আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন দিবস

সেবার মানে বাংলাদেশ বিমানের কতটা উন্নতি?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১৬ | প্রকাশিত : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০৭

আজ ৭ ডিসেম্বর- আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন দিবস। ১৯৪৪ সালের এই দিনে জাতিসংঘের অধীনে আমেরিকার শিকাগো শহরে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৩টি দেশ এই চুক্তিতে সাক্ষর করেছ। ‘শিকাগো কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন’- যা সংক্ষেপে শিকাগো কনভেনশন নামে পরিচিত। পরে ১৯৪৭ সালের এপ্রিলে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৭ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। একই সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (ICAO)-আইকাও।

বিশ্বব্যাপী বেসামরিক বিমান চলাচলকে সুবিন্যস্ত, সম্প্রসারণ ও নিরাপদ করা এবং বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, বিমানের নকশা অনুমোদন, বিমানবন্দর ও বিমান চলাচলের বিকাশ ঘটাতে উৎসাহ দেওয়ার কাজ করে থাকে আইকাও। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর আইকাও সিভিল অ্যাভিয়েশন দিবসের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে থাকে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ‘বৈশ্বিক অ্যাভিয়েশন উন্নয়নে দরকার অগ্রসরমান উদ্ভাবন’শীর্ষক প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়।

আইকাও-এর সহযোগিতায় বাংলাদেশেও এভিয়েশন খাতের বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতামূলক কার্য‌্ক্রম চলমান রয়েছে। যাত্রীসেবার মান উন্নয়নে রয়েছে প্রশিক্ষণ কর্মশালা।

সম্প্রতি ঢাকায় আইকাও-এর সহযোগিতা ও ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও বোয়িং কোম্পানির আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় সিভিল অ্যাভিয়েশন একাডেমির আয়োজনে তিন সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা শেষ হয়েছে। গত ২৪ নভেম্বর কর্মাশালায় অংশগ্রহণকারীদের সনদ বিতরণ করা হয়। এতে আইকাও-এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় বিহেভিয়ার ডিটেকশন শীর্ষক ৫ দিনব্যাপী অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি কোর্সও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

বাংলাদেশের বিমান সেবায় নিয়ে সবচেয়ে বেশি যে অভিযোগ আসে সেটি হলো, বিমানবন্দরে যাত্রীদের অহেতুক হয়রানি, অব্যবস্থাপনা, প্রবাসীদের লাগেজ চুরি ও অপেশাদার আচরণ।

এছাড়া, এই খাতের দুর্নীতি, অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা তো রয়েছেই। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর পার করলেও নতুন কোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পুরনোগুলোকেও সংস্কার করা হয়নি। কোথাও কোথাও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর নির্মাণ শুরু হলেও কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। বর্তমানে দেশে ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চলমান কাজ শেষে উদ্বোধন হলে এটি হবে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

২০০৯ সালে মিয়ানমার বাংলাদেশের সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটায়। ওই সময় দ্রুত বিমানবন্দরটি আধুনিকায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার, যাতে প্রয়োজনের সময় জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধবিমান অবতরণ করা যায়। এছাড়া ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার।

গত ৭ অক্টোবর ঢাকায় উদ্বোধন করা হয় ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল। বিমান পরিসেবায় উন্নত যাত্রী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে নির্মিত টার্মিনালটি এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি।

দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনালে এখন প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার যাত্রী সেবা পাচ্ছেন। সেই হিসাবে বিমানবন্দরটি বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ- বেবিচকের তথ্যানুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে বছরে অতিরিক্ত ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

বেবিচক বলছে, বিশ্বমানের এই টার্মিনালে ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি রাখার সক্ষমতাসহ বহুতল গাড়ি পার্কিং তৈরি করা হচ্ছে। এই টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। এছাড়া, তৃতীয় টার্মিনালে ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে এবং অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট থাকবে। একটি করিডরের মাধ্যমে পুরোনো দুটি টার্মিনালের সঙ্গে নতুন টার্মিনালকে যুক্ত করা হবে।

ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছতে যানজটের ভয়ে হাতে লম্বা সময় নিয়ে রওনা দিতে হয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, তৃতীয় টার্মিনালে যেতে সেই ভোগান্তি আর পোহাতে হবে না। যানজট এড়ানোরও নানা অবকাঠামো তৈরি হয়েছে।

মালয়েশিয়া মাহশা ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিপি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বশির ইবনে জাফর বলেন, বিমানপরিবহন সেবায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত অক্টোবরে দেশে এসেছিলাম। ইমিগ্রেশনে আগে অনেক সময় ব্যয় হতো। এবার ৩০-৪০ মিনিটের মতো সময় লেগেছে। মালয়েশিয়ায় একই কাজ সম্পন্ন করতে আমার সময় লেগেছে ৭০-৮০ সেকেন্ড। কিছুটা উন্নতির পরও ব্যবধান আকাশ-পাতাল। এগুলো মূলত অপেশাদার আচরণ ও তোষামদি ব্যবস্থাপনার কারণে।

বশির বলেন, বাইরের দেশে পড়াশোনার সুবাদে প্রতি বছরই আমাকে একাধিকবার বাংলাদেশের বিমানবন্দর পার হওয়ার অভিজ্ঞতা নিতে হয়। অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে আমি বলবো আমাদের দেশের বিমানবন্দরে সার্বিক সেবার মান অত্যন্ত বাজে। বিশেষ করে ইমিগ্রেশন পুলিশ অফিসারদের রূঢ় আচরণ খুবই বাজে অভিজ্ঞতা দিয়েছে একাধিকবার আমাকে। কখনোই এদেরকে আন্তরিক ও সহযোগিতা করার মনোভাবাপন্ন মনে হয়নি।

এর বাইরে অন্যান্য সেবা বিশেষ করে ট্রলি, ল্যাগেজ ও বডির নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ পরিচ্ছন্নতার ব্যাপক অব্যস্থাপনা সবসময়ই মোকাবিলা করতে হয়- যা অন্য কোনো দেশে হয় না। আমার পরামর্শ হচ্ছে, প্রথমত ইমিগ্রেশন অফিসারদের আরো দায়িত্বশীলতার শিক্ষা দিতে হবে। বিশেষ করে সেবাদানে সহযোগী মনোভাব নিয়ে আসার ব্যপারটা। দ্বিতীয়ত সার্বিকভাবে পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক সেবাদানের লক্ষ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিমানবন্দর পরিচালনার ব্যবস্থাগুলো থেকে ধারণা নেয়া এবং সে অনুয়ায়ী কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিমান পরিবহন সেবায় আমাদের ব্যবস্থাপনা ত্রুটি এবং কর্মীদের আচরণগত সমস্যা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে, সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমরা জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। বর্তমান সরকার ও বেবিচক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আন্তরিক। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে উন্নতকরণ এরই অংশ। থার্ড টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে যাত্রীসেবার আমূল পরিবর্তন হবে। এছাড়া কর্মীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ এবং যাত্রীদের সেবামূলক ইমিগ্রেশনের লক্ষ্যে আমরা ধারবাহিকভাবে কাজ করছি। সম্প্রতি ঢাকায় ২৮৭ প্রশিক্ষণার্থীকে সনদ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন কোর্সের মধ্যে প্রশিক্ষণার্থীদের বিহেভিয়ার ডিটেকশন, অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি, ক্যাপাসিটি বিল্ডআপের ওপরও কোর্স করানো হয়েছে।

আশা করি ধারাবাহিক কর্মসূচির আওতায় যাত্রীসেবার মান উন্নত হবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের হয়রানি কমে স্বস্তি ফিরে আসবে।

(ঢাকাটাইমস/০৭ডিসেম্বর/এসআইএস/বিবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :