সিঙ্গাইরে গাজরের বাম্পার ফলন 

আতিকুল ইসলাম, সিঙ্গাইর (মানিকগঞ্জ)
 | প্রকাশিত : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:১২

গাজর আবাদের জন্য ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের সুখ্যাতি রয়েছে আগে থেকেই। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট গাজর আবাদের ৩৪ শতাংশ সিঙ্গাইর উপজেলায় আবাদ হচ্ছে। এবার এই উপজেলায় ৯৫০ হেক্টর জমিতে গাজর উৎপাদিত হয়েছে। উপজেলার কিটিংচর, দেউলী, দশানী, ভাকুম, নয়াপাড়া, মেদুলিয়া, গাজিন্দা, লক্ষ্মীপুর, নীলটেক, কানাইনগর, মোসলেমাবাদ, বিন্নাডাঙ্গী, সুদক্ষিরা, জামির্তা, আজিমপুর ও চর দুর্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৭ হাজারেরও বেশি কৃষক গাজর চাষের সঙ্গে জড়িত। গ্রামগুলোর সবুজ শ্যামল মাঠ যেন হলুদ-কমলা রং দিয়ে সাজানো হয়েছে। গ্রামগুলোর দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠে যতদূর চোখ যায় শুধু গাজরের সমাহার। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখানকার গাজর যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলায়। বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে সিঙ্গাইরের গাজর।

লাভজনক হওয়ায় নিজেদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনে ব্যাপক হারে গাজর চাষের দিকে ঝুঁকছেন এই অঞ্চলের কৃষকেরা। কিন্তু বর্তমানে বীজ কীটনাশকের দাম অধিক হওয়ার কারণে লোকসানের আশঙ্কা করছেন গাজর চাষিরা।

কৃষি অফিস ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিঙ্গাইর উপজেলায় গাজর চাষ শুরু হয় প্রায় দুই দশক আগে। প্রথমদিকে শুধু জয়মন্টপ ইউনিয়নের দেউলী-দশানী ও ধল্লা ইউনিয়নের নয়াপাড়ায় স্বল্প পরিসরে এর চাষাবাদ শুরু হয়। সময়ের ব্যবধানে গাজর চাষ এখন সমগ্র সিঙ্গাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সীমিত আকারে রপ্তানিও হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

কয়েকজন কৃষক জানান, গেল বছর এই অঞ্চলের চাষিরা গাজর বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছে। এই বছর গাজরের বীজের অধিক দামের কারণে তাদের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন।

তবে কৃষকদের অভিযোগ, বর্তমানে গাজর বীজ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাদের। স্থানীয়ভাবে কোনও আমদানিকারক না থাকায় ডিলাররা তাদের কাছ থেকে বীজের দাম বেশি রাখছেন। সরকারিভাবে বীজের দাম নির্ধারণের দাবি করছেন কৃষকরা।

হারুলিয়া গ্রামের গাজর চাষি আসমত আলী জানান, প্রতিবারের মতো এ বছরও তিনি ৫৫ বিঘা জমিতে গাজরের আবাদ করেছেন। এতে তার বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। আর প্রতিবিঘা জমির গাজর বিক্রি করতে পারছেন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। কীটনাশক ও বীজের দাম বেশি থাকায় তাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তিনি জানান, এ বছর এক কেজি গাজরের বীজ কিনতে হয়েছে ২২ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকায়। অথচ আগের বছরগুলোতে গাজর বীজের দাম ছিল ১১ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা। বিগত বছরগুলোতে কীটনাশকের দাম ছিল ১১ শত টাকা বস্তা কিন্তু এই বছর কিনতে হয়েছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা বস্তা। তাই এই বছর ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার ক্ষতি আশঙ্কা করছেন তিনি।

তিনি আরো জানান, সিঙ্গাইর থেকে গাজরের কেয়ারিং খরচ বেশি। ঢাকায় গাজর নিয়ে যেতে শহীদ রফিক সেতুতে টোল দিতে হয়। প্রতি গাড়িতে যাওয়া আসা ৩শ টাকা। যা মাস শেষে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা টোল খরচে ব্যয় করতে হচ্ছে।

বেপারী আহমদ আলী ও হারুন মিয়া বলেন, বর্তমানে গাজরের দাম অনেক কম। আমাদের বর্তমানে প্রতি বিঘা গাজর কিনতে হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। লেবার খরচ আছে ১৫ হাজার টাকা। এক মণ গাজরের দাম ৫০০ টাকা। দেখা যাচ্ছে বর্তমানে প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।

সিঙ্গাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল বাশার বলেন, এই বছর সিঙ্গাইরে ৯৫০ হেক্টর জমিতে গাজরের আবাদ হয়েছে। বাংলাদেশে মোট গাজর আবাদের ৩৪ শতাংশ সিঙ্গাইর উপজেলায় আবাদ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাজরের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি কৃষক লাভবান হবেন। তবে কৃষকরা বলছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গাজরের বীজের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

(ঢাকা টাইমস/২০ফেব্রুয়ারি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :