সুনামগঞ্জকে বাঁচাতে সবার আগে হাওর রক্ষা করতে হবে

সুনামগঞ্জকে বাঁচাতে সবার আগে হাওর রক্ষা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য কী রেখে যাবো প্রশাসনকে এর উত্তর দিতে হবে। প্রশাসন যখন জলাশয়গুলো লিজ দেন কাগজে-কলমে অনেক নিয়মনীতি লেখা থাকে। বিল শুকিয়ে মাছ ধরার কারণে লিজ বাতিল হওয়ার কথা থাকলেও কেন বাতিল করা হয় না বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
সোমাবার সকাল বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও এল আর ডি'র যৌথ আয়োজনে আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে এটা থামাতে হবে এখনি। এবং মৎস্যজীবীরা তাদের পেশা পরিবর্তন করে ফেলছে। কারণ, লিজ পায় অপেশাদার লোকেরা। তাই এসব রক্ষার জোরদাবি তোলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এদিন সকাল থেকে জেলা শহরের সার্কিট হাউজের মিলনায়তনে হাওরের বাঁধ নদী কৃষি ও পরিবেশ সংকট নিরসনে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় এলআরডি'র নির্বাহি পরিচালক শামসুল হুদার সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন,সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন,বৌলাই ও যাদুকাটা টাঙ্গুয়া সুনামগঞ্জ হাওরের অন্যতম নদী। মেঘালয় অঞ্চল থেকে পানির প্রবাহ এসে নদীগুলো ভরে যায় যা হাওর অঞ্চলে পানির জলাধার তৈরি হয়। নদ-নদীর সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে, হুমকিতে পড়বে জনজীবন। টাংগুয়ার হাওরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এমন পাখি দেখা মিলে। এ পাখির অস্তিত্ব প্রমাণ করে এখানে পাখির খাদ্য ও বিচরণ ব্যবস্থা আছে। হাওর রক্ষায় প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বাঁধের কাছ থেকে মাটি কাটা হয়। ফলে বন্যা হলে বাঁধ ভেঙে যায়। নিয়ম হলো বাঁধের কাছে নলখাগড়ার মতো গাছ লাগানো। তবেই হাওর সুরক্ষা পাবে। দেশি জাতের চাল যেমন টেপি রাতা অদৃশ্য হয়ে গেছে। এসব ফিরিয়ে আনতে সরকারকে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন বলে প্রবন্ধে উপস্হাপন করেন তিনি।
আলোচনা সভায় বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন,জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাসেদ ইকবাল চৌধুরী,পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আবুসাঈদ, মৌলভিবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মহিবুল ইসলাম,সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আল মাহমুদ, বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আখতার, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম,কৃষি প্রশিকক্ষক মোস্তফা আল আজাদ,
হাওর বাঁচাও আন্দোলন এর জেলা সভাপতি, বিজেন সেন রায়,পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি শমসের আলীসহ হাওরের প্রান্থিক কৃষক ও জেলা উপজেলার গণমাধ্যম কর্মীগণ।আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন,দেশের মধ্যে ৭টি জেলা হাওর বিস্মৃত,তন্মধ্যে সুনামগঞ্জে রয়েছে বেশি হাওর। হাওর বেষ্টিত এই অঞ্চলে হাওর মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি তোলেন। পর্যটকরা টাঙ্গুয়ার হাওরে এসে রাত্রী যাপন করেন। এতে করে বর্জ্য ত্যাগের ফলে মিঠাপানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে মাছ মিলছেনা আগের মতো। বিলীন হয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির মাছ। হাওরে রাত্রিযাপন না করার জোরালো দাবি তুলেন বক্তারা। পি আইসি প্রকল্প নিয়ে তারা বলেন,যেখানে বাঁধের প্রয়োজনীয়তা নেই সেখানেও বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এবং অতিরিক্ত টাকা বরাদ্দ দিয়ে লুটের আয়োজন করা হচ্ছে। এখনো ৯০ ভাগ বাঁধে কাজ শুরু হয়নি। ফলে ২০১৭ সালের মতো আগাম বন্যা হয়ে গেলে ভয়াবহ ফসলহানীর আশঙ্কা রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/এআর)

মন্তব্য করুন