বাউল সম্রাট লালনের জন্ম আসলে কোথায়? ধর্মই বা কী ছিল জানুন

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১০:১১

লালন ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি, যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামে পরিচিত। তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক ফকির সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক ছিলেন। ছিলেন অসংখ্য গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক। তাকে বলা হয় বাউল গানের সম্রাট।

লালনকে বাউল গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবেও বিবেচনা করা হয় এবং তার গান উনিশ শতকে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। লালন ছিলেন একজন মানবতাবাদী সাধক। যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সব প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। অসাম্প্রদায়িক এই মনোভাব থেকেই তিনি তার গান রচনা করেছেন।

লালনের গান ও দর্শন যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষকে। তার গানগুলো যুগে যুগে বহু সংগীতশিল্পীর কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে। গান্ধীরও ২৫ বছর আগে, ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম তাকে ‘মহাত্মা’ উপাধি দেয়া হয়েছিল।

আজ সেই ফকির লালন শাহের জন্মদিন। যদিও এই বাউল সাধকের জন্ম বাংলাদেশের কোথায় হয়েছিল তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। লালন নিজে কখনো তা প্রকাশ করেননি। কিছু সূত্রে পাওয়া যায়, লালন ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশের) ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার হারিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

আবার কোনো কোনো লালন গবেষক মনে করেন, লালন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার চাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ভাড়ারা গ্রামে জন্মেছিলেন। এই মতের সঙ্গেও অনেকে দ্বিমত পোষণ করেন। বাংলা ১৩৪৮ সালের আষাঢ় মাসে প্রকাশিত মাসিক মোহম্মদী পত্রিকায় এক প্রবন্ধে লালনের জন্ম যশোর জেলার ফুলবাড়ি গ্রামে বলে উল্লেখ করা হয়।

এক সূত্র থেকে জানা যায়, লালনের পিতার নাম কাজী দরীবুল্লাহ্ দেওয়ান। পিতামহের নাম কাজী গোলাম কাদির ও মাতার নাম আমিনা খাতুন। কাজী তাদের বংশগত উপাধি। গবেষকদের ধারণা, লালন শাহের আরও দুই ভাই ছিলেন। আলম শাহ্ ও কলম শাহ্। আলম শাহ্ কলকাতায় শ্রমিকের কাজ করতেন।

আরেক তথ্য থেকে জানা যায়, লালনরা চার ভাই- আলম শাহ্, কলম শাহ্, চলম শাহ্ ও লালন শাহ্। চলম শাহ নামে ভাই ছিল না বলে মনে করা হলেও মলম শাহ্ নামে আরেক ভাই ছিলেন। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে আলম ও মলম মৃত্যুমুখে পতিত হন। লালন ফকির জীবিকার জন্য হরিশপুরের দক্ষিণ পাড়ার ইনু কাজীর বাড়ি আশ্রয় নেন।

হিতকরী পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ নিবন্ধে বলা হয়েছে, লালন তরুণ বয়সে একবার তীর্থভ্রমণে বের হয়ে পথিমধ্যে গুটিবসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। তখন তার সাথীরা তাকে মৃত ভেবে পরিত্যাগ করে যার যার গন্তব্যে চলে যায়। কালিগঙ্গা নদীতে ভেসে আসা মুমূর্ষু লালনকে উদ্ধার করেন মলম শাহ। মলম শাহ ও তার স্ত্রী মতিজান তাকে বাড়িতে নিয়ে সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন।

এরপর লালন মলম শাহের কাছে দীক্ষিত হন এবং কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়াতে স্ত্রী ও শিষ্যসহ বসবাস শুরু করেন। গুটিবসন্ত রোগে একটি চোখ হারান লালন। ছেউড়িয়াতে তিনি দার্শনিক গায়ক সিরাজ সাঁইয়ের সাক্ষাতে আসেন এবং তার দ্বারা প্রভাবিত হন। এছাড়া লালন সংসারী ছিলেন বলে জানা যায়। তার সামান্য কিছু জমি ও ঘরবাড়ি ছিল।

জন্মস্থানের মতো লালন শাহের ধর্ম নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। জীবদ্দশায় তিনি নিজের ধর্ম পরিচয় কারও কাছে প্রকাশ করেননি। তার ধর্মবিশ্বাস আজও একটি বিতর্কিত বিষয়। বাংলা ১৩৪৮ সালের আষাঢ় মাসে প্রকাশিত মাসিক মোহম্মদী পত্রিকায় এক প্রবন্ধে লালনের জন্ম মুসলিম পরিবারে বলে উল্লেখ করা হয়। আবার ভিন্ন তথ্যসূত্রে তার জন্ম হিন্দু পরিবারে বলে উল্লেখ করা হয়।

লালনের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘লালন ধার্মিক ছিলেন, কিন্তু কোনো বিশেষ ধর্মের রীতিনীতি পালনে আগ্রহী ছিলেন না। সব ধর্মের বন্ধন ছিন্ন করে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন জীবনে।’

লালনের অসাম্প্রদায়িকতা, লিঙ্গ বৈষম্যের বিরোধিতা ইত্যাদির কারণে তাকে জীবদ্দশায় ধর্মান্ধ বলা হতো। ঘৃণা, বঞ্চনা এবং আক্রমণের শিকার হতে হতো। এছাড়া তার ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী দর্শন এবং ঈশ্বর, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়ে তার উত্থাপিত নানা প্রশ্নের কারণে তাকে ‘নাস্তিক’ আখ্যাও দেওয়া হয়েছিল।

এছাড়াও লালনের জীবদ্দশায় তৎকালীন সমাজের দাবি ছিল, কুষ্টিয়ায় তিনি তার আখড়ায় সাধক সঙ্গিনী বা সেবাদাসী রূপে একটি প্রথা চালু করেছিলেন। যার ফলে হিন্দু মুসলমান নারী-পুরুষের বিবাহ বা বিবাহবহির্ভূত যৌনাচার সংঘটিত হতো। এছাড়াও আখড়ায় মাদকসেবনের জন্যও তিনি এবং তার শিষ্যরা ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন।

(ঢাকা টাইমস/১৭অক্টোবর/এজে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :