বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ মিলবে ২৬ সালের মধ্যে, কাজ শুরু জানুয়ারিতে
ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলার আমিনবাজারে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হচ্ছে আগামী জানুয়ারি মাসে। ২০২৬ সালের মধ্যে প্রকল্পটি থেকে শুরু হবে বিদুৎ উৎপাদন। প্রতিদিন ৪২.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এই প্ল্যান্ট থেকে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন ৩০ একর জায়গায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
ডিএনসিসি বলছে, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে। বর্জ্য রূপান্তরিত হবে সম্পদে। সেই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ে উঠবে।
মঙ্গলবার দুপুরে আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে চলমান ডিএনসিসি'র 'বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্লান্ট' পরিদর্শন করেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এসময় তিনি প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
মেয়র বলেন, 'চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পটির কাজ পাওয়া চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনকে আমরা ৩০ একর ভূমি প্রস্তুত করে হস্তান্তর করেছি। জানুয়ারি থেকে পুরোদমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। কোম্পানি জানিয়েছে ভূমি বুঝে পাওয়ার পর প্রকল্প সম্পন্ন করতে তাদের দুই বছর সময় লাগবে। ২০২৬ সালের মধ্যে প্রকল্পটি থেকে শুরু হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন। প্রতি ঘণ্টায় উৎপাদন হবে ৪২.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
মেয়র জানান, এজন্য চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনকে প্রতিদিন তিন হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য সরবরাহ করবে ডিএনসিসি। উৎপাদিত বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। আর সেই বিদ্যুৎ কিনে নেবে বিদ্যুৎ বিভাগ।
আতিকুল ইসলাম বলেন, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব, পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ে তোলা হবে হবে। এর ফলে বায়ু দূষণ রোধ হবে। বর্জ্য সম্পদে পরিণত হবে। স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণ করা অনেক চ্যালেঞ্জিং এবং সময় সাপেক্ষ একটি কাজ ছিল। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে কাজটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।'
মেয়র বলেন, চীন সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের সমন্বয়ে উত্তর সিটি করপোরেশন এই প্রকল্পে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। জায়গাটি ৩০ ফিট নিচু ছিল। এখানের ৩০ একর জমিকে ল্যান্ডফিল করতে ৩০ ফিট নিচু জায়গাকে ভরাট করতে হয়েছে। অনেক কাজ করতে হয়েছে তাই কিছুটা সময় লেগেছে।
সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে জানিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, 'ইতিমধ্যে সিএমইসি'র প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছে। তাদের কিছু যন্ত্রপাতি প্লান্টে চলে এসেছে আরও যন্ত্রপাতি দ্রুতই পৌঁছাবে। চীনা রাষ্ট্রদূত ও সিএমইসি'র কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন জানুয়ারির শুরু থেকে পুরোদমে প্লান্টের কার্যক্রম শুরু হবে। মোট চারটি টারবাইন স্থাপনের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ৪২.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত একটি টারবাইন চালু করার বিষয়ে।'
এসময় মেয়র জানান বিল্ডিং ভাঙা জিনিস ও মেডিকেল বর্জ্যকে কাজে লাগাবে ডিএনসিসি। বলেন, দেশে এত যে বিল্ডিং ভাঙা হচ্ছে, সেই সব বিল্ডিংয়ের বর্জ্যগুলোকে আমরা কাজে লাগাতে পারি না। আমরা বিল্ডিংয়ের ভাঙারিগুলো দিয়ে পাইপ বানাব। আমরা বিভিন্ন ধরনের কনস্ট্রাকশন ব্লক বানাব বিল্ডিংয়ের ভাঙারি দিয়ে। মেডিকেল ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো প্লান্ট আমাদের নেই। মেডিকেল ওয়েস্ট ও বিভিন্ন ধরনের ই-ওয়েস্ট আমরা সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাজে লাগাব।
পরিদর্শনকালে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফুল ইসলাম, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী, চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের প্রকৌশলীবৃন্দ এবং ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
(ঢাকাটাইমস/২৮নভেম্বর/এলএম/ইএস)