মৃত ব্যক্তির নামে এক জনকে হাজির করে বিনা মূল্যের গরু নিয়ে গেলেন চেয়ারম্যান!

সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম দেখিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য বিনা মূল্যে বিতরণকৃত গরু, গো-খাদ্য ও ঘর নির্মাণের সরঞ্জাম অন্যজনের মাধ্যমে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর পোড়াগাঁও ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীর বিরুদ্ধে।

অভিযোগে বলা হয়, সুবিধাভোগীর তালিকায় ২০১৫ সালে মৃত নির্মলা সাংমার নাম ছিল। এ অবস্থায় আলভার্ট মারাক নামের এক ব্যক্তির নামে বিনা মূল্যে বিতরণ করা গরু, গো-খাদ্য ও ঘর নির্মাণের সরঞ্জাম গ্রহণ করা হয়। পরে তাকে এর বিনিময়ে হোটেলে খাইয়ে খুশি করে গরুসহ ওইসব সরঞ্জাম নিয়ে নেন হযরত আলী। এর বিচার চেয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের অধীনে উপজেলার সমতলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ৫০ জনের মধ্যে একটি করে গরু, ১৫০ কেজি গো-খাদ্য ও গোয়ালঘর নির্মাণের জন্য পাঁচটি খুঁটি, পাঁচটি ঢেউটিন এবং ১৬০টি ইট বিনা মূল্যে বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১ নম্বর পোড়াগাঁও ইউনিয়ন থেকে তালিকা আহ্বান করা হলে গত ৭ আগস্ট তালিকা পাঠান ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন। ওই তালিকায় ২০১৫ সালে মৃত আন্ধারুপাড়া গ্রামের নির্মলা সাংমার নাম অন্তর্ভুক্ত করেন তিনি।

৩০ আগস্ট উপকারভোগীদের মাঝে এসব বিতরণের তারিখ ধার্য করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। তবে এর আগেই জামাল উদ্দিন দেশের বাইরে চলে গেলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি মেম্বার হযরত আলী। বিতরণের আগের দিন পর্যন্ত মৃত নির্মলার জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হযরত আলী মোবাইল ফোনে চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের সঙ্গে পরামর্শ করেন। সে অনুযায়ী নির্মলার পরিবর্তে তালিকায় একই গ্রামের আলভার্ট মারাকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বিতরণের দিন সকালে ইউএনও, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে আলভার্ট মারাক তার নামে থাকা গরুসহ অন্যান্য সরঞ্জাম উত্তোলন করেন।

আলভার্ট মারাক বলেন, ২৯ আগস্ট রাতে হাবেজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে স্থানীয় একটি দোকানে চা পান করিয়ে গরুসহ অন্যান্য সরঞ্জাম উত্তোলন করতে হবে এ বিষয়টি জানান। পরদিন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হযরত আলী এবং হাবেজ উদ্দিন তাকে মোটরসাইকেলে নালিতাবাড়ী শহরে নিয়ে যান। পরে গরু উত্তোলন শেষে হযরত আলী তাকে হোটেলে খাবার খাওয়ান। এ সময় হযরত আলী গরুসহ অন্য সরঞ্জাম তার কাছ থেকে নিয়ে হাবেজ উদ্দিনকে দিয়ে দেন। আর আমি খালি হাতে বাড়ি ফিরে আসি।

আলভার্ট মারাক আরও বলেন, আমি গরিব অসহায় মানুষ। তাই এ নিয়ে আর কথা বাড়াইনি। পরে আমার শ্যালিকা রফলা এ বিষয়ে জানতে হযরত আলীর কাছে ফোন দিলে তিনি ধমক দেন।

এক পর্যায়ে ইউএনও তার ফেসবুক টাইমলাইনে আলভার্টের গরু নেওয়ার ছবি প্রকাশ করলে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়।

পরে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিস্তারিত লিখে এর বিচার দাবি করে বুধবার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

এলাকাবাসী বলছেন, ২০১৫ সালে নির্মলা মারা যাওয়ার পরও মাত্র একমাস আগে তার নাম সুবিধাভোগীর তালিকাভুক্তির বিষয়টি রহস্যজনক। চেয়ারম্যান শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে অন্যায়ের আশ্রয় নিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, নির্মলার মৃত্যুর বিষয়টি আমরা জানতাম না। জানার পরে আলভার্ট মারাকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আমি নিজে তাকে নিয়ে গেছি গরু তুলতে। এরপর আমি আর কিছু জানি না।

তিনি দাবি করেন, এই ঘটনা পুরোটাই উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তার সম্মান নষ্ট করার জন্য কেউ এ নাটক সাজিয়েছে।

দেশের বাইরে থাকায় মেসেঞ্জারে চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোকসেদুর রহমান লেবু বলেন, আমি ঢাকায় আছি। এ বিষয়ে তেমন কিছু শুনিনি। নালিতাবাড়ী ফিরে এ বিষয়ে কথা বলতে পারবো।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফয়জুর রহমান লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চেয়ারম্যান দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে ফিরলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/ প্রতিনিধি/এআর)