শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি: শীর্ষ সন্ত্রাসী আল আমিন প্রকাশ্যে ঘুরছে!
আল আমিন। কুমিল্লার শহরে তার পাপের সাম্রাজ্য এতটাই বিস্তৃত যে, শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার কাছে তিনি ‘ভয়ংকর কিলার’ হিসেবে একনামে পরিচিত। বৃদ্ধরা দোয়া পড়েন যেন তার সঙ্গে দেখা না হয়। আর তরুণরা আতঙ্কে থাকেন কখনো যেন তার চক্ষুশূল না হয়ে পড়েন।
দিনে-দুপুরে চাঁদা চেয়ে চিরকুট পাঠাত তার বাহিনী। সঙ্গে পাঠাত কাফনের কাপড়। অনেকেই নীরবে সেই চাঁদা দিয়ে দিত। দীর্ঘদিন স্বৈরাচারী সরকারের নেতাদের আশ্রয়ে শহরে ছিনতাই, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, ব্যাংক লুট ও ডাকাতি, দখল, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ক্ষিপ্ত হয়ে সাধারণ মানুষ।
সর্বশেষ গত ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কুমিল্লায় পিস্তল দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও এখনো প্রকাশ্যে চলছে কুমিল্লা নগরীতে আল আমিন বাহিনীর সন্ত্রাসীর রাজত্ব । গুঞ্জন ছিল মহানগর যুবলীগের ভালো পদের আশায় পিস্তল দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে আল-আমিন।
জেলা পুলিশের হিসাবে ২০ মামলার চিহ্নিত এই আসামির পুরো নাম আল-আমিন (২৭)। কুমিল্লার নগরীর সংরাইশ এলাকার মো. ইদু মিয়ার ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকা ও কিলার হওয়ায় পুলিশের বিশেষ শাখার তালিকায় তাকে ‘কিলার আল-আমিন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ভয়ংকর এই খুনির নামে পুলিশের কাছে রয়েছে চারটি হত্যা মামলার নথি। এ ছাড়া চাঁদাবাজি, অপহরণ, বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার, হত্যাচেষ্টা, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের ওপর গুলিসহ ১২টি মামলা হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর নগরীর সংরাইশ এলাকায় এক তরুণীকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে চার দিন আটকে রেখে ধর্ষণের পর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়। এ নিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) পড়ে আছে দেশের বিভিন্ন থানায়। সর্বশেষ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কুমিল্লায় ৩ আগস্ট তার বাহিনী গুলি করে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বাদী হয়ে সদর দক্ষিণ ও কোতোয়ালি মডেল থানায় পৃথক একাধিক মামলা করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংরাইশ, শুভপুর, বজ্রপুর, সুজানগর, পাথুরি পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা বলেন, এলাকাতে নতুন বাড়ি করতে গেলে আল-আমিন বাহিনীকে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না পেলে প্রকাশ্যে বাড়ির কাজ বন্ধ করে দেয়। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে কোনো সুফল মিলে না। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা আছে অথচ সে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়, এটা কীভাবে সম্ভব? কুমিল্লা শহরের সব মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকারী আল-আমিন, তার হাত অনেক উপরে। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে জীবনে নেমে আসে অভিশাপ।
দ্বীন ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ছাতিপট্টি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করার সুবাদে আল আমিনের বাহিনীকে বাৎসরিক ১ লক্ষ চাঁদা দিতাম, গত পাঁচ আগস্টের পর টাকা দিতে আপত্তি জানালে আমাকে ও আমার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমি আমার পরিবারকে নিয়ে পালিয়ে ঢাকা শহরে বসবাস করছি। প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ করিও কোন লাভ হচ্ছে না।’
মামলার একাধিক বাদী অভিযোগ করে বলেন, আল-আমিনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেও কী কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না বুঝতে পারছেন না তারা। উল্টো মামলার বাদী হওয়ার কারণে তাদের জীবনে এখন হুমকির মুখে। আলামিন এখন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দিচ্ছে।
কুমিল্লারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, ‘আমরা ছাত্র সমন্বয়কের পক্ষে সন্ত্রাসী আল আমিনের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দিয়েছি। শিক্ষার্থীর ওপর আল-আমিনের নেতৃত্বে গুলি বর্ষণ হয়েছে, অথচ আল আমিন এখন কুমিল্লা শহরে ঘুরছে। এ নিয়ে প্রশাসনের কোনো ভূমিকা দেখছি না।’
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে, তার (আল-আমিন) বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশ সুপার আসফিকুজ্জামান আকতার বলেন, সারা দেশের মতো কুমিল্লাতেও যৌথ অভিযান চলছে। সর্বশেষ ছয়জন আটক করা হয়েছে বিভিন্ন স্থান থেকে। আল আমিনসহ চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
(ঢাকাটাইমস/৫অক্টোবর/মোআ)