ফেনীতে অনাবাদি জমিতে শতকোটি টাকার তরমুজ চাষ

ফেনী প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৬:৪৯

ফেনীর সোনাগাজীর বিস্তীর্ণ চরে আবাদ হচ্ছে উৎকৃষ্ট মানের সুমিষ্ট তরমুজ। আবহাওয়া এবং বাজার অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে চাষকৃত ৫৭৬ হেক্টর জমি থেকে ১০৭ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির আশা করছেন কৃষক এবং কৃষি বিভাগ।

ফেনীর সোনাগাজী উপকূলীয় চরাঞ্চলের তরমুজ আকারে বড় এবং সুস্বাদু হওয়ায় বাজারেও রয়েছে বেশ চাহিদা। ফলনের আশায় মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে চাষিদের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে শত কোটি টাকার বেশি।

বছরের এ সময়ে তরমুজ পুরো এলাকার অর্থনীতিতে রাখে ইতিবাচক ভূমিকা। তরমুজ চাষে অর্থনৈতিক পরিবর্তন এসেছে অনেকের। এমনটা মনে করছেন স্থানীয়রা। চরের এসব তরমুজ কিনতে অনেকেই আসছে শহর থেকে।

কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, একসময় এসব জমি রবি মৌসুমে অনাবাদি ছিল। ২০১৭ সালে নোয়াখালী থেকে আসা এক কৃষক এই উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নে পরীক্ষামূলক তরমুজ চাষ শুরু করে অভাবনীয় সাফল্য পান। তার সফলতা দেখে ২০১৯ সালে ৮-১০ জন কৃষক তাদের জমিতে রবি মৌসুমে তরমুজ চাষ করেন। এভাবে এই উপজেলায় গত তিন বছরেই ৪৭১ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের পরিমাণ বেড়েছে। উপকূলীয় চরাঞ্চলের মাটি এবং আবহাওয়া তরমুজের জন্য বেশ উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে আবাদ।

সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ৫৭৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজ। ২০২০ সালে ১০৫ হেক্টর জমিতে ২০২১ সালে ৩১৭ হেক্টর, ২০২২ সালে ৩৪৫ হেক্টর এবং চলতি মৌসুমে ৫৭৬ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে। গত বছর শিলাবৃষ্টি এবং অতিবৃষ্টির কারণে কিছু পরিমাণ তরমুজ নষ্ট হওয়ার পরেও ৫০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি করা সম্ভব হয়। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২২৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গালিংক জাত, ১৪৬ হেক্টর জমিতে গৌরী জাত, ৫৫ হেক্টর ব্ল্যাক বেরী জাত, ৮৪ হেক্টর ভিক্টর সুপার জাত, ৫৬ হেক্টর ওপেন সুগার এবং ১০ হেক্টর জমিতে অন্যান্য জাতের তরমুজ চাষ হয়েছে।

দাগনভূঞা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আবদুল্যাহ আল মারুফ বলেন, তরমুজ চাষে যেমন লাভের সম্ভাবনা বেশি, তেমনি রয়েছে ঝুঁকিও। সঠিক পদ্ধতি অনুযায়ী চাষাবাদ না করলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে চাষি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে।

সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়ন, চরচান্দিয়া, চরদরবেশ ইউনিয়ন, সোনাগাজী সদর ইউনিয়ন, আমিরাবাদ ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের ফসলের মাঠে চলছে তরমুজ আবাদের মহাযজ্ঞ। চাষিদের ব্যস্ততায় খেত ঘিরে বিরাজ করছে প্রাণচাঞ্চল্য। অনেক জমিতে গাছে এসেছে ফুল-ফল।

কৃষকরা বলছেন, ধান ও অন্য ফসলের চাইতে তরমুজে লাভ বেশি। সোনাগাজীর মাটিও তরমুজের জন্য ভালো। সে কারণেই তরমুজ আবাদে ঝুঁকেছেন তারা।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্রনাথ বলেন, ফেনী জেলার মধ্যে শুধু সোনাগাজী উপজেলায় চরাঞ্চলে বিস্তীর্ণ ভূমি রয়েছে। এখানকার মাটি এবং আবহাওয়া তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বীজ রোপণ করার পর তিন মাসের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। পরিচর্যা খরচের তুলনায় আয় বেশি হওয়ায় এখন মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন।

আবদুল আজিজ নামে এক কৃষক জানান, তরমুজ চাষাবাদ, ফলন উঠানো ও পরিবহনকে ঘিরে এলাকার অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠে। বিশাল জনগোষ্ঠী এটার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে প্রতিবছর সোনাগাজীর চরসহ ফেনীর ছাগলনাইয়ার ফেনী নদীর চরের ঘোপাল, শুভপুর, ফুলগাজী, পরশুরাম ও দাগনভূঞাঁয় বাড়ছে তরমুজের আবাদ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপপরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, তরমুজ ফেনীর একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল হয়ে উঠছে। প্রতিবছর তরমুজের আবাদ বাড়ছে। ফলটি চাষের জন্য মাটির গুণগত মান ভালো হওয়ায় ফলনও ভালো মিলছে।

কৃষক এবং কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তরমুজ চাষে কানি (৩৯ দশমিক ৬৬৯ শতক) প্রতি সর্বনিম্ন খরচ এক লাখ টাকা এবং বিক্রি আড়াই থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। সেই হিসাবে এবার ৫৭৬ হেক্টর জমিতে ১০৭ কোটি ৪৫ লাখ ৩৫ হাজার ৪৬৫ টাকার তরমুজ বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তারা। এ বছর আবাদকৃত জমিতে ৩০ হাজার ২০৯ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষক পর্যায় থেকে পাইকারি বাজারমূল্য কেজিপ্রতি ৩০-৩৫ টাকা হলেও শত কোটি টাকার বেশি বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলায় এবার তরমুজ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে ৩ হাজার ৮৫০ জন কৃষক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আল-আমিন শেখ বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তরমুজ নষ্ট হয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবার চাষ বেড়েছে। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা সহজেই অর্জিত হবে।

এ ব্যাপারে সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুরুতে শুধু উপজেলার চরদরবেশ এলাকায় তরমুজ চাষ হত। তবে কম সময়ে উৎপাদন ও লাভবান হওয়ায় অনেকে এখন তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন। বর্তমানে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এবং পৌরসভায় একযোগে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের তরমুজ। কৃষি বিভাগ সবসময় চাষিদের পরামর্শ দিয়ে পাশে রয়েছে।

(ঢাকা টাইমস/২৯মার্চ/প্রতিনিধি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :