ডায়াবেটিস রোগীরা নির্ভয়ে যেসব ফল খেতে পারবেন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:২১

ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস নিঃশব্দে কেড়ে নিতে পারে প্রাণ। ভুল জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে সব বয়সের মানুষই ডায়াবেটিস রোগের শিকার হচ্ছেন। বিপজ্জনক বিষয় হল যে একবার কোনও ব্যক্তি এই রোগের শিকার হয়ে গেলে, এটি কখনও চিরমুক্তি হয়না, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত করতে পারে ৷

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হলে অগ্ন্যাশয় যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, শরীরে উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়। রক্তে চিনি বা শর্করার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। ইনসুলিনের ঘাটতিই হলো ডায়াবেটিস রোগের মূল কথা। টাইপ-২ বহুমূত্র রোগের পেছনে থাকে মূলত ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। টাইপ-২ রোগীর শরীরে যে ইনসুলিন উত্পন্ন হয়, একে ব্যবহার করতে পারে না। চিকিত্সকদের পরামর্শ হচ্ছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে জীবনধারায় আগে থেকেই পরিবর্তন আনতে হবে।

সুষম ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন হ্রাস ইত্যাদির মাধ্যমে ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়। খাদ্যাভ্যাসে ফল থাকার গুরুত্ব সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন গবেষকেরা। সুস্থ থাকার সঙ্গে ফল খাওয়ার এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ফল হচ্ছে সমস্থ স্বাস্থ্যকর উপাদানের সমৃদ্ধ উৎস। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা থেকে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা— স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে ফলের ভূমিকা অনবদ্য। কিন্তু ফলের এত গুণ থাকা সত্ত্বেও ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে ফল খাওয়ার বিষয়ে একটু সাবধানতা থাকে। ডায়াবেটিকদের খাওয়াদাওয়া নিয়ে বাড়তি সতর্ক থাকা জরুরি। না হলে মুশকিলে পড়তে হবে।

আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযাীয় ভিটামিন এবং ফাইবার রয়েছে এমন ফল খাওয়া উচিত। এসব ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিস দূরে রাখতে সাহায্য করবে। তাই জেনে নিন, আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে, তা হলে এই মৌসুমে কোন ফলগুলো আপনি নির্দ্বিধায় খেতে পারেন।

আপেল

সারা বছরই কোনও না কোনও জাতের আপেল পাওয়া যায়। আপেলে দ্রবণীয় ফাইবারে ভরপুর, আপেল রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে। আপেলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ফাইবার। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কম করতে ভালো কাজ দেয় এই ফাইবার। আপেলের মধ্যে রয়েছে পেকটিন। এটি ব্লাড সুগার কম করতে সাহা‌য্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মিষ্টি আপেল ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর নয় একেবারেই। উচ্চ ফাইবারযুক্ত এই ফলটিতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। আপেলের গ্লাইসেমিক ইনডেস্ক ৩০ থেকে ৫০। তাই দিনে একটি ছোট আপেল খাওয়া যেতেই পারে। বিভিন্ন গবেষণায় জানা গিয়েছে, কোনও আপেল না খাওয়ার তুলনায় প্রতিদিন একটি আপেল খেলে টাইপ ২ ডায়াবিটিসের ২৮% কম ঝুঁকি থাকে। মনে রাখবেন আপেলে খাওয়ার ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কম থাকে। আপেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ডায়েটি ফাইবারের একটি বড় উত্‍স। ফাইবার রক্তে সুগার ধীরে ধীরে শোষণ করে শক্তির উত্‍স প্রদান করে। তাই আপেলের সুগার নিয়ে ভয় পেয়ে দূরে রাখার কোনো কারণ নেই। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্তরাও আপেল খেতে পারবেন। তবে খুব বেশি না খাওয়াই ভালো। প্রতিদিন একটি অথবা দুটি আপেল তারা খেতে পারবেন। আপেল খেতে হবে খোসাসহ। কারণ এর খোসায় থাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

কমলালেবু

শীতকালে বাজারে খুব সহজেই কমলালেবু পাওয়া যায়। রোজ কমলালেবু খেলে যেমন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, তেমনই ত্বকের ঔজ্জ্বল্যতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে কমলালেবু। আমেরিকান ডায়াবিটিস সোসাইটির মতে, কমলালেবু বা মোসাম্বির মতো সাইট্রাস ফলগুলি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ফাইবার, ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ কমলালেবু অবশ্যই থাকা উচিত মধুমেহ রোগীদের খাদ্য তালিকায়। কমলালেবুর মধ্যে ভরপুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফলে খেলে কোনও ক্ষতিই হবে না ডায়াবেটিক রোগীদের।

নাশপাতি

ডায়াবেটিকদের জন্য নাশপাতি বেশ উপকারী ফল। এতে আছে আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ। আর কম গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স'য়ের ফল বলে তৃপ্তি যুগিয়ে শর্করার কারণে হওয়া খিদার মাত্রা কমায়। এর আঁশের কারণে দেহে শর্করার শোষণ হয় ধীরে। নাশপাতি খাওয়া ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে প্রতিদিন নাশপাতির মতো অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ ফল খাওয়া টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৩% কমাতে পারে। নাশপাতিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা ডায়াবেটিক ডায়েটে অবশ্যই রাখা উচিত। ফ্রুট সালাদ বানালেও অবশ্যই তাতে নাশপাতি রাখবেন।

কিউয়ি

কিউয়ি একটি বিদেশি ফল। সবখানে এটি মেলে না। বড় বড় সুপার শপে পাবেন। অনলাইন থেকেও কিনতে পারেন। এতে রয়েছে পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি। আপনি যদি ডায়াবেটিক রোগী হয়ে থাকেন, তাহলে কিউই আপনার জন্য দারুণ ফল হিসেবে প্রমাণিত হবে । এতে থাকা ফাইবার উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে ৷ এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ফল করে তোলে ।

পিচ

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য পিচ ফল দারুণ উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে এবং শরীরের বিপাক হার বাড়াতে সাহায্য করে পিচ। যদি সকালে স্মুদি খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে দই বা ঘোলের সঙ্গে কয়েকটি পিচের টুকরো, সামান্য দারুচিনি গুঁড়ো এবং অল্প আদা দিয়ে স্মুদি বানাতে পারেন।

জাম বা অন্য বেরি

জামে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে যা শরীরের পক্ষে খুব ভাল। প্রতিদিন জাম খেলে ইনসুলিনের কার্যকলাপ বাড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। জামে জাম্বোলিন নামক একটি যৌগ রয়েছে যা রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। জামে থাকা উচ্চ অ্যালকালয়েড উপাদান হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। যদি স্ট্রবেরি পেয়ে যান, খেতে পারেন। চেরি খুব সহজে পেয়ে যাবেন। ফ্রুট স্যালাদ আরও সুস্বাদু করার জন্য চেরি দারুণ কাজে লাগে। বেরি ড্রাই ফ্রুট হিসেবেই খেতে পারেন। তবে দেখে নিতে হবে তাতে বাড়তি চিনি মেশানো রয়েছে কিনা।

পেয়ারা

ডায়াবেটিস রোগীদের একটি বড় সমস্যা হল কোষ্ঠকাঠিন্য। পেয়ারার মধ্যে প্রচুর ফাইবার থাকে। এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য কম করতে সাহা‌য্য করে। পাশাপাশি রোগীকে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশি পরিমাণে পটাশিয়ামযুক্ত খাদ্য খেতে বলা হয়। তবে তালিকায় সোডিয়ামযুক্ত খাবার না রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিশারদরা। এদিক থেকে পেয়ারা সর্বোৎকৃষ্ট ফল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

পেঁপে

পেঁপের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি খুবই উপকারী। রক্তে গ্রুকোজের মাত্র বেড়ে গেলে রোগীর হার্ট, নার্ভের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। নিয়মিত পেঁপে খেলে তা কিছুটা রুখে দেওয়া যায়। পেঁপে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এই ধারণা ভুল। পেঁপের ‘গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা জিআই-এর মান অনেকটাই কম। তাই পরিমিত মাত্রায় ডায়াবেটিক রোগীরা নিজেদের ডায়েটে পাকা পেঁপে রাখতেই পারেন। তবে কাঁচা পেঁপে কিন্তু অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।

যেসব ফল এড়িয়ে চলবেন

আম, আতা, কাঁঠাল, কলা, সবেদা, আঙুর এই ফলগুলো শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ, এগুলোর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনায় অনেক বেশি। ডায়াবেটিস থাকলে ভুলেও খাবেন না এই ধরনের ফল।

(ঢাকাটাইমস/৩ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :