কক্সবাজারে ভোটের পরীক্ষায় আ.লীগের ৩ প্রার্থী ও কল্যাণের ইব্রাহিম

কক্সবাজার জেলার চারটি আসনের তিনটিতে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। শুধুমাত্র কক্সবাজার-১ আসনে নেই আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী। এরইমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মুখোমুখি হয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্যরা। প্রতিটি আসনেই দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলেছে।
কক্সবাজার-১: ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন জাফর আলম। কিন্তু এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম হাতঘড়ি প্রতীকে নির্বাচনি মাঠে আছেন। তাকে সমর্থন জানিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এ কারণে তিনি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম। তবে, সুষ্টু ভোট হলে উভয় প্রার্থী জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানিয়েছেন।
এ আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী কমর উদ্দীন, স্বতন্ত্র প্রার্থী তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট’র মুহাম্মদ বেলাল উদ্দিন এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) হোসনে আরা।
কক্সবাজার-২: আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ীমী লীগ প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিককে নির্বাচনি মাঠে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন বিএনএম প্রার্থী শরীফ বাদশা।
নির্বাচনি মাঠে দুই প্রার্থী সমানতালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন। উভয়ে জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়ী। এই আসনে মোট ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি এন.পি.পির মাহাবুবুল আলম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মোহাম্মদ খাইরুল আমিন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান এবং ইসলামী ঐক্যজোট-আই.ও.জে এর মো. ইউনুস।
কক্সবাজার-৩: আসনে চলছে জমজমাট নির্বাচনি প্রচারণা। এই আসনে মোট ৫ জন প্রার্থী হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদের মধ্যে। ইতিমধ্যে এই আসনে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা, ধাওয়া—পাল্টা ধাওয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণার মাইক ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মামলাও হয়েছে। প্রতিদিন এক প্রার্থী অপর প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন।
এই আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ এর মোহাম্মদ ইব্রাহিম, জাতীয় পার্টির (জাপা) মোহাম্মদ তারেক এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি—ন্যাপ এর শামীম আহসান (ভুলু)।
কক্সবাজার-৪: আসনে ৬ জন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আকতার ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর এর মধ্যে। নৌকার প্রার্থী শাহীন আক্তার বহুল আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির স্ত্রী।
বদির জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হতে চান স্ত্রী শাহীন আক্তার। তবে তিনি ইতিমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। অন্য প্রার্থীরা হলেন, জাতীয় পার্টির (জাপা) নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির ফরিদ আলম, তৃণমূল বিএনপির মুজিবুল হক মুজিব, ইসলামী ঐক্যজোট—আই.ও.জে এর মোহাম্মদ ওসমান গণি চৌধুরী এবং বাংলাদেশ কংগ্রেস এর মো. ইসমাইল।
জেলার একাধিক সচেতন নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের ভোটের সরগরম তাদের মধ্যে সীমাবন্ধ। নৌকার পোস্টার ব্যানার ছাড়া মূলত আর কিছুই নেই। বলতে গেলে বাকি প্রার্থীরা এক প্রকার কোনঠাসায় রয়েছেন। অনেকে এজেন্টও দিতে পারবেন না। শেষ পর্যন্ত নৌকার প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক, সাইমুম সরওয়ার কমল, শাহীন আকতার ও আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বিজয়ী হবেন।
উল্লেখ্য, জেলার চারটি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬৫০৯৬০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৮৭৩৪৮০, নারী ৭৭৭৪৭৮ও তৃতীয় লিঙ্গের ২ জন। মোটকেন্দ্র ৫৫৬টি। ভোট কক্ষ (বুথ) রয়েছে স্থায়ী ৩ হাজার ৫০৭টি। পুরো জেলায় অস্থায়ী বুথ রয়েছে ১৬টি। ৪টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন মোট ২৬ জন।
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান জানান, চারটি আসনে অনুষ্টিতব্য দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনে কেউ সহিংসতা অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
(ঢাকাটাইমস/৬জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

মন্তব্য করুন