হরিরামপুরে অবৈধ ৩ ইটভাটা আবারও চালু

সায়েম খান, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ)
 | প্রকাশিত : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:১৫

ইট তৈরির মৌসুমের শুরুতেই মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার তিনটি অবৈধ ইটভাটা আবারও চালু করা হয়েছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন লঙ্ঘন করে কৃষিজমিতে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই।

ভাটা তিনটির মালিকেরা আইন লঙ্ঘন করে ফসলি জমি, লোকালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা এসব ভাটার কারণে আশপাশের ফসলি জমির ফলন কমে গেছে। মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হলেও অদৃশ্য কোনো কারণে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়না অবৈধ এসব ইটভাটা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হরিরামপুরে মোট তিনটি ইটভাটা রয়েছে। ভাটাগুলো হচ্ছে- মেসার্স আমিন ব্রিকস, সততা ব্রিকস ও স্বাধীন ব্রিকস। তিনটি ইটভাটার কোনোটারই প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্র নেই। ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল ইট প্রস্তুত মৌসুমের শেষে অভিযান চালিয়ে ভাটা তিনটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রশাসন।

এরপর গত মৌসুমে সততা ব্রিকস ও স্বাধীন ব্রিকস আবারও চালু করলেও বন্ধ ছিল আমিন ব্রিকস। মৌসুমের শেষের দিকে গত ২ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে সততা ও স্বাধীন ব্রিকসকে চার লাখ টাকা করে জরিমানা করে। তারপরেও কিছুদিন চালু ছিল ভাটা দুইটির কার্যক্রম। এবছর ইট তৈরির মৌসুম শুরু হওয়ায় প্রায় দেড় মাস ধরে আবারও পুরোদমে চালু হয়েছে ভাটা তিনটির কার্যক্রম।

সরেজমিনে তিনটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেছে, তিনটি ভাটাতেই ইট পোড়ানো হচ্ছে। মাটি প্রস্তুত, ইট তৈরি, শুকানো ও পোড়ানোর কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা।

কয়েকজন শ্রমিক জানান, প্রায় দেড় মাস ধরে চালু হয়েছে ভাটা তিনটি। সততা ও স্বাধীন ব্রিকসে ইট পোড়ানো চলছে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে। আর আমিন ব্রিকস ইট পোড়ানো শুরু করেছে গত বৃহস্পতিবার থেকে। নিষিদ্ধ হলেও ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। একটি ভাটাতে কয়েকজন শিশু শ্রমিককে কাজ করতেও দেখা যায়। ভাটার এক কিলোমিটারের মাঝেই রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি ও বসতবাড়ি।

খুলনা থেকে আমিন ব্রিকসে কাজ করতে আসা নাসির ও রমজান বলেন, আমরা প্রায় ১৫ দিন ধরে এই ভাটায় কাজ করতে এসেছি। গত বৃহস্পতিবার থেকে ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে।

ভেলাবাদ থেকে আসা আরেক শ্রমিক লুৎফর বলেন, ভাটায় মাটি আসে ফসলি জমি থেকে। বহলাতলী চকে মালিকের জমি কেনা আছে। ওখান থেকে নিজেরা কেটে মাটি আনছে।

স্বাধীন ব্রিকসের রিয়াদ ও জুবায়ের নামের দুই শিশু শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়। তারা জানান, বাবা-মার সঙ্গে তারাও এসেছেন ইট ভাটার কাজে। তারা ইট উল্টেপাল্টে রোদে শুকানোর কাজ করেন। কাজের জন্য প্রতি সপ্তাহে তাদেরকে দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়।

স্বাধীন ব্রিকসের ম্যানেজার বলেন, প্রায় এক মাস ধরে ভাটার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আর ইট পোড়ানো হচ্ছে ১৫ দিন ধরে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, তিনটি ইটভাটাই ফসলি জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। ভাটা স্থাপনের পর থেকে ভাটার ধোঁয়ার কারণে চারপাশের ফসলি জমির ফলন কমে গেছে।

জানতে চাইলে আমিন ব্রিকসের মালিক নুরুল আমিন বলেন, আমরা খুব দ্রুতই সব কাগজপত্র পেয়ে যাব।

স্বাধীন ব্রিকসের মালিকদের একজন আবুল হোসেন বলেন, আমাদের ভাটার অংশীদার কয়েকজন। প্রধান হচ্ছে শীতল চৌধুরী। তার সঙ্গে কথা বলেন।

এ বিষয়ে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ইউসুফ আলী বলেন, আমি মানিকগঞ্জে নতুন এসেছি। যদি অবৈধভাবে তারা ভাটা পরিচালনা করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৯ নভেম্বর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :