ইয়াবার বিকল্প ব্যথানাশক ট্যাবলেট, সেবনকারী বেশিরভাগ কিশোর

জয়পুরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১৪:১৮ | প্রকাশিত : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩১

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে মাদকদ্রব্য দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় মাদকসেবীরা আসক্ত হচ্ছে বিকল্প নেশায়। সর্বনাশা ইয়াবার বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির ব্যথানাশক ট্যাবলেট। এ কারণে মাদকসেবীরা ছুটছে ফার্মেসিগুলোতে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই কম মূল্যে ও সহজে তারা পাচ্ছে নেশাজাতীয় এসব ট্যাবলেট।

অনেক মাদকসেবী নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত মনে করে প্রকাশ্যে ভিড় জমাচ্ছে ফার্মেসিগুলোতে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ফার্মেসি মালিকরা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ৫০, ৭৫ ও ১০০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেটের পাতা দেদার বিক্রি করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরিবের ইয়াবা বলে খ্যাত টাপেন্টা, পেন্টাডল, সিনটা, লোপেন্টাসহ বিভিন্ন ট্যাবলেটের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার অধিকাংশ এলাকার কিশোর ও যুবকরা। এসব ট্যাবলেট হাতের নাগালে পাওয়ায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও এ নেশার বিষবাষ্পে বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। এসব ওষুধ সেবন করলে ব্যথার পাশাপাশি ঘুম ও নেশার চাহিদা মেটায়। গোপনে ওষুধের দোকানগুলোতে বিক্রি হয়। কিছু অসাধু দোকানের মালিক-কর্মচারী রাতারাতি ধনী হওয়ার স্বপ্নে অতি লাভের আশায় সরবরাহ করে মাদক সেবনকারীদের মাঝে। যা দিনের পর দিন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রশাসনের তৎপরতায় ইয়াবার দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প দামের এসব ট্যাবলেট বর্তমানে মাদকসেবীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন কোম্পানি ভিন্ন ভিন্ন নামে এ জাতীয় ট্যাবলেট বাজারজাত করছে। দিনের চেয়ে রাতে এর চাহিদা বেড়ে যায়। তাই সন্ধ্যা হলেই ওষুধের দোকানগুলোতে মাদক সেবনকারীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। আর এ সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ফার্মেসী মালিক কোন ঝুঁকি ছাড়াই মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মাদকসেবী জানান, আগের মতো সহজে মাদকদ্রব্য পাওয়া যাচ্ছেনা। ফলে বিকল্প মাদকের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে।

তারা বলেন, একটি ইয়াবা ট্যাবলেট ১২০-৩৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেতো এখন এর দাম হাকানো হচ্ছে ৪০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। এক পুরিয়া গাঁজার দাম আগে ছিল ২০-২৫ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ টাকা। ফেন্সিডিল...টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে এসব মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করতে নিরাপদ মনে করছে না মাদকসেবী ও বিক্রেতারা। তাই অধিকাংশ মাদকসেবী বিকল্প নেশার দিকে ঝুঁকছেন।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা সদরসহ প্রায় সব জায়গায় ওষুধের দোকানে ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওইসব ট্যাবলেট দেদারছে গোপনে বিক্রি হয়। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রি করা সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু অতি মুনাফার আশায় তা বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদেরও ড্রাগ লাইসেন্স বিহীন কোন ফার্মেসির মালিকের কাছে এসব ওষুধ বিক্রি করা নিষেধ।

অপরদিকে, বাজারে কাঁশের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃতসিরাপের পর্যাপ্ত চাহিদা লক্ষ্য করা গেছে। এতে কিছু কিছু কোম্পানির সিরাপে অ্যালকোহলের পরিমান বেশি থাকে। মাদকসেবীরা ফেন্সিডিলের পরিবর্তে ফার্মেসী থেকে মাদকদ্রব্য তৈরির প্রধান উপকরণ হিসেবে কাঁশের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত সিরাপ সংগ্রহ করেন। এসব সিরাপ ফার্মেসীর মালিকেরা প্যাকেটের গায়ে লেখা মূল্যের দ্বিগুণ দামে বিক্রি করেন বলেও জানাম মাদকসেবীরা। মাদকসেবীরা ঘুমের ওষুধের সাথে কাঁশির সিরাপসহ বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে তৈরি করছে এক ধরনের মাদক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফার্মেসী মালিক বলেন, ‘ইদানিং উপজেলায় মাদকসেবীদের কাছে ব্যথানাশক ট্যাবলেট ব্যাপক জনপ্রিয়। মাদকসেবীদের শতকরা ৭০-৭৫ ভাগই এখন ব্যথানাশক ট্যাবলেটে আসক্ত। বেশি চাহিদার কারণে এসব ট্যাবলেটের খুচরা মূল্য ২৫-৩০ টাকা হলেও প্রতি পিস ৭০-১০০ টাকাদামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সোলায়মান মেহেদী বলেন, ‘এসব ট্যাবলেট মাদক হিসেবে সেবন করা শরীরের জন্যে মারাত্বক ক্ষতিকর। মাদক সেবনে শরীরে যে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয় এগুলো সেবনে সে রকমই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া শরীরে সৃষ্টি করে। নিয়মিত এসব ব্যথানাশক ওষুধ সিগারেট বা আংপাতে পুড়িয়ে ব্যবহার করে ধোয়া টানলে মস্তিষ্কে সমস্যা, কিডনির সমস্যা, মাইগ্রেন, হাড়ক্ষয়, হাইপারটেনশনসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।’

পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে পাঁচবিবিতে মাদকের সংখ্যা কম। প্রকাশ্যে কেউ বিক্রি করছেনা। তবে, কিছু ব্যবসায়ী গোপনে বিক্রি করছে। তাদেরকেও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। তাছাড়া মাদক বিরোধী বিভিন্ন সচেতনতামূলক কাজ করছে পুলিশ। আমরা সব সময় জনগনের পাশে আছি।

(ঢাকাটাইমস/০৭ আগস্ট/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :