ইতিবাচক জীবনদৃষ্টির সন্ধানে

রাশনা রশীদ
| আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৫৮ | প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৯

চারপাশে প্রতিনিয়ত নৈরাশ্যবাদীদের কোলাহল দেখে দেখে সাধক কবি রামপ্রসাদ সেনের শ্যামাসংগীতের অমূল্য চরণ ‘মন রে কৃষিকাজ জানো না / এমন মানবজনম রইলো পতিত / আবাদ করলে ফলতো সোনা’ স্মরণে না এসে পারে না অকারণ পুলকের ছিদ্রান্বেষণ অভ্যাস বাদ দিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিতে আলোর প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে সময়কে কাজে লাগালেই প্রত্যাশিত ফল না পাবার কোনো যৌক্তিকতা দেখি না নেতিবাচক মানসিকতা মনের অসুখ বাড়ায়, সম্ভাবনাময় মানবজীবনকে বড়োই জটিল করে তোলে প্রাজ্ঞজনেরা যথার্থই বলে থাকেন, একটি ছোট্ট ছিদ্র যেমন বড়ো একটি জাহাজকে ডুবিয়ে দিতে পারে ঠিক তেমনি জীবনদৃষ্টিতে যদি একটু ভুল থাকে তাহলে সব থাকার পরেও একজন মানুষের জীবন অর্থহীন হয়ে যেতে পারে সাময়িক বিষণ্নতা থেকেও আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে সমাজের আত্মহত্যার দুঃসংবাদগুলো বিভিন্ন গণমাধ্যমে পড়ে আমরা মর্মাহত হই কিন্তু মনের অসুখ থেকে পরিত্রাণের প্রচেষ্টায় সক্রিয় হই না

‘আত্মহত্যা নয়, আত্মবিশ্বাসে বাঁচা’র প্রবল ইচ্ছাশক্তি একদিনে গড়ে ওঠে না সেজন্য চাই আন্তরিক নিরলস জীবনচর্চা মনোবিদগণ তাই বলে থাকেন- দৈনন্দিন জীবনের অনেক ছোটোখাটো বিষয় থেকে শুরু করে যে-কোনো বড়ো সমস্যার মোড় আমরা ঘুরিয়ে দিতে পারি যদি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা সঠিক হয়, ইতিবাচক হয় আসলে ঘটনা যাই ঘটুক আমাদের দেখার ওপর নির্ভর করছে ঘটনাটি আমাকে সুখী করবে, না কি অসুখী করবে, আনন্দ দেবে না কি দুঃখ দেবে জীবনদৃষ্টি সঠিক হলে আপনি রক্ষা পাবেন হোঁচট খাওয়া থেকে, বেঁচে যাবেন ভুল করা থেকে মনে প্রশান্তি থাকবে, সুখ থাকবে, মোটামুটি ভালো থেকেও বলতে পারবেন অনেক ভালো আছি সহজ স্বতঃস্ফূর্ততায় আপনি এগিয়ে যাবেন সফল জীবনের পথে

জীবন আসলেই খুব সহজ কিন্তু এটিকে আমরা অযথাই জটিল করে তুলি কোন সমস্যা আমার জন্য সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে না কি সংকটে রূপ নেবে তা নির্ভর করে আমাদেরই ওপর পণ্ডিতগণ বলেন, জীবনের সৌন্দর্য নির্ভর করে সঠিক জীবনদৃষ্টির উপর জীবনদৃষ্টি বা দৃষ্টিভঙ্গি কথাটার মানে হচ্ছে জীবনকে আমি কীভাবে দেখছি জীবন সম্পর্কে আমার সিদ্ধান্ত কেমন হওয়া উচিত- এ বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট অভিমত আর জীবনকে সুন্দর করার জন্য যা প্রয়োজন, তা হলো সঠিক জীবনদৃষ্টি বাকি সবকিছু তখন এমনিই চলে আসে কারণ চাবিটা যদি ঠিক থাকে আপনি তালাটা খুলতে পারবেন তা না হলে যত চাবিই থাকুক আপনার কাছে, এটা যদি ঐ তালার চাবি না হয়, তাহলে সেই তালা খোলা যাবে না জীবনের তালা, জীবনের বন্ধ দরজা খোলার জন্য যে সঠিক চাবিটির দরকার, সেই চাবিটি অর্জন করার জন্য প্রয়োজন সঠিক জীবনদৃষ্টি আসলে সকল বাস্তবতার নির্মাতা মস্তিষ্ককে যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজন সুসংহত মানসিক প্রস্তুতি আর মানসিক প্রস্তুতির ভিত্তি হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি, নিয়ত বা অভিপ্রায় কারণ মন পরিচালিত হয় দৃষ্টিভঙ্গি বা নিয়ত দ্বারা আর মস্তিষ্ককে চালায় মন মানসিক সুস্থতার জন্য, আনন্দময় সুন্দর জীবনের জন্য মন ও মানসিকতাকেন্দ্রিক জীবনদৃষ্টির প্রতি সবিশেষ দৃষ্টিপাত দিয়ে নানা জিজ্ঞাসার জবাবের সচেষ্ট প্রয়াস থাকবে এখানে

