১৪ বছরেও নির্মাণ হয়নি ‘ভাষা শহীদ স্মৃতি জাদুঘর’, পূরণ হয়নি ৮ দফা

১৪ বছরেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে নির্মাণ হয়নি ভাষা শহীদ স্মৃতি জাদুঘর। ২০১০ সালে ভাষা সৈনিকদের প্রকৃত ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে জাদুঘর নির্মাণ করা এবং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণসহ ৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।
ভাষা আন্দোলনের ৫৮ বছর পর ২০১০ সালে আদালতে এ সংক্রান্ত রিট করেছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সেই প্রেক্ষিতে আদালতের রায় আসে। কিন্তু আদালতের রায় ঘোষণার যুগ পার হলেও সেসব বাস্তবায়ন হয়নি।
২০২০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষ আইনজীবি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ.বি.এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (বাশার)।
সবশেষ তথ্য সম্পর্কে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের এক যুগেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও নির্মিত হয়নি ভাষা শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় ‘ভাষা শহীদ স্মৃতি জাদুঘর’। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার সংস্কৃতি ও পূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষকে আদালতে তলব করা হলেও সুরাহা হয়নি কিছুই।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাদুঘর নির্মাণ করা এবং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণসহ হাইকোর্টের আট দফা নির্দেশনা দেয়ার পরও এখনো অনেকটাই বাস্তবায়ন হয়নি। শহীদ মিনারের মর্যাদা রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেটুকু দায়িত্ব আছে, সেটা তারা কেন পালন করছে না, তা বোধগম্য হচ্ছে না।’
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের বাজেটের স্বল্পতা রয়েছে। আমরাতো আট দফা নির্দশনার অনেক কিছুই করেছি। আস্তে আস্তে আমরা জাদুঘর নির্মাণ কাজেও হাত দেব। আর হাইকোর্টের নিদেশনা তো আজ হোক কাল হোক মানতেই হবে ।’
আদালতের আট দফা নির্দেশনা: আদালতের রায়ে দেয়া আদেশে শহীদ মিনারের পাশে গ্রন্থাগারসহ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা এবং জাদুঘরে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসসমৃদ্ধ তথ্যপঞ্জিকা রাখা, ভাষা সংগ্রামীদের প্রকৃত তালিকা তৈরি ও প্রকাশ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ ও মর্যাদা রক্ষাসহ আটটি নির্দেশনা দেয়া হয়।
জীবিত ভাষা সৈনিকদের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো এবং সব রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান; কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্ধারিত এলাকায় সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা করা ও অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া, শহিদ মিনারের মূলবেদিতে কোনো ধরনের মিটিং, মিছিল, পদচারণা, আমরণ অনশন বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
তবে ফেব্রুয়ারি মাসে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলতে এবং ভাষা সৈনিকসহ জাতীয় ব্যক্তিত্বদের মরদেহে সর্বস্তরের জনগণের সম্মান প্রদর্শনের জন্য শহীদ মিনারের মূলবেদি ব্যবহার বা বিশেষ দিনে ফুল দেয়া এবং বেদির পাদদেশে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাতে কোনো নিষেধাজ্ঞা না রাখা, ভাষা শহীদদের সবাইকে মরণোত্তর জাতীয় পদক এবং জীবিতদের জাতীয় পদক দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
জীবিত ভাষা সৈনিকদের কেউ যদি সরকারের কাছে আবেদন করে, তাহলে তাদের ‘যথাযথ আর্থিক সাহায্য এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা’ করা, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ভাষা সৈনিকদের প্রকৃত তালিকা তৈরির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি এবং জেলায় জেলায় জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করবেন। কমিটির সদস্য হবেন- ভাষা সৈনিক, কবি, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ ও মুক্তিযোদ্ধারা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ ও সংরক্ষণ করা।
নির্দেশনার পর কয়েক দফা সময় নিয়েও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ওই রায় পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না করায় ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংস্কৃতি ও পূর্ত সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। ওই সময় সংস্কৃতি ও পূর্ত সচিবকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। পরে ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি তারা আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেন।
তখন আদালত তাদের ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে গ্রন্থাগারসহ ভাষা শহীদ জাদুঘর স্থাপন এবং ভাষা সংগ্রামীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নসহ রায় বাস্তবায়নে নির্দেশ দেন। কিন্তু তা এরপরও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি জাদুঘর নির্মাণের প্রাথমিক খসড়া কাজও হয়নি এখনো।
(ঢাকাটাইমস/২২ফেব্রুয়ারি/এএম/এসআইএস)

মন্তব্য করুন