মানিকগঞ্জের লোকালয়ে অবৈধ ইটভাটা, নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি, কমেছে ফসল উৎপাদন

হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:২৪

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার অবৈধ ইটভাটার কারণে প্রতিবছরই নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি, কমেছে ফসল উৎপাদন। তবু থেমে নেই ভাটার কার্যক্রম। ইট প্রস্তুত ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন লঙ্ঘন করে কৃষিজমি, লোকালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটা। ইটভাটার ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। শ্বাসকষ্ট চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ভাটার আশপাশে বসবাসকারী মানুষ।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গভীর রাতে দুই তিন ফসলি জমির মাটি নেওয়া হচ্ছে ভাটায়। এসব মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। উপজেলার তিনটি ভাটাই বলড়া ইউনিয়নে অবস্থিত। গত কয়েক বছরে শুধু বলড়াতেই কমেছে অন্তত ১০ একরেরও বেশি ফসলি জমি। এসব জমির মাটি কেটে ইটভাটার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

ইট প্রস্তুত ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী, কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। এছাড়া, ইটের কাঁচামাল হিসেবে কৃষিজমির মাটি ব্যবহারও নিষিদ্ধ। কিন্তু ভাটা মালিকরা মানছেন না এসব আইন।

স্থানীয় কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, ভাটা নির্মাণের পর থেকে ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। ফসলি জমির মাটি দিয়েই ভাটায় ইট প্রস্তুত করা হয়। ভাটার ধোঁয়া শ্বাসকষ্ট হওয়ায় অনেক সময় জমিতে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে বলেও জানান তারা। প্রশাসনের কাছে দ্রুত ভাটাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

সরজমিনে দেখা যায়, আমিন ব্রিকস সংলগ্ন মালিকের নিজস্ব কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে ভাটায় নেওয়া হচ্ছে। ভাটার কয়েকজন শ্রমিক জানান, কয়েকদিন আগে পাশের আরেকটি জমি থেকে মাটি আনা হয়েছে।

বিষয়ে জানতে চাইলে ইটভাটার সার্বিক দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ভাটা মালিক নুরুল আমিনের ছেলে শামীম হোসেন মুঠোফোনে জানান, কৃষিজমির মাটি আমরা ব্যবহার করিনা। মাটি কোথা থেকে আনেন জানতে চাইলে তিনি বিষয়টির উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেছেন।

ভুক্তভোগী জমির মালিক লতিফ মোল্লা বলেন, গত বছর আমার শতাংশ জমির পাশের জমি থেকে মাটি কাটার কারণে আমার জমির কিছু অংশ ধসে পড়েছে। পরে ইটভাটার পার্টনার সজিব বলেছিল জমি বেঁধে দিবে। আর দেয়নি। বছর আবার মাটিকাটার জন্য আমার জমি ধসে পড়েছে। আমরা তাদের কিছু বলতে পারি না।

গত বছর ইউএনও এসিল্যান্ডের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি বলে জানান তিনি।

অপর ভুক্তভোগী মোশাররফ বলেন, আমার ২০ শতাংশ জমির একাংশ ধসে পড়েছে। গভীর রাতে ইচ্ছাকৃতভাবে এমনভাবে মাটি কাটে যাতে পাশের জমির মাটি ধসে পড়ে। এরপর জমির মালিকরা বাধ্য হয়ে জমি বিক্রি করে দেয়।

স্থানীয় কৃষক সাহেব আলী বলেন, ইটভাটার জন্য বছর বছর কৃষি জমির পরিমাণ কমছে। ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। তাদের মাটি কাটার কারণে পার্শ্ববর্তী জমির মালিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভাটার ধোঁয়ার গন্ধে জমিতে কাজ করতেও সমস্যা হয়।

বিষয়ে জানতে স্বাধীন ব্রিকসে গেলে মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে একাংশের মালিক শীতল চৌধুরী বলেন, ‘ বিষয়ে পরে কথা বলবো।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অবৈধভাবে কৃষি জমির মাটিকাটার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২১জানুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :