ভারতের সিকিমে কেন আকস্মিক বন্যা জানাল ইসরো
ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার দক্ষিণ লোনাক হ্রদে হঠাৎ পানি উপচে পড়ার স্যাটেলাইট ভিত্তিক একটি গবেষণা করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বন্যার আগের ও পরের ছবি প্রকাশ করেছে। বুধবার ইসরোর একটি বিবৃতিতে সেপ্টেম্বর ২৮ ও ০৪ অক্টোবরের মধ্যে এই দুটি স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করে।
ছবি দুটিতে দেখা গেছে বৃষ্টির কারনে নতুন করে প্রায় ১০৫ হেক্টর এলাকা লোনাক হ্রদে পানি উপচে পড়ায় প্রাবিত হয়ে গেছে। এই ঘটনাটি বন্যা হওয়ার পেছনে ভুমিকা রেখেছে বলে জানায় ইসরো। মহাকাশ সংস্থা বলেছে যে তারা স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহার করে আরও হ্রদ পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবে।
ভারী বর্ষণ ও ঢলে রাজ্যে এ পর্যন্ত অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০২ জন নিখোঁজ রয়েছে, যাদের মধ্যে কমপক্ষে ২২ জন সেনা সদস্য। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় আটকা পড়েছেন ৩ হাজারের বেশি পর্যটক।
তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সৃষ্ট বন্যায় এই রাজ্যের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। বেশকিছু সেতু, রাস্তা তলিয়ে নিয়ে গেছে, সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ফোনলাইন ও ইন্টারনেটের। গ্যাংটকের সাথে সারাদেশের যোগাযোগ এখন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
চীনের সীমান্তে অবস্থিত সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকের প্রায় ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মাইল) উত্তরে একটি উপত্যকায় বৃষ্টি হয়। উত্তর সিকিমের লোনাক হ্রদে বৃষ্টির ফলে সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীটি বন্যায় পরিণত হয়েছে। তিস্তা নদী সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ফলে রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার নদীতীরবর্তী এলাকায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সিকিমে আক্রান্ত ২২ হাজার ৩৪ জনের মধ্যে ২ হাজার ১১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। রাজ্য সরকার চারটি ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় ২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেছে। গ্যাংটক জেলার আটটি আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ১০২৫ জন আশ্রয় নিচ্ছেন।
সিকিমের বন্যা বাংলার চারটি জেলাকেও প্রভাবিত করেছে। এএনআই সংবাদ সংস্থার মতে, তিস্তা ব্যারাজ থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৮০০০ ঘনমিটারের বেশি পানি ছাড়ার ফলে কালিম্পং, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার প্লাবিত হয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বিভিন্ন সরকারী সংস্থা এবং বৈজ্ঞানিক অভিযানগুলি কমপক্ষে এক দশক ধরে উত্তর সিকিমের লোনাক হ্রদের একটি হিমবাহী হ্রদ পানিতে উপচে পড়ার দুর্বলতাকে সতর্ক করে আসছে।
২০১৯ সালে সিকিম স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (এসএসডিএমএ) দ্বারা সংকলিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ২০১৩ সালে হায়দ্রাবাদের ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টারের বিজ্ঞানীরা রিপোর্ট করেছেন যে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার ২৪৫ মিটার উচ্চতায় লোনাক হ্রদটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
এটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো যেমন বাঁধ এবং পাওয়ার হাউস ক্ষতিসহ নিম্ন অঞ্চলের জীবন ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক করেছিল।
বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের বিজ্ঞানী আশিম সাত্তার, যিনি হিমবাহ এবং হ্রদ নিয়ে গবেষণা করে জানান, যে ২০১৯ সালে হিমবাহের আয়তন ছিল ১২.৫ বর্গ কিলোমিটার। “গত ২৯ বছরে, হিমবাহের দৈর্ঘ্য ৬.৪ বর্গ কিমি থেকে কমে ৫.১ বর্গ কিমি হয়েছে। তখন সামগ্রিক হিমবাহটি ০.৯৬ বর্গ কিমি গলে গিয়েছে। হিমবাহের বরফ গলে যাওয়ায় হ্রদটি বছরের পর বছর ধরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে”।
সিকিমে ৪৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে প্রায় ১১টি বড় হিমবাহী হ্রদ রয়েছে।
রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লোনাক হ্রদ, যা ১৯৭৭ সালে মাত্র ০.১৭ বর্গ কিলোমিটার পরিমাপ করেছিল, ২০০২ সালে ০.৭৮ বর্গ কিলোমিটার এবং ২০১৯ সালে ১.৩৫ বর্গ কিলোমিটারে বেড়েছে”।
(ঢাকাটাইমস/ ০৫ অক্টোবর/ জেডএএ)