একুশে পদক পাচ্ছেন কেন্দুয়ার কবি জালাল উদ্দিন খাঁ

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার গর্ব ও বাউল সাধক জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর) শিল্পকলার সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্যে একুশে পদক-২০২৪ পাচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠান শাখার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর)সহ ২১ বিশিষ্ট নাগরিককে এই পদক দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করা হয় ।
মরমি কবি জালাল উদ্দিন খাঁ নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার ২ নং আশুজিয়া ইউনিয়নের আসদহাটি (সিংহেরগাঁও) গ্রামে ১৮৯৪ সালের ২৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সদরুদ্দীন খাঁ।
আত্মতত্ত্ব, পরমতত্ত্ব, নিগূঢ়তত্ত্ব, লোকতত্ত্ব, দেশতত্ত্ব ও বিরহতত্ত্বের নামাঙ্কিতের মাঝে জালাল উদ্দিন প্রায় সহস্রাধিক গান রচনা করেছিলেন। প্রখ্যাত এই লোক কবি মালজোড়া গানের আসরেও ছিলেন অনন্য। তার জীবদ্দশায় চার খণ্ডের ‘জালাল-গীতিকা’ গ্রন্থে ৬৩০টি গান প্রকাশিত হয়েছিল। তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় ‘জালাল-গীতিকা’ পঞ্চম খণ্ড। মোট ৭০২টি গান নিয়ে ২০০৫ সালের মার্চে প্রকাশিত হয় জালাল গীতিকা সমগ্র।
জালাল তার গানগুলোকে বিভিন্ন ‘তত্ত্ব’তে বিন্যস্ত করে প্রকাশ করেন। সেই তত্ত্বগুলোর নামগুলো হলো- আত্মতত্ত্ব, পরমতত্ত্ব, নিগূঢ়তত্ত্ব, লোকতত্ত্ব, দেশতত্ত্ব, বিরহতত্ত্ব।
আবার জালাল খাঁ অনেক গানই কোনো তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত করেননি। সেগুলো ভাটিয়ালি, মুর্শিদি ও মারফতি নামে পরিচিত।
‘জালাল গীতিকা’র চতুর্থ খণ্ডে কোনো তত্ত্ব নির্দেশ ছাড়াই বাউল সুর, ঝাপতাল, চৌপদী, প্রসাদ সুর, মুকুন্দ সুর, খেমটা নামে মোট ১০১টি গান সংকলিত হয়েছিল। তার মৃত্যুর পর উত্তরসূরিদের থেকে ‘জালাল গীতিকা’র যে পঞ্চম খণ্ড প্রকাশিত হয় তাতে গীতিগুলোর কোনোরূপ শ্রেণিবিন্যাস বা নামাঙ্কন করা হয়নি। তাছাড়া ‘বিশ্ব রহস্য’ নামে একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ প্রকাশ করেন তিনি ।
১৯৭২ সালের ৩১ জুলাই, ১৬ শ্রাবণ ১৩৭৯ বঙ্গাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নিজ গ্রাম সিংহেরগাঁওয়ের বাড়ির আঙিনায় তার মাজার অবস্থিত। প্রয়াত মরমী বাউল সাধক জালাল উদ্দিন খাঁ স্মরণে প্রতি বছর দু’দিনব্যাপী পালিত হয় ‘জালাল মেলা’।
একুশে পদক বাংলাদেশের একটি জাতীয় এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার এবং তাদের প্রত্যেককে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের তৈরি ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি করে পদক, নগদ অর্থ, একটি সম্মাননা পত্র ও একটি রেপ্লিকা দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জালাল উদ্দীন খাঁ’র নাতি গোলাম ফারুক খানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সুদীর্ঘ সময় পর হলেও বাংলাদেশ সরকার তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন। আমি সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
(ঢাকাটাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

মন্তব্য করুন