মৃত্যু ভয়ে জীবন চলে অজানা আশঙ্কায়

আমিনুল ইসলাম
  প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:১১
অ- অ+

মসজিদ। ভেসে আসে আজানের সুর। সকালে সন্ধ্যায় রাতে। দুপুরে বিকেলে। সেই সুরে স্রষ্টার মাহাত্ম্য পবিত্রতার পরশে স্নিগ্ধতা ছড়ায়। আধ্যাত্মিকতার আবেশ বিছিয়ে দেয় সবখানে, সর্বত্র। মহান করুনাময়ের আরাধনায় নিবেদিত হয় লাখো লাখো প্রাণ।

মসজিদের সাথেই মক্তব। এখানেই আরবী বর্ণমালায় জীবনের প্রথম পাঠ। সেই পাঠের ধারাবাহিকতায় পবিত্র কোরআন পড়তে শিখা। আরবী ভাষায় প্রেরিত কোরআনের তেলাওয়াত সুমধুর, সুললিত, সুশ্রাব্য।

ঈমাম সাহেব একা কিন্তু তার প্রশাসন যন্ত্র অতি কঠোর। তটস্থ বিদ্যার্থীগন। এক সাথে সুর করে পড়তে হতো সুরা আর দোয়া দুরুদ। এতে মুখস্ত করতে সুবিধা। সম্মিলিত কন্ঠের এ আবৃত্তি বেশ দূর থেকেও শুনা যেত। সুর বেসুর এক হয়ে যেত পবিত্র শব্দের মিলিত লয়ে।

এই মসজিদ ছিল ধর্মীয় এবং সামাজিক কর্মকান্ডের মূল কেন্দ্র। ঈদ, শবে বরাত, শবে মেরাজ, তারাবির নামাজে সারারাত জীবন্ত থাকত মসজিদ। সেই সাথে জেগে রইত পুরো গ্রাম।

এই মসজিদের আঙিনায় হতো বিচার শালিস এমনকি ছোটখাট বিয়ের অনুষ্ঠানাদি। নামাজের আগে মুসুল্লিরা এখানে বসেই গল্প করতো, আলাপ করতো নানা সামাজিক সমস্যা নিয়ে। তখন গ্রামের মুরুব্বীদের শাসন ছিল কড়া। সামাজিক শৃঙ্খলা ছিল কঠোর।

হুজুর শেখাতেন ধর্মীয় আচার। পাপ পুণ্যের নানা নির্দেশনা। বলতেন অনেক গল্প কাহিনী। নাবালক (নাবালেগ) থাকা অবধি কোন পাপ নেই এই ধারনা আমার কাছে হলো বদ্ধমূল। সেই অবধি কামনা করতাম মৃত্য, নিশ্চিত বেহেস্ত যাবার অদম্য আকুল প্রত্যাশায়।

তারপর যখন জাগতিক আয়োজন পারলৌকিক হিসাব কিতাবে আঁচড় কাটতে শুরু করল তখন ভয় ধরলো মনে। মৃত্যু ভয়; প্রবল প্রকট। তথাপি ধর্মের বিধানকে বারংবার পাশ কাটিয়ে চালিত হলো জীবন অজানা আশঙ্কায় অনিশ্চয়তায়।

এখন গ্রামের মসজিদে মাইক আছে। সেই মাইকে মোয়াজ্জিন আযান দেন। ফজরের পর মক্তবের ছোট ছোট বাচ্চারা মধুর লালিত্যে তেলাওয়াত করে কোরানের অমীয় বাণী। শুক্রবার ঈমাম সাহেব বাংলায় খুৎবা দেন; শুনান ধর্মের নিদেশনা।

কখনো হঠাৎ করে অসময়ে বেজে উঠে মসজিদের মাইক। কন্ঠ স্পষ্ট। শঙ্কার আবেশ ছড়ায় অন্তরমাঝে। থেমে যায় ভাবনা।

মৃত্য সংবাদ!!!!

অতি আপন, অতি নিকটজন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বিধাতার অধিকতর নৈকট্যে প্রত্যর্পণ। কাল যিনি সশব্দ সচল, আজ তিনি নিঃশব্দ নিথর।

একদিন গ্রামের এ মসজিদ থেকেই উচ্চারিত হবে আমারও মৃত্যুর খবর। ললিত কন্ঠে ঈমাম সাহেব উচ্চারণ করবেন - ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সেই শব্দ, সেই সুর, সেই কথা, সেই ভাষা আর কখনোই আমার কান অবধি পৌছুবে না!!!

তারপরও জগৎ চলবে। একেবারেই আগের নিয়মে। কারো থাকা, না থাকায় জগতের তেমন কিছুই আসে যায় না।

তখনো আকাশে চাঁদ উঠবে, পূর্ণিমার আলোয় পৃথিবী ভরিয়ে দেবে। গ্রামের দক্ষিনটায় দাড়িয়ে কেউ হয়তো অস্তগামী সূর্যপানে তাকিয়ে হারিয়ে যাওয়া জীবনের কথা ভাববে। লকলকে লাউয়ের ডগা আঁকশি বেয়ে মাচায় উঠতে গিয়ে হয়তো দিকচ্যূত হয়ে মাটিতে থেতলে পড়বে। বুনো ফুলে ভরে যাবে ঘাসে ভরা মাঠ। আকাশ অন্ধকার করে আসবে কাল মেঘ। বৃষ্টি নামবে অঝোর ধারায়।

সেই পৃথিবীতে সবই আছে, সবাই আছে। আমি শুধু নেই!!!!!!!!!

লেখক: পুলিশ কর্মকর্তা

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এনআরবিসি ব্যাংকে ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ ও ফরেন ট্রেড’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
মিটফোর্ডে প্রকাশ্যে ভাঙারি ব্যবসায়ীকে হত্যা: এখনো হত্যার বিস্তারিত কারণ জানতে পারেনি র‍্যাব
কুমিল্লায় অজ্ঞাত যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার
জনগণের প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক সুশাসন বিলম্ব হলে দেশ পিছিয়ে যাবে: লিটন 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা