পুরুষের ফার্টিলিটি বাড়ায় বেদানা! বশে থাকে রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস

বাংলাদেশের অতি পরিচিত একটি ফল বেদানা। এতে রয়েছে বহু উপকারী পুষ্টিগুণ, যা শরীরের খেয়াল রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে হার্টের যত্ন নিতে চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারেন বেদানার উপর। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ বেদানা ধমনিতে রক্ত চলাচল সচল রাখতে সাহায্য করে।

বেদানা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। সেই রক্ত যাতে জমাট বেঁধে না যায়, সেই দিকেও সমান নজর বেদানার। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই চিকিৎসকরা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলেন। বেদানা সেই কাজটি করে। প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস করে বেদানার রস খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমবে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।

প্রাচীনকাল থেকেই চিকিৎসা ও আর্য়ুবেদ শাস্ত্রে ওষুধ হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছে বেদানার দানাকে। রোগ নিরাময়ে গবেষণায় পরীক্ষিত বেদানা অতুলনীয়। বেদানা ফল আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় পথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নিয়মিত বেদানা খেলে শরীরে রক্তের অভাব পূরণ হয়। শুধু তাই নয়, বেদানার ফলে স্মৃতিশক্তি, শারীরিক ক্ষমতা বাড়ে। স্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নতি তো বটেই, ত্বকের জন্য উপকারী বেদানা।

বেদানায় বিউটেলিক এসিড, আরসোলিক এসিড এবং কিছু আ্যলকালীয় দ্রব্য যেমন- সিডোপেরেটাইরিন, পেপরেটাইরিন, আইসোপেরেটাইরিন, মিথাইলপেরেটাইরিন প্রভৃতি মূল উপাদান থাকায় বিভিন্ন রোগ উপশমে ব্যবহার করা হয়।

রূপকথার গল্পেও ডালিম বা বেদানাকে ‘যৌন উদ্দীপক’ হিসেবেই ব্যবহার করা হয়েছে। বেদানার মধ্যে এমন কিছু গুণ রয়েছে যা পুরুষদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ানো থেকে শুরু করে লিবিডো বৃদ্ধি এবং ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে। এছাড়াও লাল রঙের বেদানায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা পুরুষ ও মহিলার যৌন জীবনকেও প্রভাবিত করে। শরীরের সেক্স হরমোনগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে এই বেদানার গুণেই।

বলা হয় রেড ওয়াইন এবং গ্রিন টি-এর থেকে প্রায় তিন গুণ বেশি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে বেদানাতে। যে কারণে তা শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়ায়, যৌন ইচ্ছা চাগিয়ে তোলে এবং মন-মেজাজও ফুরফুরে রাখে।

বেদানার মধ্যে থাকা এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যে কোনো প্রদাহ জনিত সমস্যা থেকেও আরাম দেয়। সেই সঙ্গে হৃদরোগ, ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতেও বেদানার জুড়ি মেলা ভার। শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে বেদানা। তাই যৌন ক্ষমতা বাড়াতে ছেলেরা যে কোনো উপায়ে খেতে পারেন এই ফল।

স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গের কুইন মার্গারেট ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব পুরুষদের টানা দুই সপ্তাহ ধরে একগ্লাস করে বেদানার রস খাওয়ানো হয়েছে তাদের টেস্টোস্টেরন গড়ে ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পুরুষদের শরীরে প্রধান সেক্স হরমোন এই টেস্টোস্টেরন। এই হরমোনের ক্ষরণ কম হলে ছেলেদের একাধিক সমস্যা দেখা দেয়।

একই গবেষণায় বলা হয়েছে, বেদানা ইরেক্টাইল ডিসফাংশন অর্থাৎ পুরুষত্বহীনতারও চিকিৎসা করতে পারে। মানসিক চাপ, উদ্বেগ, আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং ভয় ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের প্রধান কারণ। এই গবেষণায় দেখানো হয়েছে, বেদানা মানসিক উদ্বেগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে পৌরুষত্ব রক্ষা করে।

শরীরের প্রতিটি অঙ্গের মতো নিম্নাঙ্গেও রক্ত ​​চলাচল ভালো হওয়া জরুরি। যদি উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্ত ​​প্রবাহ ব্যাহত হয় এবং ধমনীর মধ্যে তা আটকে থাকে তাহলে তা কিন্তু হতে পারে ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের কারণ। কিছু গবেষণায় এরকমও দেখা গেছে, বেদানা সিস্টোলিক রক্তচাপ কমাতে পারে। ২০০৭ সালের একটি গবেষণাও বলছে, নিয়ম করে খাঁটি বেদানার রস খেলে শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়ে এবং মানেও তা ভালো হয়।

বেদানা ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ সমৃদ্ধ। তাই রক্তনালীগুলো পরিষ্কার করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে বেদানা। হৃদরোগ ইরেক্টাইল ডিসফাংশন এবং যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বেদানার রস টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অ্যানিমিয়া রোগীদের জন্য খুবই উপকারী বেদানার রস। কারণ এই ফলটির শরীরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, যা লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে রক্তস্বল্পতার মতো সমস্যা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কারণেই ছোট থেকেই মেয়েদের নিয়মিত বেদানা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

নিয়মিত বেদানার রস খেলে আপনার জীবনকালে কখনও ডায়াবেটিস শরীরে বাসা বাঁধতে পারবে না। কারণ এই ফলটি খাওয়া মাত্র শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে, রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মতো রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।

বেদানা ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবার পুরুষের জন্য ভালো। এমনকি ফার্টিলিটি বাড়াতে পারে। তাই পাতে রাখুন প্রতিদিন। লাল রঙের বেদানা খেয়েই পুরুষের স্বাস্থ্য হয়ে যেতে পারে রঙিন।

(ঢাকাটাইমস/০১মার্চ/এজে)