নতুন বছর ২০২৪: মামলা-সাজা সামাল দিয়ে আন্দোলন জোরদারের চ্যালেঞ্জে বিএনপি

‘একতরফা’ নির্বাচন প্রক্রিয়া ঠেকাতে না পারলেও আন্দোলন থেকে পিছু হটবে না বিএনপি। নতুন বছরে ভোটাধিকার ফেরাতে রাজপথে সরব থাকবে দলটি। পাশাপাশি মামলা-সাজাসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির নেতাকর্মীদের।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় বিএনপির রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে নেতাকর্মীদের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার সময় আরও বেড়ে গেল। যদিও সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সক্রিয় থাকা বিএনপি এবার দাবি পূরণ নিয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিল। তার বড় কারণ ছিল নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের তৎপরতা। বিশেষ করে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী অনেক দেশ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে তৎপর হওয়ায় আশায় বুক বেঁধে ছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। আপাতত আশাতেই ভরসা বিএনপির।
২০২৪ সালে বিএনপির প্রত্যাশা কি? জানতে চাইলে দলটির নেতারা ঢাকা টাইমসকে বলেন, এ বছরটি হবে গণতন্ত্রকে মুক্ত এবং জনগণের স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার বছর। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামে অনেক ত্যাগ শিকার করতে হবে। এই শপথ নিয়েই এগুচ্ছে বিএনপি।
বিএনপি নেতারা জানান, গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে জনগণ ও সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে রাজপথে নেতৃত্বে দেবে বিএনপি। তারা প্রত্যাশা করছেন- ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে হটিয়ে জনগণের ভোটের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
২০২৩ সালে সারা বছর রাজপথে সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হয় বিএনপি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের ১০ তারিখ বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজপথ উত্তপ্ত হলেও পরে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পন্ড হওয়ার পর রাজপথে প্রকাশ্যে দাঁড়াতে পারেনি নেতাকর্মীরা। তবে, নতুন বছরে প্রত্যাশা পূরণের কথা জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
এছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার ও সাজা আতঙ্কে কাটিয়েছেন পুরো বছরজুড়ে। ২০২৪ সালে আইনী মোকাবিলা করতে হবে মামলা দায়েরগ্রস্ত নেতাকর্মীদের। সবমিলিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে দলটিকে। এমনটিই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, বিএনপিকে আরও অত্যাচার ও অবিচার সহ্য করতে হবে। ইতোমধ্যে বলা হয়েছে তাদের (বিএনপি) রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। শুধু বিএনপিই নয়, তাদের সহযোগিদেরকেও অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হবে।
১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি সরকারকে মোকাবিলা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে একাধিকবার। মামলায় জর্জরিত বিএনপির সিংহভাগ নেতাকর্মী। এ অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি আন্দোলনে সফলতা আনতে না পারে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে নেতাকর্মীদের রাজপথে সক্রিয় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে আশঙ্কা করছেন দলটির সিনিয়র নেতারা।
নতুন বছরে বিএনপির প্রত্যাশা কি? জানতে চাইলে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকা টাইমসকে বলেন, বিএনপির প্রত্যাশা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ নির্বাচন। মানুষ যাতে গণতন্ত্র ফিরে পায়, মুক্ত নিঃশ্বাস নিতে পারে, কথা বলতে পারে এবং রাজনৈতিক সহাবস্থান ও জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, কালো মেঘমুক্ত সূর্য উদিত হবে এটিই নতুন বছরে বিএনপির প্রত্যাশা।
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ২০২৪ সাল হবে দেশের ইতিহাসে গণতন্ত্র সংহত করার বছর। এতে গণতন্ত্রকামী জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত করে নেতৃত্ব দিবে বিএনপি।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, শুধু ২৪ সাল নয় ২০১৪ থেকে প্রত্যাশা করছি এদেশে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার জনগণ ফিরে পাবে। একদলীয় শাসন ও স্বৈরাচারমুক্ত হবে দেশ। রেজিমের দুঃশাসনের কবল থেকে রক্ষা পাবে বাংলাদেশ। এ বছর জনগণ তাদের কাক্সিক্ষত বিজয় ছিনিয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ।
নতুন বছরে বিএনপির প্রত্যাশা নিয়ে দলটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, নতুন বছর ২০২৪ সালেই ‘স্বৈরাচার’এর পতন হবে। পৃথিবীর ইতিহাসে আছে কোনো স্বৈরাচার চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। কোনো স্বৈরাচার যারা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে না সেই দল ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। জনগণের বিজয় নিশ্চিত, স্বৈরাচার ক্ষমতায় থাকবে না।
(ঢাকাটাইমস/০১জানুয়ারি/জেবি/বিবি)

মন্তব্য করুন