওই সময়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ হাজার কেজি মাল বিক্রি হতো। ২০১৭ সাল থেকে যথেচ্ছভাবে খাজনা আদায়ের ফলে বাজারে পাইকারদের আনাগোনা কমতে শুরু করে। এখন সারা দিনে এক হাজার কেজি মাল বিক্রি করতে কষ্ট হয়ে যায়। এক সময়ের জনপ্রিয় এই বাজারটি এখন ধংসের দ্বারপ্রান্তে। ব্যবসার পরিস্থিতি ভালো না থাকায় গত এক বছর যাবত দোকান ভাড়া পরিশোধ করতে পারছিনা। আমার মতো অন্য ব্যবসীয়দের একই অবস্থা।
তিনি জানান, আলু ও পেঁয়াজের বস্তায় নির্দিষ্ট সংখ্যক খাজনা নেয়া হলেও বেগুন, করলা, মরিচ, বরবটি, ঝিঙ্গা ও পেঁপেসহ অন্যসব কাঁচা পণ্যে আরো উচ্চহারে খাজনা আদায় করা হয়।
সবজির আড়তদার লুৎফর রহমান বলেন, আমরা প্রায় দেড়শতাধিক কাঁচামাল ব্যবসায়ী নিজেদের উদ্যোগে অস্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করে পণ্য বিক্রি শুরু করি। প্রথম দিকে এক বস্তা পটলের জন্য পাঁচ টাকা খাজনা নেয়া হতো। ওই সময়ে ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন অন্তত কোটি টাকার পণ্য হাত বদল করতো। আর এখন সব ধরণের সবজির বস্তায় ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত খাজনা দিতে হচ্ছে। আর এক ভ্যান সবজির জন্য পাইকারি ক্রেতাদের কাছ থেকে জোর পূর্বক ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত খাজনা আদায় করা হয়। এসব ঘটনায় পাইকার আর খাজনা উত্তোলনকারীদের মধ্যে তুমুল বচসা চলতো। হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। এসব কারণে বড় বড় পাইকাররা এখন আর এই হাটে আসে না। ফলে প্রতি বছর আমরা শত কোটি টাকার ব্যবসা হারাচ্ছি।
বাজারে খাজনা আদায়কারি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে পৌর কর্তৃপক্ষ সরকারি ভ্যাটসহ ৫১ লাখ টাকায় ইজারা দেয়। এর আগে আরও তিনবার একই মূল্যমানে ইজারা প্রদান করা হয়। চলতি বছর বাজার খাস কালেকশনে ইজারা দেয়া হয়েছে। এখন প্রতিদিন খাজনা তুলে চুক্তি মোতাবেক পৌরসভাকে টাকা দেয়া হচ্ছে।
ইজারাদার আরিফ হোসেন বলেন, পৌরসভার বিধি মোতাবেক আমরা খাজনা আদায় করি। তিনি দাবি করেন, কোন ক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়না বরং কম নেয়া হয়।
স্টেডিয়াম মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও সোহাগী ট্রেডার্সের মালিক নূর হোসেন ফকির বলেন, বাজার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে সকল ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসে আলোচনা করা হবে। ওই সভা থেকেই পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মানিক দত্ত বলেন, পৌরসভার তরফ থেকে সবশেষ বছরে সাড়ে ছয় লাখ টাকা ভাড়া দিতো। এবার তারা দেড় লাখ টাকা দিতে চাচ্ছে। আমি এতে সম্মত নই। বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এর ধারাবাহিকতায় এক মাস আগে মার্কেটের সকল ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। প্রয়োজনে পুরো বাজার আমার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এর অবকাঠামো উন্নত করে নতুন করে বরাদ্দ দেব। তখন পৌরসভাকে শুধু বাজারের জন্য নির্দিষ্ট হারে কর পরিশোধ করবো।
পৌরসভার মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন বলেন, ইজারাদাররা ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে বেশি খাজনা আদায় করে। যে কারণে বাজারে লোকজন আসা কমিয়ে দিয়েছে। এ জন্য ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৌরসভার কাছ থেকে টেন্ডার করে বাজার নেয়ার পর ইজারাদাররা তাদের পলিসি অনুযায়ী চলে, যাতে তাদের ভালো আয় হয়। তারপরও আমি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
(ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/এআর/এসএ)

মন্তব্য করুন