যশোরের ৬টি আসন: একটিতে স্বস্তি, চ্যালেঞ্জের মুখে বাকিরা

যশোরে সংসদীয় আসন রয়েছে ছয়টি। এসব আসনের মধ্যে যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর-বসুন্দিয়া) আসন নৌকা মার্কার প্রার্থী এনামুল হক বাবুল স্বস্তিতে রয়েছেন।
যশোর-১ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিন। তিনি এই আসনের টানা তিনবারের এমপি। এর আগে মাত্র একবারই তাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল। নিজের প্রথম নির্বাচনে তিনি মাত্র পাঁচ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। পরের দুই নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেছেন সুস্পষ্ট ব্যবধানে। কিন্তু এবার তাকে চ্যালেঞ্জে ফেলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। তিনি এবার ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
এর আগের নির্বাচনগুলোতে আফিল উদ্দিন প্রায় ফাকা মাঠে গোল দিলেও এবার তার পথের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আশরাফুল আলম লিটন। অবশ্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় অংশ শেখ আফিল উদ্দিনের পক্ষে থেকে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। লিটনের সঙ্গে যারা আছেন তারাও চষে বেড়াচ্ছেন মাঠঘাট।
যশোর-২ আসনটিতে সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের পর অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম এছাড়া স্থানীয়ভাবে আর কোনো নেতা আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন লাভ করেননি। এই আসন থেকে গত নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন লাভ করে এমপি নির্বাচিত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ডাক্তার নাসির উদ্দিন। এবার মনোনয়ন লাভ করেছেন আর একজন ডাক্তার মো. তৌহিদুজ্জামান তুহিন। এই দুজনেরই জন্ম সংসদীয় আসনের ঝিকরগাছায়।
কিন্তু তাদের বর্তমান বাস ঢাকায়। কেউই এলাকায় থাকেন না দীর্ঘ বছর। সে কারণে এলাকার মানুষ বিশেষ করে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা হতাশা সবসময়ই রয়ে গেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে আবির্ভূত হন চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমান এবং যশোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম। এসএম হাবিবুর রহমান শেষ পর্যন্ত আর নির্বাচনের ময়দানে প্রার্থী হিসেবে থাকেননি।
তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে নৌকার সমর্থনে ভোটের ময়দানে সক্রিয়। এই শূন্যস্থান পূরণে তৎপর হয়ে উঠেছেন ট্রাক প্রতীকের অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম। তিনি ঝিকরগাছার পাশাপাশি চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের হতাশ নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে কঠিন চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছেন ডাক্তার মো. তৌহিদুজ্জামান তুহিনের বিরুদ্ধে। আসনটির অন্য তিনজন প্রার্থী জাতীয় পার্টির ফিরোজ শাহ, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আব্দুল আওয়াল এবং বিএনএফের শামছুল হক ভোটারদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি।
ডাক্তার তৌহিদুজ্জামান তুহিনের এখন একমাত্র মাথাব্যাথার কারণ স্বতন্ত্র অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির। সে কারণে তিনি ভোটের মাঠে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি দলীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায়ও মনোনিবেশ করতে বাধ্য হচ্ছেন। নির্বাচনি বক্তৃতায়ও এই বিষয়টির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নিয়ম মেনে রোগীর সেবা করা এই প্রার্থী এবার কোনো নিয়মের ঘেরাটোপে আর থাকতে পারছেন না। প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টাই যেনো তার কাছে কাজের সময়ে পরিণত হয়েছে। ভুলে গেছেন নাওয়া-খাওয়া। ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
একইভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন যশোর-৩ আসনের বর্তমানসহ পরপর দুই বারের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ। নৌকার এই প্রার্থীকে এবার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের যশোর জেলা সদস্য ও সদর উপজেলা সভাপতি মোহিত কুমার নাথ। মোহিত কুমার নাথ এক সময় যশোর জেলার রাজনীতিতে পরস্পরবিরোধী দুটি বলয়ের একটির নেতা এমপি কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গেই ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এখনো তিনি সে বলয়েই সক্রিয়। দীর্ঘদিন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেও তার ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি পরিচিতি রয়েছে। সেইসব কাজে লাগিয়ে নির্বাচনি ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন মোহিত কুমার নাথ।
এবারের নির্বাচনে যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়েছেন বর্তমানসহ পর পর দুইবারের এমপি ও প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। এবারও নৌকা নিয়ে ভোটের ময়দানে থাকা এই বর্ষিয়ান নেতা দিনরাত চষে বেড়াচ্ছেন সংসদীয় আসনের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে। সকাল থেকে গভীর রাত তিনি ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। ভোটারদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তার সময়ে করা কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের বিভিন্ন প্রকল্প, স্কুল, মাদরাসা, মন্দির, রাস্তাঘাটসহ নানা উন্নয়নের কথা। আহ্বান জানাচ্ছেন অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত করতে আগামীতেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করতে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম-বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও জেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি এসএম ইয়াকুব আলী বড় ফ্যাক্টর। ঈগল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াকুব আলীও কম যাচ্ছেন না। তিনিও সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। এই আসনে জাতীয় পার্টির এম এ হালিম, ইসলামি ঐক্যজোটের মাওলানা নুরুল্লাহ আব্বাসি এবং তৃণমূল বিএনপির মেজর বনিকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তেমন কোনো আলোচনাই শোনা যায়নি।
জেলার কেশবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত যশোর-৬ আসন। এই আসনের বর্তমান এমপি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। তিনি এবারও এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন লাভ করেছেন। তবে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এইচএম আমির হোসেন এবং উপজেলা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল ইসলাম।
এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে জিএম হাসান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তিনি তেমন একটা আলোচনাতে নেই। যশোর-৬ আসনের নির্বাচন মূলত নৌকার আর দুই স্বতন্ত্রের সঙ্গে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন শাহীন চাকলাদারের নৌকা এবং আমির হোসেনের কাঁচি।
(ঢাকাটাইমস/৫জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

মন্তব্য করুন