সড়কে বিদ্যুতের খুঁটি রেখে কার্পেটিং, দুর্ঘটনায় আহত শতাধিক

নোয়াখালীর সেনবাগ-বজরা সড়কের সোনাইমুড়ী অংশের দীঘিরজান বাজার থেকে বজরা বাজার পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়কে পল্লীবিদ্যুতের প্রায় অর্ধশত খুঁটি রেখেই কার্পেটিং করেছে সড়ক বিভাগ। গত ৪/৫ মাসের বেশি সময় ধরে সড়কের মাঝখানের মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে খুঁটিগুলো। ফলে দীঘিরজান-বজরা সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সিএনজি, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলগুলো প্রতিদিন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। চলতি শীত মৌসুমে কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে কয়েকগুণ। এ পর্যন্ত দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। এজন্য স্থানীয়রা সড়ক বিভাগ ও পল্লী বিদ্যুৎকে দায়ী করছেন।
এমনই একটি দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন সোনাইমুড়ী উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের অটোরিকশা চালক মো. শাহজাহান (৫০)। অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। গত ৪ মাস আগে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মারাত্মক আহত হন তিনি। এতে থেমে যায় তার উপার্জন। তিন ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। এখন দুই ছেলে কোনোভাবে চালিয়ে নিচ্ছে সংসার।
তবে এতদিনেও সড়কটির মাঝখান থেকে বিদ্যুতের খুঁটি না সরানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শাহজাহান। তিনি বলেন, সড়ক ও পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের অবহেলার কারণে আজ আমার এ অবস্থা।
শুধু শাহজাহান নয় এ সড়কটিতে প্রতিদিন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত হচ্ছেন অনেক যাত্রী ও পথচারী।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সোনাইমুড়ি উপজেলার দীঘিরজান বাজার থেকে বজরা বাজার পর্যন্ত সদ্য প্রশস্ত করা সড়কের মাঝখানে সারিসারি বিদ্যুতের খুঁটি। সড়কের ৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এমন খুঁটি রয়েছে অর্ধশত। ফলে ব্যস্ততম এ সড়কে দিনে ও রাতে ঘটছে দুর্ঘটনা, বিকল হচ্ছে যানবাহন, আহত হচ্ছে অনেকে।
স্থানীয়দের দাবি, খুঁটি বসানোর সময় একাধিকবার এবং সড়ক কার্পেটিং করার সময় বারবার বলেও তাদের কাজ আটকানো যায়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ খুঁটিগুলো অন্যত্র সরিয়ে সড়কটি নির্বিঘ্ন করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সড়ক বিভাগের তথ্যমতে, সেনবাগ থেকে সোনাইমুড়ি বজরা বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৬ কিলোমিটার সড়কে বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণে প্রায় ৭০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে। কিন্তু দীঘিরজান থেকে বজরা বাজার পর্যন্ত সড়কে খুঁটিগুলো সরানো হয়নি। বাধ্য হয়ে খুঁটি রেখেই কার্পেটিং করতে হয়েছে।
এদিকে সঠিক সময়ে খুঁটি না সরানোয় বিদ্যুৎ বিভাগের উপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সড়কের নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার।
তিনি বলেন, সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করার আগে খুঁটিগুলো সরানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রয়োজনীয় বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমাদের ওই সড়কটির কাজ শেষ করতে হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের খুঁটিগুলো না সরানোর কারণে ঠিকাদার বাধ্য হয়ে সেগুলো রেখেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা পল্লী বিদ্যুতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে খুঁটিগুলো সরিয়ে নিবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন বলেন, ওই সড়কটির মাঝখানে ৩৯টি খুঁটি রয়েছে। সড়কের আয়াতন বাড়ানোর কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। খুঁটিগুলো সরানোর জন্য অনুমোদন পেয়ে ত্রিশ লাখ টাকার ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে। আশা করছি চলতি মাসেই খুঁটিগুলো সরানো হবে।
(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস

মন্তব্য করুন