তামিম ইকবালের সঙ্গে অন্যায় হলো কী-না!
বলা যেতে পারে সবাই হতভম্ব। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নেই তামিম ইকবাল। দীর্ঘ ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে এই ওপেনার দিয়েছেন অনেক। তার ঝুলিতে অজস্র রেকর্ড। এবারের বিশ্বকাপেও হয়ত ঢেলে দিতেন নিজের সবটুকু।
তবে তা আর হচ্ছে না। কারণ, সাকিবের স্কোয়াডেই নেই তামিম। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিসিবির টিম ঘোষণার পর থেকেই এ নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্ক। আলোচনায় তামিমের দলে না থাকা। কেউ বলছেন, নিজেই থাকেননি তামিম। আবার বেশিরভাগই বলছেন, তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
আবার কেউ তো জোরালোভাবে প্রশ্নই ছুঁড়ে দিচ্ছেন, তামিমকে এভাবে বিশ্বকাপ টিমে না রাখা তার প্রতি অন্যায় হলো কী-না! যদিও তামিমের বিষয়ে আলোচনায় একটি ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি বলেছেন, তামিম নিজেই বিশ্বকাপ দলে থাকতে চাননি।
তামিমের কোমরের ইনজুরি দীর্ঘদিনের। সেরে উঠতে লন্ডন থেকে চিকিৎসাও নিয়ে আসেন তিনি। বিশ্বকাপ খেলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে এশিয়া কাপ না খেলে করেন দীর্ঘ পুনর্বাসন। প্রায় ৮০ দিন পর নিউজিল্যান্ড সিরিজে মাঠে ফিরেছিলেন তামিম।
এমন খবরও চাউর হয়েছে যে, তামিম নাকি বিসিবিকে জানিয়ে দিয়েছেন তার পক্ষে বিশ্বকাপে সব ম্যাচ খেলা সম্ভব নয়। তিনি বিরতি দিয়ে দিয়ে বিশ্রাম নেবেন আর খেলবেন এবং তাতে করে তামিম হিসাব কষে বের করেছেন তিনি বিশ্বকাপে ৫টির বেশি ম্যাচ খেলতে পারবেন না।
তামিমের এই কথার জের ধরে নাকি অধিনায়ক সাকিব ও প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বেঁকে বসেন এবং ‘আনফিট’ তামিমকে বিশ্বকাপ থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেন।
আবার বিসিবির নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে সাকিব জানিয়েছেন তামিমকে বিশ্বকাপ দলে রাখা হলে তিনি বিশ্বকাপে খেলবেন না। এ নিয়ে সোমবার গভীর রাতে পাপনের বাসায় বৈঠক করেন অধিনায়ক সাকিব এবং কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
তারা উভয়ে নাকি বোর্ড সভাপতিকে জানিয়ে দেন, বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে তারা কোনো ‘আনফিট’ বা ‘অর্ধেক ফিট’ ক্রিকেটারকে দলে চান না। এমনকি তিনি যদি তামিম ইকবালের মতো অভিজ্ঞ কেউ হলেও!
ক্রিকেটপ্রেমীদের অভিযোগ, শুধু সাকিবের আবদারের কারণেই দলে রাখা হয়নি তামিমকে। কেননা তামিম বিরতি দিয়ে দিয়ে বিশ্রাম নিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অধিনায়ক সাকিব ‘আনফিট’ কাউকে দলে চান না জানিয়ে তামিমকে বাদ দেন।
তবে এসব বিষয় সত্যি নয় বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। সাকিব ও কোচের কথায় নয় বরং সবার সঙ্গে আলোচনা করেই তামিমকে দলে না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, দাবি তার।
মাশরাফি নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টে বলেছেন, ‘একটা তথ্য হয়তো সবাই ভুল দিচ্ছে—তামিমকে বাদ দিয়েছে, আসলে সত্য হলো, তামিম দলে থাকতে চায়নি। দলে না রাখা আর থাকতে না চাওয়ার ব্যবধান অনেক। আমার মনে হয় এতটুকু সম্মান তামিমের প্রাপ্য।’
তবে তামিম কেন দলে থাকতে চাননি সেই উত্তর মাশরাফির কাছে নেই। উত্তরটি কেবল তামিমই দিতে পারবেন বলে সবশেষ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ উল্লেখ করেছেন।
সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘এখন প্রশ্ন হতে পারে তামিম কেন দলে থাকতে চাইল না। আসলে সে উত্তর আমার কাছে নেই। সেটা একমাত্র তামিমই বলতে পারে।’
তবে তামিম ইকবাল নিজে থেকে কিছু জানাননি। তিনি যদি নিজে থেকে এ বিষয়টি পরিষ্কার করেন তখনই হয়ত জানা যাবে আসলে কী হয়েছে।
এরই মধ্যে বুধবার দুপুরে ফেসবুকে এক পোস্টে তামিম বলেছেন, ‘আজকে (বুধবার) বাংলাদেশ জাতীয় দল ভারতের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পর একটি ভিডিওবার্তার মাধ্যমে আমি সবাইকে বিগত কয়েক দিনের ঘটে যাওয়া ব্যাপারে কিছু কথা বলব। গত কয়েক দিন অনেক কথাই গণমাধ্যমগুলোতে এসেছে।’
তিনি লিখেছেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশ দলের এবং আমার ভক্ত-সমর্থক সবারই পরিষ্কারভাবে সব কিছু জানার অধিকার রাখে।’
(ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/ডিএম)