পানিশূন্য ইছামতী, হুমকিতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সায়েম খান, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ), ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:০৪

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ইছামতী নদী বর্তমানে যৌবন হারানো মরা খালে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের প্রমত্তা ইছামতী নাব্যতা হারিয়ে কৃষি জমিতে রূপ নিয়েছে। যার বিরুপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর।

মরা নদীতে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করছেন নদী তীরবর্তী কৃষকরা। বছর তিনেক আগে নদীটি খনন করা হলেও তা তেমন কোনো কাজে আসেনি। তিন বছর যেতে না যেতেই ইছামতীর প্রবেশ পথ থেকে নদীর প্রায় চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্য আবার ভরাট হয়ে গেছে। নদী খননের সময় খননকৃত মাটি নদীর তীর ঘেঁষে রাখায় বৃষ্টিতে সেই মাটি পুনরায় নদীতে এসে ভরাট হয়ে গেছে বলে দাবি স্থানীয়দের। নদীটি পুনঃখনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি এলাকাবাসীর।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মূলত বর্ষা মৌসুমে এক-দুই মাস ইছামতীতে পানি দেখা গেলেও বর্ষা মৌসুম শেষ হতে না হতেই আবার নদীটি তার আপন রূপ হারিয়ে শুকিয়ে যায়। ফলে নদী তীরবর্তী কৃষকরা প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষ করেছেন।

অথচ এই নদীতে নব্বই দশকের মাঝামাঝিতেও বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে ছিল অথৈ পানি। ছিল দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন রকমের মাছ। এছাড়া উপজেলার সর্ববৃহৎ ঝিটকার হাটে বিভিন্ন জেলা থেকে নৌপথে মালামাল আনা-নেওয়া হতো। নদীর নাব্যতা সংকটে এখন আর ব্যবসায়ীরা নৌপথে মালামাল আনা-নেওয়া করতে পারে না।

এই নদীর সঙ্গে সংযোগ একাধিক খাল স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়ায় বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করতে না পারায় কৃষি জমির উর্বরতাও হ্রাস পেয়েছে বলে দাবি কৃষকদের। নদীতে আগের মতো পানি না থাকায় এ অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মিঠা পানির মাছেরও অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে নদীকেন্দ্রিক জেলেরাও বেকার হয়ে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন বলে জানান জেলেরা।

গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হতে না হতেই নদী শুকিয়ে যায়। এতে করে অনেক স্থানে নদীর তলায় চিপচিপে পানিতে বোরো ধান চাষ করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় নদী হয়ে পড়েছে পানিশূন্য হাহাকার।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইছামতী নদীটি পদ্মা-যুমনা অববাহিকায় জেলার দৌলতপুর, ঘিওর ও শিবালয় উপজেলা হয়ে হরিরামপুরের বাহাদুরপুর এলাকায় এসে পদ্মায় মিলিত হয়েছে। বাহাদুরপুর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্য উপজেলার ঝিটকা বাজার সংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত পানিশূন্য হয়ে নাব্যতা সংকটে একেবারে নদীর তলা শুকিয়ে গেছে।

এভাবে চলতে থাকলে এক সময় হয়েতো নদীর প্রাণ হারিয়ে মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। তাই নদীর অস্তিত্ব সংকট কাটিয়ে খনন ও সংস্কার করা জরুরি। নদীর তলদেশে পানি থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকরাও সেচ পদ্ধতিতে পানি সংকটে পড়েন বলে দাবি তাদের।

তবে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ৬৪ জেলার অভ্যন্তরে ছোট নদী, খাল, জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় ২০২০/২১ অর্থবছরে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় দৌলতপুর থেকে হরিরামপুরের বাহাদুরপুর পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ইছামতী নদী পুনঃখনন করা হয়।

কৃষির ওপর নাব্যতা সংকটের প্রভাব প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, ‘নাব্যতা সংকট এখন সারাদেশেই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গ্রামীণ জনপদ উন্নয়নে নদীর সঙ্গে সংযোগ অনেক খাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে যদি ধারাবাহিক নাব্যতা সংকট দেখা যায়, তাহলে কৃষির ওপর একটা প্রভাব পড়বে। তাই যত দ্রুত সম্ভব নাব্যতা সংকট রোধে কাজ করা প্রয়োজন।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দীন জানান, তিন বছর আগে আমরা ইছামতী নদী খনন করেছিলাম। এখন আবার নদীর প্রবেশমুখ ভরাট হয়ে গেছে। এ জন্য নদীর প্রবেশমুখ খননের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অনুমোদন পেলেই আমরা আবার যতটুকু প্রয়োজন খননের কাজ শুরু করব।

(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

সিদ্ধিরগঞ্জে বস্তাবন্দি স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি

মফস্বল সাংবাদিকেদের ওয়েজ বোর্ডের আওতার আনার দাবি

আ.লীগ বিভ্রান্তিকর কথা বলে নিজেদের ভেতরকার অস্থিরতা আড়াল করছে: প্রিন্স

‘ওরাল ক্যান্সার’ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরামর্শ মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর

‘মনে হয় আত্মহত্যা করি, তাতে যদি বেঁচে যাই!’

ফেলোশিপে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন সাতক্ষীরা মেডিকেলের ডা. মাহমুদুল হাসান

গাজীপুরে দুর্ঘটনা: দুই ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

শ্রীপুরে তীব্র দাবদাহে ঝরে পড়ছে লিচু

চেয়ারম্যানের উঠান বৈঠকে ফাঁকা গুলি ছোড়ার অভিযোগ বদির বিরুদ্ধে

ট্রাকের পেছনে মুরগিবোঝাই পিকআপের ধাক্কা, নিহত ২

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :