বিদেশি ক্রেতার শর্ত মানে নিশ্চিত নিষেধাজ্ঞা আসছে এমন কিছু নয়: বিজিএমইএ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১:৫০ | প্রকাশিত : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১:১৬

বাংলাদেশি তৈরি পোশাক ক্রেতা বিদেশি এক প্রতিষ্ঠানের নতুন যুক্ত করা এক শর্তে পোশাক রপ্তানি খাতে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা দিয়েছেন পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান।

তিনি বলেছেন, ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ঋণপত্রের ধারা নিয়ে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। এটা কোনো অফিসিয়াল বার্তা নয়। ক্রেতাদের শর্ত মানে নিশ্চিত নিষেধাজ্ঞা আসছে এমন কিছু নয়। বিজিএমইএ কিংবা ওই ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কোনো সরকারি দপ্তর বা কূটনৈতিক মিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়।

গণমাধ্যমে পাঠানো ‘বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটি এলসি (ঋণপত্র) ধারার বিষয়ে স্পষ্টীকরণ’ শীর্ষক এক ব্যাখ্যায় তিনি একথা বলেন।

গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে বিজিএমইএ’র আঞ্চলিক সদস্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেছিলেন, ‘বর্তমানে পোশাক শিল্প এক চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, প্রতিনিয়ত তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ভূত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এই শিল্প।’

বিদেশি এক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান তাদের নতুন এক শর্তে, ‘বাংলাদেশ নিষেধাজ্ঞায় পড়লে অর্ডারকৃত পণ্য নেবে না, কিংবা রপ্তানির জন্য পণ্য জাহাজিকরণ হলেও অর্থ দেবে না’ এমন ঘোষণার কথা উল্লেখ করে তিনি এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের খোলা ঋণপত্রে সাধারণত কিছু শর্ত উল্লেখ থাকে। তবে এবারই প্রথম ঋণপত্রে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি এ ধরনের শর্ত দিয়েছে।

গণমাধ্যমে এই বক্তব্য প্রচারের পর এ নিয়ে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের মনে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে যে, শিগগির এই খাতে বিদেশি নিষেধাজ্ঞা আসছে। এটা তারই ইঙ্গিত বলে অনেকে মনে করছেন।

জনমনে ছড়িয়ে পড়া বিভ্রান্তি নিরসনে এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন পোশাকখাতের প্রতিনিধিত্বকারী এ সংগঠনের র্শীষ নেতা ফারুক হাসান।

বিদেশি একটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের নতুন শর্ত বা ধারার বিষয়ে তিনি বলেছেন, ধারাটির ব্যাখ্যায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে— মর্মে যে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, তা সঠিক নয়।

ফারুক হাসান বলেন, ঋণপত্রটি একটি নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছ থেকে এসেছে। এটি কোনো দেশের দ্বারা সংবিধিবদ্ধ আদেশ বা বিজ্ঞপ্তি নয়। সুতরাং এটিকে বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্য ব্যবস্থা প্রয়োগ বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের বার্তা হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করা উচিত হবে না।

ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘বিজিএমইএ এক সদস্যকে বিদেশি ক্রেতার পাঠানো একটি লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) বা ঋণপত্রের অনুলিপি আমাদের নজরে এসেছে। ঋণপত্রে তারা বলেছে, ‘আমরা জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, যুক্তরাজ্য কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা আরোপিত কোনো দেশ, অঞ্চল বা দলের সঙ্গে লেনদেন প্রক্রিয়া করব না। নিষেধাজ্ঞার কারণগুলোর জন্য আমরা কোনো বিলম্ব, নন-পারফরমেন্স বা তথ্য প্রকাশের জন্য দায়ী নই’।

ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের এই শর্তের ব্যাখ্যায় ফারুক হাসান আরও বলেন, স্বতন্ত্র ক্রেতা বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ নীতি ও প্রটোকল থাকতে পারে, তবে একটি ঋণপত্রের কপি বা একটি ব্যক্তিগত বাণিজ্যিক ইনস্ট্রুমেন্ট, দাপ্তরিক কোনো ঘোষণা নয়। এ ছাড়া বিজিএমইএ দেশের কোনো কূটনৈতিক মিশন বা আনুষ্ঠানিক উৎস থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা বা বাণিজ্যব্যবস্থা আরোপের তথ্য পায়নি এবং এ সংক্রান্ত কোনো ঘোষণাও কেউ দেয়নি।

বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, আমরা অতীতেও একই ধরনের উদাহরণ দেখেছি। এক ক্রেতার কাছ থেকে আসা একটি ঋণপত্রের ধারা উদ্ধৃত করে এটিকে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা হিসেবে সাধারণীকরণ করা হয়েছে এবং আমরা এ ধরনের ভুল তথ্য উপস্থাপনের বিরুদ্ধে সব সময়ই আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি।

ফারুক হাসান আরও বলেন, বাণিজ্যিক কাগজপত্র ও উপকরণে এ ধরনের ধারা অন্তর্ভুক্ত করাকে বিজিএমইএ সমর্থন করে না, যদি এটি শুধু বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।

সদস্যদের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেসব সদস্যপ্র তিষ্ঠান উল্লিখিত ধারাসহ ঋণপত্র পাবেন, তারা সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ড বা ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ ধারা স্পষ্ট করতে বলবেন। যদি ধারাটি কেবল বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের দেওয়া ঋণপত্রে থাকে, তাহলে তা নৈতিকতার লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে। সেরকম হলে সদস্য-কারখানাগুলোকে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে নিতে হবে।

প্রয়োজনে এ ধরনের ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা বা পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানান বিজিএমইএর সভাপতি।

এছাড়া শ্রম অধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা স্পষ্ট করেছেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেছেন, শ্রমিকদের অধিকার এবং কল্যাণকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। বাংলাদেশ সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে একটি শ্রম রোডম্যাপ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৩ সালের শ্রম আইনের সংশোধনসহ এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রম বিধিগুলো ২০১৫ সালে জারি করা হয়েছিল এবং ২০২২ সালে সংশোধন করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ সালে পাস করা হয় এবং ২০২২ সালে ইপিজেড শ্রম বিধি জারি করা হয়।

ফারুক হাসান আরও বলেন, ২০১৩ সালে মর্মান্তিক ভবন ধসের দুর্ঘটনার পর, শিল্পটি জাতীয় উদ্যোগের নেতৃত্বে একটি বড় নিরাপত্তা সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে এবং ক্রেতাদের চালিত প্রোগ্রাম, অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ, অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি দ্বারা উল্লেখযোগ্যভাবে সংস্কার হয়েছে। নিরাপত্তা সংস্কার পরিকল্পনা সম্পূর্ণ করতে একটি কারখানা গড়ে প্রায় পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে, যা কারখানাটি রিট্রোফিট অথবা স্থানান্তর করার তুলনায় ৪-৬ গুণ বেশি ছিলো।

শ্রমিকদের আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে ২০১০ সাল থেকে ন্যূনতম মজুরি ছয় গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ্য করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বর্তমানে মজুরির ৫% হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট এবং ২টি উৎসব ভাতা (প্রতিটি এক মাসের মূল মজুরির সমতুল্য) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে; শ্রমিকদের চিকিৎসা ছুটি এখন অর্ধেক মজুরির পরিবর্তে ১৪ দিনের জন্য পূর্ণ মজুরিতে দেওয়া হচ্ছে; বার্ষিক ছুটির বিধান সংশোধন করা হয়েছে। এটি প্রতি ১৮ দিনের কাজের জন্য এক দিন করা হয়েছে, যা আগে প্রতি ২২ দিনের জন্য এক দিন করা ছিলো; শ্রমিকরা আইন অনুসারে তাদের মোট বার্ষিক ছুটির ৫০% নগদায়ন করতে পারে, যা আগে আইনে ছিল না।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র গত ১৬ নভেম্বর বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার সুরক্ষায় নতুন নীতি ঘোষণা করে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ নীতি প্রকাশকালে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, যারা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবে, শ্রমিকদের হুমকি দেবে, ভয় দেখাবে, তাদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির বিষয়ে গত ২০ নভেম্বর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে ‘শঙ্কা’ প্রকাশ করে বাণিজ্যসচিবকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, শ্রম অধিকারবিষয়ক নতুন এ নীতির লক্ষ্যবস্তু বাংলাদেশ হতে পারে; শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে এই নীতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রের ওপর আরোপের সুযোগ রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৭ডিসেম্বর/এসআইএস/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :