কার স্বার্থের বলি বনানীর প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট? স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কেন একচোখা!

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:৩০| আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:০৩
অ- অ+

লাইসেন্সবিহীন একটি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সেখানে উপস্থিত। আর দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসা লাইসেন্স থাকা একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

প্রথম ঘটনাটি ২০২০ সালের ২১ মার্চের। লাইসেন্সবিহীন সেই হাসপাতাল করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল নিয়ে জালিয়াতি করা রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার হন হাসপাতালটির চেয়ারম্যান মো. সাহেদ, যিনি এখনো কারাগারে।

অন্যদিকে সম্প্রতি বন্ধ করে দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে রাজধানীর বনানীর ১২ নম্বর রোডে অবস্থিত প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোনো রকম সুযোগ না দিয়ে একের পর এক নোটিশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ করেছে। এমনকি মন্ত্রণালয়ে করা প্রতিষ্ঠানটির আপিলও আমলে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিজের শহর মানিকগঞ্জেও লাইসেন্সবিহীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলিসহ দেশে লাইসেন্সবিহীন এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তেমন কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

অথচ রাজধানীর স্বনামধন্য একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উঠেপড়ে লাগায় জন্ম দিয়েছে নানান প্রশ্নের। এ ঘটনার পেছনে প্রতিষ্ঠানটি দখলে নিতে ‘অন্য কেউ’ কলকাঠি নাড়ছে বলেই অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে ঢাকা টাইমস জানতে পেরেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রেসক্রিপশন সেন্টার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জায়গাটি কিনে নিতে বায়না করেছেন বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ছেলে রাহাত মালেক। তাই জায়গাটি ছেড়ে দেওয়া উত্তম হবে। আর সেটি না হলে তাকে (রাহাত মালেক) যেন উপর্যুক্ত শেয়ার দিয়ে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লিমিটেডের মালিকানায় যুক্ত করা হয়।

প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এমন প্রস্তাবে অপারগতা প্রকাশ করে মন্ত্রিপুত্রকে জানায়, জায়গাটি নিয়ে ভাড়াসহ কয়েকটি বিষয়ে আদালতে মোকদ্দমা চলছে। এমতাবস্থায় ত্রুটিযুক্ত স্পেস কেনার সঙ্গে মন্ত্রীপুত্রের জড়িত না হওয়াই শ্রেয়। এই পরামর্শই সম্ভবত কাল হয় প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট মালিক কর্তৃপক্ষের জন্য।

সূত্রগুলো ঢাকা টাইমসকে জানায়, গত ১৮ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি পরিদর্শন দল প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন অমান্য; অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে জনগণের হয়রানি; মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট এবং অদক্ষ জনবলের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করার অভিযোগ আনা আনা হয়।

এই তিনটি কারণ দেখিয়ে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ও লাইসেন্স স্থগিত করার আদেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ আপিল করলেও তা অগ্রাহ্য করা হয়। পরে নিয়মানুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আপিল করলেও তারা রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাশাপাশি তৎপর হয় রাজউক ও ডেসকো। গত ২৭ আগস্ট ডেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শাহ সুলতান এক চিঠি দিয়ে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কর্তৃপক্ষকে আবাসিক ভবনে বিধিবহির্ভূতভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করার নির্দেশ দেয়।

বিস্ময়কর হচ্ছে, বনানীর ১২ নম্বর রোডে একাধিক বাণিজ্যিক, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং ডেসকো প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গত ১৬ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে বিল আদায় করে আসছে।

আর রাজউক গত ১৯ জুন প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কর্তৃপক্ষকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধের চিঠি দেয়। অথচ বনানীর ওই এলাকায় শতাধিক বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থাকলেও তাদের এমন কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি বলে জানতে পেরেছে ঢাকা টাইমস।

প্রশ্ন উঠেছে, যদি রাজউক, ডেসকো ইতিবাচক উদ্দেশ্যেই আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করতে চাইবে তাহলে বেছে বেছে শুধু প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারকেই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা কেন?

তথ্যানুসন্ধানে ঢাকা টাইমস জানতে পেরেছে, ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি এ বছরের ১৮ জানুয়ারি ৬ কোটি টাকা দলিলমূল্যে কিনে নেন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ইমরান মুস্তাফিজ। যিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে রাহাত মালেকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। রেন্টাল কোর্টের মাধ্যমে ১৭ হাজার ৪৫৯ বর্গফুট বাড়ির ভাড়াও নিচ্ছেন ইমরান মুস্তাফিজ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, দেশে লাইসেন্সধারী ক্লিনিক-ডায়গনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৪ হাজার ৪৪৫টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় রয়েছে এক হাজার ৯১২টি।

বিশেষ বা নিয়মিত অভিযানে অনিয়ম-অসঙ্গতি পেলে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে বন্ধ করার আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ রয়েছে।

যে বা যেসব ত্রুটি-অসঙ্গতির কারণে বন্ধ করা হয়েছে তা পূরণ করে আবেদন করার পর পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সবকিছু ঠিক থাকলে আবারও চালু করার অনুমতি দেওয়া হয় বন্ধ প্রতিষ্ঠানকে।

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ওপারে কারফিউ, সুনামগঞ্জের ১২ কিলোমিটার সীমান্তে বিজিবির সতর্ক অবস্থান
খালিশপুরে শহীদ মিনারের জমি দখলের ভিডিও করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণায় শাহবাগে ছাত্র-জনতার উল্লাস
৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা