দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পরিবেশ
কাজে আসছে না ১৩ কোটি টাকার স্যানিটারি ল্যান্ডফিল
![](/assets/news_photos/2023/10/19/image-327723.jpg)
কাগজে-কলমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১ বছর পর শেষ হয় নির্মাণকাজ। প্রস্তুত হয়ে পড়ে থাকলেও কোনো কাজেই আসছে না আধুনিক ও পরিবেশসম্মত উপায়ে দৈনিক ২৩ টন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্যানিটারি ল্যান্ডফিল।
বর্তমানে পৌরসভার সকল বর্জ্য ও ময়লা-আর্বজনা ফেলা হচ্ছে পৌর এলাকার নয়াগোলায় পুলিশ লাইন্সের বিপরীতে খোলা জায়গায়। সেখান থেকে আবাসিক এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়াও নানা রকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, নির্মাণের তিন বছর পরও কাজে আসছে না প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্যানিটারি ল্যান্ডফিল। ঘনবসতি থাকা খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সকল গৃহস্থালি বর্জ্য ও ময়লা-আর্বজনা। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে পৌরবাসী। স্থানীয়দের হাজারো বাধা ও অভিযোগ সত্ত্বেও আবাসিক এলাকায় ফেলা হচ্ছে এসব বর্জ্য। এর ফলে নানা রকম রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।
নয়াগোলার বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি সরকারি প্রকল্প হয়েছে। এখানে খোলা জায়গায় আর ময়লা ফেলা হবে না। কিন্তু শুধু শুনেই আসছি এটা। পুরো পৌরসভার যতগুলো ময়লা আর্বজনা হয়, প্রতিদিন তা জমা করে এখানে আবাসিক এলাকায় এনে ফেলা হয়। বারবার পৌর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।
একই এলাকার রিকশাচালক আজিজুল হক বলেন, ময়লা ফেলার জায়গার আধা কিলোমিটার এলাকায় গন্ধ ছড়িয়ে থাকে। নাক ঢেকে যেতে হয়। যাত্রীদের খুব সমস্যায় পড়তে হয়। একটু বৃষ্টি হলেই গন্ধ তীব্র আকার ধারণ করে। এখানে বসবাস করাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। আমাদের দাবি, আবাসিক এলাকায় এমন ময়লা-আর্বজনা না ফেলে শহরের বাইরে ফেলা হোক। এতে পৌরবাসী স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে।
গৃহবধূ সায়েমা খাতুন বলেন, স্বাভাবিক সময়ে তো দুর্গন্ধ ছড়ায়। কিন্তু একটু বৃষ্টি হলেই তা চরমে পৌঁছায়। বাসার পাশে হওয়ার ছেলেমেয়েরা ঘনঘন নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এতে আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কায় পড়েছি। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই।
জেলা শহরের দ্বারিয়াপুর এলাকার বাসিন্দা আহমেদ আলী বলেন, স্যানিটারি ল্যান্ডফিলটি অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা আছে। কিন্তু এখানে কোনো কার্যক্রম নেই। তাহলে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন এমন ল্যান্ডফিল কেন করা হলো তা বোধগম্য নয়। কি দরকার ছিল কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করে এভাবে ফেলে রাখার।
স্যানিটারি ল্যান্ডফিল প্রস্তুত থাকলেও কাজে আসছে বলে স্বীকার করেন এর তত্ত্বাবধায়ক মো. ওয়াসিম।
তিনি জানান, প্রায় ২ বছর ধরে পুরোপুরি প্রস্তুত থাকলেও এখানে ময়লা-আর্বজনা ফেলা হয় না। আপাতত নয়াগোলায় খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে পৌরসভার সকল বর্জ্য। কবে নাগাদ এখানকার কার্যক্রম শুরু হবে তাও জানি না।
খোলা জায়গায় ময়লা-আর্বজনা ফেলায় পরিবেশ দূষণের কথা স্বীকার করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ মোহা. ইমরান হোসাইন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটের কারণে স্যানিটারি ল্যান্ডফিলটি পুরোপুরি চালু করা যায়নি। তবে বর্তমানে সেখানে পৌরসভার মধ্যে থাকা লোকজনের বর্জ্য ফেলার কাজ চলছে। তবে বিভিন্ন ময়লা আর্বজনা ফেলার কার্যক্রম করার আগে প্রয়োজন পৌরবাসীর জনসচেতনতা তৈরি। এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা। আশা করি খুব শিগগিরই পৌরসভার ল্যান্ডফিলটির কার্যক্রম শুরু হবে।
খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলায় ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা জানান বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম রাব্বানী।
তিনি বলেন, খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলার কারণে তার আশপাশে বসবাস করা মানুষেরা ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকবে। এছাড়াও বিভিন্ন রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে তীব্র। অন্যান্য বর্জ্যের পাশাপাশি সেখানে মেডিকেল বর্জ্য থাকলে তা আরও ভয়াবহ হতে পারে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. সালেহ উদ্দীন বলেন, আমাদের লোকবল ও বিভিন্ন সরঞ্জাম সংকট রয়েছে। পাশাপাশি পৌরবাসীর মাঝে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য বসতবাড়ি থেকেই আলাদা করে ডাস্টবিনে ফেলার বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। এই দুই কারণে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল চালু করতে পারছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। বর্জ্য আলাদা করে ফেলতে বাড়িতে বাড়িতে আধুনিক ডাস্টবিন প্রদান ও জনসচেতনতা তৈরিতে উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১২ হাজার আধুনিক ও বর্জ্য পৃথক রাখার ডাস্টবিন প্রদান করা হয়েছে পৌরবাসীর মাঝে।
প্রসঙ্গত, প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার জনসংখ্যার চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় দৈনিক ৫০ টন বর্জ্য তৈরি হয়। স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামো নির্মাণকাজে মোট ব্যয় হয়েছে ১২ কোটি ৯৫ লাখ ১৪ হাজার ২৩৫ টাকা। বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্পের আওতায় ল্যান্ডফিল নির্মাণকাজ শেষ হয়।
সংবাদটি শেয়ার করুন
বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ এর সর্বশেষ
![](/cache-images/news_photos/2024/07/27/resize-90x60x0image-360339.jpg)
সিংড়ায় বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আটক
![](/cache-images/news_photos/2024/07/27/resize-90x60x0image-360338.jpg)
বছর না ঘুরতেই নতুন সড়কে ডজন দুয়েক গর্ত
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360309.jpg)
সাগরে লঘুচাপ, উপকূলে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360303.jpg)
টাঙ্গাইলে বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360301.jpg)
রংপুরে ১২ মামলায় গ্রেপ্তার ১৫০
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360299.jpg)
কলাপাড়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি মুক্তা, সম্পাদক রাসেল
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360294.jpg)
এক সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৬ কোটি টাকা লোকসান
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360291.jpg)
তাড়াশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল শিক্ষকের
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360285.jpg)
বনভূমি দখল করে কারখানার সড়ক নির্মাণ
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360284.jpg)