রাজবাড়ীতে দেড় কোটি টাকার মধু আহরণের টার্গেট মৌ চাষিদের

সরিষা ফুলের হলুদ রঙে সেজেছে রাজবাড়ীর বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। দিগন্ত জোড়া মাঠের যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ রঙের নয়নাভিরাম দৃশ্য। প্রতিবছর এই সরিষা খেতকে ঘিরে তৎপর হয়ে ওঠে মৌ চাষিরা। খেতের পাশে বসানো হয় মৌবাক্স। দেশের বিভিন্ন এলাকার মৌ চাষিরা এ সময় ভিড় জমান রাজবাড়ীতে।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জেলার পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মধু আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌ চাষিরা।
ছোট-বড় মিলে কমপক্ষে ২০ জন চাষি প্রায় চার হাজার মৌবাক্স বসিয়েছেন। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে এসব বাক্স থেকে চলছে মধু আহরণ। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এ কার্যক্রম।
চলতি মৌসুমে ৬০ মেট্রিক টন মধু আহরণের আশা করছেন মৌ চাষিরা। এখানে আহরণ করা মধু পাইকারি দরে প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সবকিছু ঠিকমতো থাকলে প্রায় দেড় কোটি টাকার মধু বিক্রির আশা করছেন মৌ চাষিরা।
এদিকে কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় রাজবাড়ীতে দিন দিন সরিষার আবাদও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে কৃষকরা ঝুঁকছেন সরিষা চাষে। গত বছরের চেয়ে এবার জেলায় দেড় হাজার হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফসলের আশা করছেন চাষিরা।
জানা যায়, পদ্মা পাড়ের প্রায় সব অঞ্চলের জমিতে এক থেকে দুটি ফসলের বেশি আবাদ হত না। বর্তমানে সরকারের কৃষিবান্ধব নানা পদক্ষেপের কারণে এসব অঞ্চলে চাষ হচ্ছে একটি বাড়তি ফসল। অনাবাদি পড়ে থাকা জমিগুলোতে চাষ করা হচ্ছে সরিষা। অথচ আগে পানি সংকটসহ নানা কারণে দীর্ঘ সময় অনাবাদি পড়ে থাকতো এসব জমি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৬ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এসব সরিষা ক্ষেতের পাশে প্রায় ৫ হাজার বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত রয়েছেন মৌ চাষিরা।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো, জনি খান বলেন, এ বছর সদর উপজেলায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করতে আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি বিনামূল্যে বিভিন্ন জাতের সরিষা বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম বলেন, চলতি বছর জেলায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে দেড় হাজার হেক্টর বেশি।
তিনি বলেন, সরিষা ফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহের ফলে পরাগায়নের মাধ্যমে সরিষার প্রায় ১০ শতাংশ ফলন বাড়ে। একই সঙ্গে মৌমাছি মধু সংগ্রহের পাশাপাশি ফসলের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মেরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
(ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস)

মন্তব্য করুন