নেতিবাচক চিন্তা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা

মানুষের জীবন ভালো-মন্দ, সহজ-কঠিন, ইতি আর নেতির বিচিত্র সমাহার জীবনে কখনো ভালো সময় আসবে, কখনো মন্দ সময় আসবে- এটাই জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ চারপাশে ইতিবাচক চিন্তা বা বিষয়ের থেকে নেতিবাচক বিষয়গুলো অনেক বেশি প্রকট অনেক বেশি নেতিবাচকতা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক পজিটিভ জীবন পার করা থেকে দূরে ঠেলে দেয় আপনি যত চেষ্টা করবেন, ততই আপনার ভালো ভালো চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ইতিবাচক ও নেতিবাচক মনোভাব মানুষের সার্বিক জীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে ইতিবাচক মনোভাব মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক জীবনের সবস্তরে ইতিবাচক ফল দিতে থাকে যেমন কখনও কখনও সর্বোত্তম ওষুধ এবং স্বাস্থ্যসেবা সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত নয় নিজের মন প্রফুল্ল রাখতে বা অসুস্থতার সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকার ইতিবাচক চিন্তাভাবনা অনুশীলনের বিকল্প নেই সাধারণত কোনো বিষয় বা ঘটনাকে দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করা যেতে পারে এর একটি হলো ইতিবাচক এবং অপরটি হলো নেতিবাচক আমাদের চারপাশে থাকা বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে দেখে থাকি, কোনো একটি ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তারা প্রথমেই এর নেতিবাচক আলোচনা তুলে ধরেন অথচ সেই বিষয়টা নিয়ে আরো যাচাই-বাছাই এবং চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন ছিল যখন অধিকাংশ মানুষের চিন্তা-চেতনা নেতিবাচক হয়ে যায়, তখন একটি সমাজ কিংবা দেশের মধ্যেও এর একটা প্রভাব পড়ে যায় কোনো বিষয়ে আশাহত হওয়া কিংবা নেতিবাচক চিন্তা করার আগে যদি আমরা একটু ঠান্ডা মাথায় বিষয়টা নিয়ে ভাবতে পারি, তাহলে হয়ত এই সমস্যা থেকে উত্তরণ পাওয়া সম্ভব বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক একটি লেখায় বলেছেন- ‘শূন্যবাদী ও নৈরাশ্যবাদীদের জীবনদৃষ্টি একপেশে সবদিকে দৃষ্টি প্রসারিত করলে বোঝা যায়, হাজার সমস্যার মধ্যেও জীবন ও জগৎ মানুষের জন্য অন্তহীন সম্ভাবনায় পূর্ণ’ একজন মানুষের ইতিবাচক শক্তি তার জীবনকে করে তোলে সুন্দর ও অর্থবহ এবং সফলতা লাভের জন্য করে উচ্চাকাক্সক্ষী, উৎসাহী এবং আত্মনিভর্রশীল সেটা হলেই সফলতা আসবে নিশ্চিত ইতিবাচকতা সফলতার মেরুদণ্ড ইতিবাচক মনমানসিকতার লোক খুবই আত্মবিশ্বাসী হয় চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে যত বাধাই আসুক না কেন, কেউ তাদের দমাতে পারে না সেটা যত কষ্টই হোক ইতিবাচক শক্তি তাকে ঠিকই যথাসময়ে গন্তব্যস্থানে নিয়ে যায়

