ভাগিনার প্রেমের টানে ঘরছাড়া মামি, বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা মামার

আপন ভাগ্নের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে ঘর ছেড়েছেন মামি। সেই দুঃখে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন মামা সেলিম মিয়া (৩৫)। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের জাফরনগর গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।
সেলিম মিয়া উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের জাফরনগর ডেংহাটি গ্রামের নুরু মিয়ার ছেলে।
তার আপন ভাগ্নে রাকিব (২২) উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের জগমোহনপুর গ্রামের মৃত আওয়াল মিয়ার ছেলে। সেলিম মিয়ার স্ত্রী রিনা বেগম (২৭) শ্রীনগর ইউনিয়নের জাফরনগর ওজি বাড়ির ইনু মিয়ার মেয়ে।
পারিবারিক ও স্থানীয় সু্ত্রে জানা যায়, ১৫ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে সেলিম মিয়ার সঙ্গে রিনা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই পরিবার নিয়ে সেলিম মিয়া ঢাকায় বসবাস করতেন । তিনি ঢাকা হাইকোর্ট এলাকায় ঝালমুড়ি ও চা বিক্রি করতেন । সেখানে তার একাধিক দোকান রয়েছে। তাদের সংসার জীবনে কোনো সন্তান ছিল না। মীম নামে পালিত একটি কন্যা সন্তানকে সাড়ে তিন বছর যাবত নিজ সন্তান হিসেবেই লালন পালন করছেন। এরমধ্যই গত তিন মাস আগে তাদের সংসারে রামিমা নামের একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
বছর খানেক পূর্বে আপন ভাগ্নে রাকিবকে তার মামা সেলিম মিয়া নিজের ব্যবসায় সহযোগিতা করার জন্য ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তারা একই বাসায় বসবাস করতেন। সেই সুবাদে মামী রিনার সঙ্গে ভাগ্নে রাকিবের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে সেলিম মিয়া বিষয়টি টের পেয়ে যান। কিন্তু সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সবকিছু মেনে নেয় সেলিম মিয়া। তার স্ত্রীও ভালো হয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এভাবে বেশ কিছুদিন চলে যায়। কয়েক মাস পর হঠাৎ করে ভাগ্নের সঙ্গে তার স্ত্রী পালিয়ে যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. তারা মিয়া জানান, রবিবার সকালে সেলিম মিয়া তার স্ত্রী রিনা বেগম ও তার আপন ভাগ্নে রাকিব মিয়ার পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ দেয় আমার কাছে। পরে দুপুরে আমি সেলিম মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে তার স্ত্রীর খোঁজে ভাগ্নে রাকিবের বাড়িতে যেই। সেখানে রাকিব ও রিনার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি রিনা বেগম সেলিমের সংসার করবে না। এসময় রিনা বেগম তার স্বামীকে ওই বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। পরে আমরা বাড়িতে চলে আসি। কিন্তু বাড়ি ফিরে সেলিম মিয়া স্ত্রী ফিরে না আসার কষ্টে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মামী ভাগ্নের প্রেমের সম্পর্কটি সমাজে একটি কলঙ্কজনক ঘটনা বলে জানান এ জনপ্রতিনিধি।
এ বিষয়ে রাকিবের বড় ভাবী তানিয়া আক্তার বলেন, গত ১৭ দিন আগে আমার দেবর রাকিব তার মামিকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। রবিবার (১০ মার্চ) সকালে বাড়িতে আসে। পরে আমরা জানতে পারি মামিকে রাকিব বিয়ে করেছে। এদিকে রাকিবের মামা তার স্ত্রীকে নিতে এসেছিল কিন্তু রিনা বেগম তার সংসার করবে না বলে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বিকালের পর থেকে রাকিব, রিনা ও আমার শাশুড়ি বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। আমার সঙ্গে তাদের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
রিনার মা রিজিয়া বেগম বলেন, সেলিম আমার আপন বোনের ছেলে। সেলিমের কাছে আমি আমার মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। আমি চাই আমার মেয়ে সেলিমের সংসার করুক। আমি গ্রামের ৫ জনকে সঙ্গে নিয়ে আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে চাই। আমি আমার মেয়ের অন্য কোনো সংসার মেনে নিবো না।
এ বিষয়ে সেলিম মিয়া বলেন, আমি নিজের সন্তানের মত রাকিবকে আদর করতাম। সে আমার স্ত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে। রাকিব আমার সংসারটা ভেঙ্গে দিল। আমি আমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে চাই। আমার ফুটফুটে দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। আমি রিনাকে না পেলে বাচঁবো না। আমি রাকিবের বিচার চাই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা.মাহফুজা আক্তার রিমি জানান, সেলিম মিয়া নাম বিষপান করা একজন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে তাৎক্ষণিক তার পাকস্থলী হতে বিষক্রিয়া সরানো হয়। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি ।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সফিকুল ইসলাম জানান, এই ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(ঢাকাটাইমস/১১মার্চ/পিএস)

মন্তব্য করুন