ডিবি পরিচয়ে বাড়ছে অপরাধ

পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) পরিচয়ে রাজধানীতে অপরাধ বেড়েই চলেছে। চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মতো ঘটনায় এই সংস্থাটির পরিচয় ব্যবহার করছে অপরাধীরা। এসব অপরাধীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে হ্যান্ডকাপ, ডিবির জ্যাকেট ও ভুয়া আইডি কার্ড। এছাড়া, জব্দ করা হচ্ছে হাইস বা নোহা ব্র্যান্ডের গাড়িও।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, বিভিন্ন রেন্ট এ কার থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে ডিবি পরিচয়দানকারী অপরাধীরা টার্গেটকৃতবিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে থাকে। এসময় তারা ডিবি পুলিশের মতোই পোশাক ও খেলনার অস্ত্রসাজে সজ্জিত হন। এসময় তাদের সঙ্গে হ্যান্ডকাপও থাকে।চলতি মাসে এই ভুয়া ডিবি চক্রের কয়েকটি সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় এনেছে পুলিশ।
ঢাকা টাইমসের অনুসন্ধানে জানা গেছে,ডিবি পরিচয়ে ছিনতাই ডাকাতি করার জন্য পুলিশের অপারেশনাল টিমের মতো করেই ইন্সপেক্টর, এসআই, এএসআই, কনস্টেবল ও ড্রাইভার মিলে ৫জনের একটি টিম সাজান তারা। তাদের কথাবার্তায় বোঝার উপায় নেই যে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নন। মাঝে-মধ্যে গ্রুপে একজন করে ভুয়া সহকারী পুলিশ কমিশনারও রাখা হয়। ডিবির মতো করেইসিনিয়রদের স্যার বলে সম্বোধন করেন তারা।
বিভিন্ন সময় প্রশাসনের অভিযানে ভুয়া ডিবি সদস্যরা গ্রেপ্তার হলেও জেল থেকে বের হয়ে আবার সেই অপকর্ম যোগ দেন।
জানা যায়, কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা কুয়েতপ্রবাসী রবিউল ১২ নভেম্বর ব্যাংক থেকে ৬লাখ টাকা উত্তোলন করে রিকশাযোগে বাড়ি ফিরছিলেন।বিকাল সাড়ে ৩টায় দক্ষিন কেরানীগঞ্জের মালিভিটা এলাকায় পৌছানো মাত্রইএকটি গাড়ি থেকেডিবি পরিচয়ে ৪-৫ জন তার রিকশার গতিরোধ করেতাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে চোখ ও হাত পা বেঁধে মারধর করে টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার সমাসপুর এলাকায় ফেলে রেখে যায়।
এঘটনায় সিসি টিভির ফুটেজ দেখেপুলিশ জানতে পারে ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা পুলিশের কোনো সদস্য নন। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ ৩ ডিসেম্বর রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ ভুয়া ডিবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রিয়াজ (৩৭), মনির (৪৭), ড্রাইভার সোহেল রানা (৩৮), সুমন শেখ (৪২) ও নেছার (৩২)।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে জানান, গ্রেপ্তারকৃত ৫জনই নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিত। তাদের মূল টার্গেট থাকতো ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারীরা। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতি মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা স্বর্ণ ব্যবসায়ি তপন কুমার সাহাঢাকারতাঁতী বাজার এলাকা থেকে সম্প্রতি ৪০ ভরি স্বর্ণ ও তিন লাখ ৪৬ হাজার টাকা নিয়ে সিএনজিতে করে ঢাকা-মাওয়া রোডে পোস্তগোলা ব্রিজের পূর্ব পাশের ঢালে পৌঁছলেতাকে ঘিরে ধরা হয়। একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস তপনের সিএনজির গতিরোধ করে। এরপর নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে সিএনজি থেকে তপনকে টেনে হিঁচড়ে মাইক্রোতে উঠিয়ে নিয়ে হাত-পা ও চোখ বাঁধার চেষ্টা করে। তিনি চিৎকার করলে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরে তপনের সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার ও টাকা ভর্তি ব্যাগ এবং দুটি মোবাইলফোন কেড়ে নেয় তারা।
কিছুদূর যেতেই ট্রাফিক পুলিশ গাড়ির কাগজ দেখতে চাইলে ঘটনাস্থলে দৌড়ে হাজির হন তপন। অপহৃত ব্যক্তি তপন কুমার বিষয়টি ট্রাফিক পুলিশকে জানালেঘটনাস্থলে শ্যামপুর থানার পুলিশ এসে ভুয়া ডিবি পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তার করে এবং তাদের কাছ থেকে লুটের মালামাল উদ্ধার করে।
ওই ঘটনায় আটককৃতরা হলেন- মো. আলম (৬২), মো. আলমগীর হোসেন (৩৯), মো. পলাশ শেখ (৩৫), মো. সাব্বির হোসেন (৩৪)। তাদের মধ্যে মো. আলম বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্য ও মো. আলমগীর হোসেন সেনাবাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দেন।
ডিএমপির সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারী থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ৬০ জনের বেশি ভুয়া ডিবি চক্রের সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ভুয়া ডিবি চক্রে কিছু সাবেক পুলিশ অফিসারও রয়েছে।
জানা গেছে,পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের কিছু সোর্স ভুয়া ডিবি চক্রের সঙ্গে জড়িত। এসব সোর্সরা পুলিশ ও ডিবির নামে বিভিন্ন জায়গা থেকে মাসিক ও সাপ্তাহিক চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে।
পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত সহকারি পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি)এনামুল হক সাগর জানান, ভুয়া ডিবি চক্রের সদস্যদের পুলিশ গ্রেপ্তার করছে। অপহরণ ও ডাকাতির সময় তারা বিভিন্ন সময় পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা ডিবির নাম ব্যবহার করে থাকে। সাধারণ মানুষ পুলিশের পোশাক দেখে সহজেই চিনতে পারে।কিন্তু ডিবি পরিচয়ে অপরাধ করা ব্যক্তিরাতাদের অপারেশনাল কাজ করে দ্রুত পালিয়ে যেতে পারবে সেই ধারণা থেকে ডিবির ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে থাকে। তবে, এসব অপরাধীরা কিন্তু পার পেয়ে যেতে পারে না।
পুলিশের হ্যান্ডক্যাপ ও ডিবির জ্যাকেট তারা কিভাবে সংগ্রহ করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এ ধরনের সরঞ্জামাদি বিক্রি নিষিদ্ধ। অপরাধীরা অবৈধ উপায়ে এসব সংগ্রহ করে থাকে।
(ঢাকাটাইমস/০৫ডিসেম্বর/বিবি)

মন্তব্য করুন