খালেদা জিয়ার কিছু হলে দায় সরকারের: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ১৭:০২ | প্রকাশিত : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ১৬:৪০

বেগম খালেদা জিয়া এই উপমহাদেশের শুধু নয়, এশিয়ার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন নেত্রী উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বন্দি করা হয়েছিল ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে। এখনও তিনি বন্দি অবস্থায় আছেন। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তার কিছু হলে সরকারকে সম্পূর্ণ দায় নিতে হবে। তার আমলে মেয়েদের বিনামূল্যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়। এভাবে তার অবদান বলে শেষ হবে না।’

শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে পদযাত্রা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব বলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার দাবিতে এই পদযাত্রার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়া গৃহবধূ থেকে রাজনীতি থেকে এসেই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন। তিনি সারাদেশে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা তথা চারণ কবির মতো দেশের মানুষকে গণতন্ত্রের পক্ষে জাগ্রত করে চলছেন। তাই তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। যেই দুই কোটি টাকার অভিযোগে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে সেই টাকা এখন আট কোটি টাকা হয়েছে। একই ধরনের মামলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে হয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে শুধু মুক্তি দেওয়া হয়নি মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে। তাদের মন্ত্রীও করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ অসাংবিধানিক ও অবৈধ সরকার। তারা ১৫ বছর ধরে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে। এরা এখন গণতন্ত্রের জন্য নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। দেখেন আমাদের ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক জিসানসহ ছয়জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছয় ঘণ্টার মধ্যে তাদের মুক্তি না হলে দায় দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে শুধু তারাই নয়, আমাদের নেতাকর্মীদের কেউ ঘরে থাকতে পারে না। তাদেরকে পুলিশ হয়রানি করছে। এরা বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সবই ধ্বংস করেছে। আমরা এই সরকারের পদত্যাগ চাই। ইনশাআল্লাহ আগামীতে একটি ভালো নির্বাচন হবে। যেখানে জনগণ তাদের ভোট দিতে পারবে। এখনো সময় আছে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করবেন না, বাসা বাড়িতে হানা দিবেন না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। অবিলম্বে এক দফা দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির তানভীর আহমেদ রবিন, উত্তর বিএনপির আমিনুল হকের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান প্রমুখ।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আহমেদ আযম খান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আতাউর রহমান ঢালী, ডতযযসৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরফত আলী সপু, নাসির উদ্দিন অসীম, রকিবুল ইসলাম বকুল, ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, শিরিন সুলতানা, খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, নিলোফার চৌধুরী মনি, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, নাজিমউদ্দিন আলম, রফিক সিকদার, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে কাদের গণি চৌধুরী, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. শেখ মনির উদ্দিন, অধ্যাপক আবদুল করিম, অধ্যাপক দেবাশীষ পাল, ড. মো. নূরুল আমিন, ডা. মো. আবদুস সালাম, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. মো. মেহেদী হাসান, সহ অসংখ্য নেতাকর্মী।

মির্জা আব্বাস বলেন, ইস্পাত কঠিন মনোবল ধরে রেখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আমরা আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি। তাকে অবিলম্বে বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিতে হবে। চিকিত্সকরা তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মানেই হাসিনার পদত্যাগে বাধ্য হবে।

তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান সহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। নেতাকর্মীরা বাসায় থাকতে পারেন না। এই অনাচার দুরাচার থেকে মুক্ত হতে হলে শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায় ছাড়া উপায় নেই। বিদেশি প্রভুদের দয়ায় কোনো কাজ হবে। দেশের মানুষ রাজপথে নেমেছে। তারা হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরবে।

ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমরা মামলা হামলাবাজ সরকারের বিদায়ের লক্ষ্যে এখানে পদযাত্রা করছি। এদেরকে বিদায় নিতে হবে। তারা আমাদেরকে হামলা মামলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চায়। এভাবে কিছুদিন হয়তো টিকে থাকা যায় তবে চিরদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আধ হোক খাল হোক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় করবো।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা হবে না। কদিন আগে একজন বিশিষ্ট আলেম দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজা নিয়ে কী করলো? হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে আমাদের নেত্রীর জানাজা আমরা ঠিকমতো দিতে পারবোনা। খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। তিনি কোনো অন্যায় করেন নাই। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে করতে এতদূর এসেছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাই, এই সংসদের বিলুপ্ত চাই।

তিনি বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কেউ অশান্তি করতে চায় তাদেরকে জবাব দেওয়া হবে। পুলিশ দেখলে পালানো যাবে না। হাতুরি বাহিনী মাঠে নামলে তাদের হাত পা ভেঙে দেওয়ার অধিকার আমাদের আছে। আমরা অনেক রক্ত দিয়েছি। অনেকে প্রাণ দিয়েছে। অনেকে জেলখানায় গেছেন। সবকিছুর হিসেব নেওয়া হবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে। হাসিনার পতন মানে দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বিচারিক আইন উপেক্ষা করে সাংবিধানিক আইন উপেক্ষা করে জেলে পাঠানো হয়েছে। শুধু মানুষের ভোটাধিকার লুটে নিয়ে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এটা করা হয়েছে। আজকে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তাদের বিচার হবে। দেশে এখন আওয়ামী বিচার লীগ নামে একটি সংগঠন হয়েছে। এটা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না হলেও জনগণ কিন্তু বুঝে গেছে। এরা কিভাবে ন্যায় বিচার করবে! এরা তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির আওতায় চলে আসবে। কেউ রেহাই পাবেন না। ইনশাআল্লাহ দেশে শুভদিন আসছে।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। আমরা এখনো আপোসহীন আন্দোলন করছি। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে কোনো আপোস নাই। তাকে সুচিকিৎসা না দিয়ে আরো বব্যাধিগ্রস্ত খরা হয়েছে। বাইরে চিকিত্সা নিতে দিচ্ছেনা। আমরা তার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবি করছি। বাংলাদেশে অন্যায় অবিচার বন্ধ করতে হবে। এটা চিরদিন চলতে পারে না।

বিকেল তিনটায় পদযাত্রা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আগে থেকেই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সেখানে আসোন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিকেল সোয়া চারটার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে কাকরাইল মোড় ও শান্তিনগর মোড় হয়ে মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। একই দাবিতে আজ সারাদেশে মহানগর, জেলা উপজেলা পর্যায়ে পদযাত্রা করছে বিএনপি।

উল্লেখ্য যে, গত ১০ আগস্ট থেকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

(ঢাকাটাইমস/১৯আগস্ট/জেবি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :