দিনাজপুরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় আলু-বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

বোরো ধানের বীজতলা হলুদ বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আলু ক্ষেতে মোড়ক ধরেছে। বালাইনাশক স্প্রে করেও কোন সুফল পাওনা যাচ্ছে না। প্রচণ্ড ঠান্ডায় ফসলের পরিচর্যা করতে কষ্ট হচ্ছে। টমেটোর গাছও মরে যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে শীতের যে তীব্রতা, তাতে ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি আমরা।"
এমনটাই জানালেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পুরিয়া গ্রামের আদর্শ কৃষক মো. মতিউর রহমান।
তিনি বলেন, 'এবার আমি ৮০ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এ জন্য তিনি সাড়ে তিন একর জমিতে বোরো ধানের বীজতলা করেছি। কিন্তু রোরো ধানের বীজতলার খুবই খারাপ অবস্থা। ধানের চারাগাছ হলুদ হয়ে যাচ্ছে। স্বচ্ছ সাদা পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রেখেও কোনো কাজ হচ্ছে না। শীতের তীব্রতায় আলু ক্ষেতে পাতার মড়ক রোগ দেখা দিয়েছে। এবার ২৫ একর জমিতে আলু লাগিয়েছি। অনেক ক্ষেতে আলুর পচন রোগ ধরেছে। বালাইনাশক স্প্রে করেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রচণ্ড ঠান্ডায় ফসলের পরিচর্যা করতে কষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এবার কৃষিতে খুবই ক্ষতির সম্মুখীন হবো।"
শুধু মতিউর রহমান নয়, জেলার অনেক কৃষক এখন জমিতে ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
দেশের শস্যভান্ডার খ্যাত দিনাজপুর জেলায় তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় কৃষি খাতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কয়েকদিন ধরে জেঁকে বসা কুয়াশা ও শীতের তীব্রতা কৃষকদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। শীতকালীন বিভিন্ন সবজি আলু, পেঁয়াজ, টমেটো এবং বোরো ধানের বীজতলা ক্ষেত নিয়ে কৃষকরা উদ্বিগ্ন।
বিশেষ করে আলুতে দেখা দিয়েছে লেটব্লাস্টইট রোগ। তা ছাড়া হঠাৎ ঘন কুয়াশায় বোরো ধানের বীজতলা নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। তীব্র শীতে কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হচ্ছে বোরোর বীজতলা। অনেক এলাকায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চারার গোড়া বা পাতা পচা রোগ এবং হলুদ বর্ণ ধারণ করে বীজতলা দুর্বল হয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন চাষিরা।
কৃষি দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ জানিয়েছেন, 'সূর্যের আলো ঠিকমতো না পাওয়ায় নিম্ন তাপমাত্রা ও কুয়াশা-যুক্ত আবহাওয়ার কারণে এসব ফসল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। তাই তাৎক্ষণিকভাবে এসব ফসল রক্ষায় বাড়তি যত্ন ও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।'
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, আমাদের এখানে বোরো ধানের বীজতলার তেমন কোনো সমস্যা নেই। ইতোমধ্যে বীজতলা সম্পন্ন হয়েছে। দেরিতে যারা রোপণ করেছেন, তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যাতে বীজতলা নষ্ট না হয়। জেলায় এবার এক লাখ ৭৪ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য বীজতলা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৫৭৯ হেক্টর জমিতে। অন্যদিকে জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৮২৮ একর জমিতে। আলুর অবস্থাও ভালো। জমিতে নিয়মিত বালাইনাশক স্প্রে করলে সমস্যা আর থাকবে না।'
প্রসঙ্গত, বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহে কনকনে শীতে কাঁপছে উত্তরের জনপদ দিনাজপুর। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা বৃহস্পতিবার দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে ১৩ ও ১৪ জানুয়ারিও এ জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ৯ দিন ধরে বৃষ্টির মতো ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে বিপর্যস্ত জীবনযাত্রা। পশুপাখিসহ প্রাণীকুলেরও অবস্থাও নাকাল। শীতের প্রকোপে খেটে খাওয়া-নিম্নআয়ের মানুষের দুরবস্থা। রাভভর বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা।
এ কারণে অনেক কৃষকের ক্ষেতের আলুতে মড়ক রোগের আক্রমণ হয়েছে। কুয়াশাযুক্ত আবহাওয়ায় মড়ক রোগে আক্রান্ত আলু গাছ দ্রুত লতাপাতা ও কাণ্ডসহ পচে যাচ্ছে। বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে বীজতলার চারা হলুদ বা ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করেছে।
তবে যেসব বীজতলার চারার বয়স বেশি হয়ে গেছে সেগুলোর ক্ষতি হয়নি এখনো।
তবে চলতি মৌসুমের বোরো আবাদ নিয়ে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে অনেক কৃষকের। তীব্র শীতে তারা মাঠে কাজ করতে পারছেন না। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে জমি প্রস্তুতসহ ধানের চারা রোপণ। বীজতলা রক্ষায়ও করুণ অবস্থা তাদের। আবহাওয়া পরিবর্তন না হলে বোরো চাষ নিয়ে বিপদের আশঙ্কাও কাজ করতে কৃষকদের মনে।
(ঢাকাটাইমস/১৮জানুয়ারি/এআর)

মন্তব্য করুন