ইচ্ছাশক্তিকে দৃঢ় করা

দুঃখ ছাড়া কোনো জীবন হয় না প্রতিটি মানুষের জীবনেই কিছু অপূর্ণতা থাকে অধিকাংশ মানুষকে বাইরে থেকে হাসি-খুশি মনে হলেও শতভাগ সুখি কেউ নয় একেকজন মানুষের রয়েছে একেক রকম না-পাওয়া এই না পাওয়াগুলোকে ভুলে, আমরা কীভাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারবো সেই চেষ্টা করতে হবে মন ভালো রাখার জন্য সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে আমাদের মন যত বেশি ভালো থাকবে, আমরা মানসিকভাবে হবো ততটাই শক্তিশালী মানসিক শক্তি বাড়ানোর জন্য আমাদের প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকা ভীষণ জরুরি বলেই আমরা ইতিবাচক চিন্তায় বিশ্বাস করি শিক্ষার্থীদেরকে ইতিবাচক চিন্তাধারায় নিজেকে সর্বক্ষণ সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট থাকাটা জরুরি তাদেরকে নিজের ক্ষমতার ওপর গভীর বিশ্বাস ও উচ্চাকাক্সক্ষা নিয়ে দিনের কাজ শুরু করতে হবে সেটা হলে তা প্রতিফলিত হবে তাদের চেহারায়, হাসিতে, মানুষের সঙ্গে ভাববিনিময়ে এবং প্রতিদিন যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় সেগুলোতে এসব বিষয় মোকাবিলায় ব্যক্তির ইতিবাচক মানসিকতা কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, আশাবাদ, প্রত্যাশা, উদ্যমতা জীবনের সবকিছুই সহজ করে তোলে যখন নিজ কর্মক্ষেত্র, ব্যবসায় বা অন্য কোনো ব্যাপারে কর্মদক্ষতার কমতি দেখবো তখন ইতিবাচক মনোভাব আমাদের জন্য ‘সুপারচার্জ’-এর মতো কাজ করবে এটা কখনো স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে ওঠে না এর জন্য প্রয়োজন কিছুটা চেষ্টা ও সদিচ্ছার মিলিত প্রচেষ্টা তবে কিছু উপায় আছে, যেগুলো অনুসরণ করলে আমরা যে পরিস্থিতিতে যেখানেই থাকি না কেন সর্বদা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সক্ষম হবো

আশাবাদী হয়ে ওঠা

প্রতিটি ভালো বা মন্দ অনুকূল বা প্রতিকূল পরিস্থিতি সহজ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করাই ইতিবাচকতা বা প্রো-অ্যাক্টিভিটি আমাদের সাথে যা ঘটছে তা সবসময় আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না কিন্তু যা ঘটছে তার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি গ্লাসে অর্ধেক পানি থাকলে আপনি এটিকে কীভাবে দেখেন? অর্ধেক খালি নাকি অর্ধেক ভর্তি?

যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা বলছে- আশাবাদী ব্যক্তিরা হতাশাবাদীদের চেয়ে অনেক বেশি দিন বাঁচেন এই তত্ত্ব মতে, আশাবাদীরা হয়তো নিজেদের আবেগকে অনেক সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন- যা তাদেরকে মানসিক চাপের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দূরে রাখে মার্কিন গবেষকরা বলছেন যে- হতাশাবাদী ব্যক্তিরা যদি নিজেদের এমন ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে পারেন যেখানে সব ধরনের সমস্যা দূর হয়ে যাবে, এমন দৃষ্টিভঙ্গিও তাদের জন্য উপকারী হতে পারে মানুষ কীভাবে আশাবাদী হয় এবং হতাশাবাদীরা জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক থাকতে কী কী করতে পারেন সে বিষয়ে কিছু উপায় সম্পর্কে জানারও চেষ্টা করবো আমরা

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :