না বুঝে বিনিয়োগ, অতঃপর গলায় দড়ি

এরশাদ উদ্দিন
  প্রকাশিত : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ২৩:৩৪| আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ২৩:৪৮
অ- অ+

বিভিন্ন সময় এমন কিছু ঘটনা চোখের সামনে আসে- যা দেখলে, চিন্তা করলে মনে হয় আমরা এই দেশের মানুষ ২০০ বছর পিছিয়ে।

কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমে জানতে পারলাম, এমটিএফই নামে একটি অ্যাপস বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনা জেনে নতুন করে মনে পড়ে গেল ১৯৯৬ বা ১৯৯৭ সালে নিজ চোখে দেখা শেয়ার বাজারের সেই ভয়ংকর খেলার কথা।

কিছুদিন আগে অর্থ লোপাট, পাচার, আত্মসাতের খবর পাওয়া গেল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালী, ই-অরেঞ্জ, রিং আইডি, ইউনিপে টু ইউ, ধামাকা, এহসান গ্রুপের বিরুদ্ধে। তারাও গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

আরেকটু পেছনে তাকালে দেখা যায়- গ্রাহকের অর্থ লোপাট করেছে ডেসটিনি, যুবকসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। যা নিয়ে রীতিমতো দেশজুড়ে তোলপাড় হয়েছিল সে সময়।

এ প্রেক্ষাপটে আমার সরল প্রশ্ন হচ্ছে- আমার যখন ডেসটিনি ও যুবকের কাণ্ড সম্পর্কে জেনে গেলাম, পলকে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান দ্বারা সর্বস্বান্ত হলাম, ক্ষতিগ্রস্ত হলাম- এরপরও কেন একই ধরনের স্বপ্নের ফাঁদে পড়লাম? কেন সেই একই লোভ, কেন সেই একই কান্না?

ডেসটিনি ও যুবকের ফাঁদে পড়ে কিভাবে মানুষকে প্রতারিত হতে হলো- সেই নিরেট সত্য জেনেও কেন সেই একইভাবে রাতারাতি কোটিপতি হতে ছুটলাম। এরপরেও কি আমাদের শিক্ষা হলো না? কবে হবে?

যদিও সবশেষ এমটিএফই এর প্রতারণার শিকার হয়ে আবার সর্বস্ব হারালো লক্ষাধিক মানুষ। যাদের মধ্যে বেকার যুবকের সংখ্যাই বেশি। কি লাভ হলো এই সোনার হরিন ধরতে গিয়ে, কি পেলাম আমরা? কান্না আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কি জুটলো ভাগ্যে। সব হারানোদের দীর্ঘশ্বাস আমাকে ব্যথিত করে সেকথা সত্যি। তবে আড়ালে কিছু রয়েই যায়- তা হচ্ছে এসব মানষের অতি লোভ। আমি বলব দোষ তাদের যারা অতি লোভ করে, রাতারাতি বড় হতে চায়। ভালো মন্দ বিচার না করেই, না বুঝে, না জেনে মানুষ কেন লোভের বশবর্তী হয়ে বিনিয়োগ করে- এ প্রেক্ষাপটে সে হিসাব মিলানোই সবচেয়ে দুষ্কর বলে মনে হয় আমার কাছে। হতে পারে এ নিতান্তই আমার নিজস্ব অভিব্যক্তি, অভিমত।

উদাহরণ হিসেবে বলতে চাই- ১৯৯৬ সালে আমি সবেমাত্র এইচএসসি পাস করে ঢাকা এসেছি। একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেছি। থাকতাম নারিন্দা এলাকায়। প্রতিদিন নারিন্দা থেকে মতিঝিল হয়ে ফকিরাপুল অফিসে আসতাম। তখন স্টক এক্সচেঞ্জ ছিল মতিঝিল মধুমিতা সিনেমা হলের সামনে। সকাল থেকে শেয়ার ব্যাবসায়ীদের এত বেশি ভিড় থাকত যে গাড়ি চলাচল করতে বেগ পেত। ইত্তেফাক মোড় থেকে শুরু করে পুরো মতিঝিল এলাকায় জ্যাম লেগে থাকত। গ্রামের পানের দোকানদারও বউয়ের হাতের সোনার বালা বিক্রি করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেছিল। অবশেষে সব হারিয়ে অনেকে জীবনও দিয়েছে। বেছে নিয়েছে আত্মহত্যা বা আত্মহননের পথ।

একটা বিষয় বলে রাখি, শেয়ার বিজনেস আমরা বিশ্ব্যবিদ্যালয়ে অনার্স ও মাস্টার্সে পড়েছি। শেয়ার বাজারে দর ওঠানামা বা বিনিয়োগের ভবিষ্যত নির্ভর করে কোম্পানির সাইজ অব ক্যাপিটাল, কোম্পানির গুডউইল, অর্থাৎ কোম্পানির টোটাল ইতিহাসের ওপর।

যেমন- কিশোরগঞ্জের একটি ব্রিকস ফ্যাক্টরির শেয়ার এবং লাক্স সাবান বা ইউনিলিভার বা স্কয়ার কোম্পানির শেয়ার এক নয় এবং ভবিষ্যতেও এক হবে না। এটা সম্ভব নয় কোনো সমীকরণেই। ব্রিকস ফ্যাক্টরি ছোট একটা ফ্যাক্টরি। মালিকপক্ষ যে কোন সময় ক্লোজ করে দিতে পারে। তবে স্কয়ার বা ইউনিলিভার বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

১৯৯৬-৯৭ সালে কোনো পান দোকানদার এসেই যদি শেয়ার ক্রয় করে হঠাৎ বড় লোক হয়ে যেতে পারতো তবে তা ইতিহাস হয়ে থাকত। কিন্তু তা কি আদৌ সম্ভব? না একদমই না। তখনও এই অসচেতনতার জন্য না বঝে পলকে কোটিপতি হওয়ার লোভে পড়ে এক শ্রেণির মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে, এখনও এক শ্রেণির একই পরিণতি ভোগ করছে। যা হওয়ার তাই তো হচ্ছে। তখনও অসাধু ব্যবসায়ী ছিল, এখনও আছে।

অনেক অসাধু ব্যাবসায়ীরা ছোট ছোট কোম্পানির শেয়ার কিনে কয়েকজন মিলে শেয়ারের দাম বৃদ্ধি করে। না বুঝে অনেকেই এই শেয়ার ক্রয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। দাম যখন আকাশচুম্বি হয়, তখন অসাধু ব্যাবসায়ীরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায়।

আরেকটি কথা হল ১৯৯৬-৯৭ সালে শেয়ার ছিল প্রিন্ট করা সার্টিফিকেট। তখন এই সার্টিফিকেট হাত বদলের মাধ্যমে শেয়ার কেনা বেচা হতো। তখনও গ্রাম থেকে হঠাৎ করে আসা একজন ব্যক্তি সর্বস্ব বিক্রয় করে শেয়ার সার্টিফিকেট ক্রয় করতো। সেটা কি আদৌ আসল নাকি নীলক্ষেতে তৈরি নকল শেয়ার সার্টিফিকেট- সেটা কি তিনি জানতেন? না জানতেন না। উনি তো শোনা কথায় বিশ্বাস করে কোটিপতি বনে যেতে এসেছেন সব বিক্রি করে। শেয়ার বিজনেস যেখানে আমরা বিবিএ এমবিএ পড়ে জানার চেষ্টা করেছি। সেটা তারা হঠাৎ করে কীভাবে জানবে। আমি কাউকে ছোট করছি না। এসব বলার উদ্দেশ্য হলো- আগে জানুন, শিখুন এবং বুঝুন- এরপর বিনিয়োগ করুন।

লেখক: করিমগন্জ পৌর মডেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। বঙ্গবন্ধু পরিষদ সহ-সভাপতি কিশোরগঞ্জ জেলা, সাবেক ছাত্র নেতা ও সমাজসেবক।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মানিকগঞ্জের সাবেক এমপি মমতাজ গ্রেপ্তার
কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে অনিয়মের প্রমাণ পেল দুদক
কোতয়ালী এলাকায় বিশেষ অভিযান, মাদক কারবারিসহ গ্রেপ্তার ১৫
ফরিদপুরে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা