মাগুরায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য বিএনপি পরিবার

মাগুরায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের একদিন আগে থেকেই। জেলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে অধিকাংশ নেতাকর্মী ঘরছাড়া। শুধু মামলার আসামিই নয়, মামলা নেই এমন নেতাকর্মীরাও বাড়িতে থাকতে সাহস পাচ্ছেন না। ফলে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পরিবার পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। এতে তাদের পরিবারের নারী সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার পাশাপাশি মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ অনুযায়ী রাজপথে থাকার কথা থাকলেও নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি তাদের মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঝটিকা মিছিল ও মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে কর্মসূচি পালন করতে দেখা যাচ্ছে। শহরের ইসলামপুর পাড়া দলীয় কার্যালয় এক সপ্তাহ ধরে তালাবদ্ধ ।
জেলা বিএনপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর ২০২৩ থেকে জেলায় হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মাগুরা জেলার বিভিন্ন থানায় পাঁচটি মামলা দিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় জ্ঞাত ও অজ্ঞাত মিলে বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মাগুরায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ পর্যন্ত দায়ের করা বেশির ভাগ রাজনৈতিক মামলাতেই অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। এটিই সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়। কারণ, অজ্ঞাতনামাদের আসামি করলে নেতাকর্মীদের মধ্যে যে কাউকে আটক করে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো যায়। পুরোনো মামলার পাশাপাশি নতুন মামলায় গ্রেপ্তারের ভয় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে নেতাকর্মীদের।
যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- অ্যাড. ওয়াশিকুর রহমান কল্লোল- সভাপতি, মাগুরা জেলা যুবদল, মো. আমিরুল ইসলাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি, মাগুরা জেলা যুবদল, কাজী সানাউল হক তন্ময়, জেলা যুবদল নেতা, মো. মোতালেব শিকদার, যুগ্ম আহ্বায়ক, শালিখা উপজেলা বিএনপি, মো. আখের বিশ্বাস, আহ্বায়ক, শালিখা উপজেলা শ্রমিক দল, মুন্সি মাহমুদুর রহমান তিতাস, সাংগঠনিক সম্পাদক-মাগুরা জেলা ছাত্র দল, মো. টিপু সুলতান-আহ্বায়ক, মাগুরা সরকারি কলেজ ছাত্র দল, মো. মিজানুর রহমান তানজেল-সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, মাগুরা পৌর যুবদল, মো. শফিকুল ইসলাম-যুগ্ম আহ্বায়ক,মাগুরা সরকারি কলেজ ছাত্র দল, মো. নাজমুল হোসেন-সাধারণ সম্পাদক, মাগুরা পৌর কৃষক দল।
২৮ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত মাগুরা জেলায় বিএনপির গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীর সংখ্যা মাগুরা সদর ১৭ জন, মহম্মদপুর ২৮ জন, শালিখা ১৬ জন, শ্রীপুর ১৫ জন মোট ৭৬ জন।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন বলেন, ‘কোনো কিছুই জানি না। অথচ নেতাকর্মী আটকের পর বিস্ফোরক ও মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দিচ্ছে পুলিশ। এখন গ্রেপ্তারের ভয়ে আমরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। গ্রেপ্তার আতঙ্কে হাজার হাজার নেতাকর্মী এখন ঘরছাড়া। তারপরও কর্মীরা মাঠে আছেন। নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি, হঠকারী কিছু না করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কলিমুল্লাহ বলেন, সুনির্দিষ্ট অপরাধের মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বিনা অপরাধে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় এ বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখার জন্য নির্দেষ দেয়া হয়েছে।
বিএনপির চলমান অবরোধ কর্মসূচি সফল হয়নি উল্লেখ করে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুন্ডু বলেন, বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিতে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাদের কয়েকজন নেতাকর্মী মিলে ভোরবেলায় ফাঁকা মাঠে ঝটিকা মিছিল করছেন। তাদের আন্দোলন প্রাতঃভ্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। তাদের আন্দোলনকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘শুধু বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন নয়, গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষ এই কর্মসূচি পালন করছে, যা ইতিমধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে। গুম, খুন, মামলা ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে গত ১৫ বছরে বিএনপির নেতা–কর্মীরা তাদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে। চলমান আন্দোলন–সংগ্রাম সফল হবে বলে আমরা শতভাগ বিশ্বাসী। ইনশাআল্লাহ, শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্যে দিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। সেই সরকারের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হব ।’
(ঢাকা টাইমস/০৬নভেম্বর/এআর)

মন্তব্য করুন