গাজা যুদ্ধের ২০০তম দিন: ইসরায়েলি বর্বরতার শেষ কোথায়? 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৫৯| আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৩২
অ- অ+

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মারাত্মক হামলার পর গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল তাদের নৃশংস সামরিক অভিযান শুরু করে। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। ছয় মাস ধরে ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলায় ৩৪ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ও ৭৭ হাজার ফিলিস্তিনি আহতের পাশাপাশি গাজার হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে, যা গত ৭৫ বছরে ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক সংঘর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। মঙ্গলবার এই ইসরায়েলি বর্বরতা ২০০তম দিনে পৌঁছেছে, তবে এখনো এই যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় গাজায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো-

৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত

মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুসারে, ইসরায়েলি হামলায় গত ৭ অক্টোবর থেকে হাসপাতালে আনা হয়েছে এমন নিহত ফিলিস্তিনিদের মোট সংখ্যা ৩৪ হাজার ১৮৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার শিশু এবং ৯ হাজার নারী রয়েছেন।

এছাড়া আহত হয়েছে ৮ হাজারের বেশি শিশু এবং ৬ হাজারের বেশি নারীসহ কমপক্ষে ৭৭ হাজার ৮৪ জন ফিলিস্তিনি। তাদের মধ্যে প্রায় ১১ হাজার মানুষের জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, অনেক ফিলিস্তিনি এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। ইসরায়েলের অবিরত বিমান ও স্থল হামলার কারণে অনেক জায়গায় অ্যাম্বুলেন্সগুলো পৌঁছাতে না পারায় এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে মরদেহ রয়েছে বলেও জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সোমবার জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, গাজায় প্রতি ১০ মিনিটে একটি শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে।

লন্ডনভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা এয়ারওয়ারের (যুদ্ধের সময় বিমান বোমা হামলায় হতাহতের ঘটনা রেকর্ড করে) পরিচালক, ‘আমরা গাজায় গত ২০০ দিনে একটি অভূতপূর্ব মাত্রায় মৃত্যু দেখেছি, যা ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসআইএস-এর বিরুদ্ধে আট বছরের মার্কিন ও সহযোগী অভিযানের তুলনায় অনেক বেশি।’

মার্চের শেষের দিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টার ফ্রান্সেসকা আলবানিজ বলেন, ইসরায়েল জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশনের তালিকাভুক্ত পাঁচটি আইনের মধ্যে তিনটি লঙ্ঘন করেছে বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।

৬২ শতাংশ বাড়িঘর ও স্থাপনা ধ্বংস

ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর অবিরাম বোমাবর্ষণে গাজাজুড়ে বহু আবাসিক এলাকা ধ্বংস ও বিধ্বস্ত হয়েছে। গাজার মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় কমপক্ষে ৭৫ হাজার টন বিস্ফোরক ফেলেছে। এতে প্রায় ৯০ আবাসন ইউনিট সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং প্রায় ৩ লাখ আবাসন ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই মাসে কাছাকাছি প্রাচ্যে ফিলিস্তিন শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা- ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, অবরুদ্ধ অঞ্চলের সমস্ত বাড়ির ৬২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

গত ২ এপ্রিল প্রকাশিত বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রথম চার মাসে সমালোচনামূলক অবকাঠামোর ক্ষতির খরচ আনুমানিক সাড়ে ১৮ বিলিয়ন ডলার।

জাতিসংঘের মতে, গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা ইসরায়েলি আক্রমণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

১১ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি

প্রায় ১১ লাখ মানুষ গাজার প্রাক-যুদ্ধ জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ( অনাহার এবং তীব্র অপুষ্টি) মধ্যে বসবাস করছে বলে জানিয়েছে বিশ্বের ক্ষুধা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা, যা ইন্টিগ্রেটেড ফুড-সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) নামে পরিচিত।

গাজায় খাদ্যের জন্য হাহাকার

১৮ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, আগামী মে মাসের মধ্যে উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে এবং জুলাইয়ের মধ্যে উপত্যকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আইপিসি আরও জানিয়েছে, গাজার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।

মঙ্গলবার গাজার মিডিয়া অফিস এক বিবৃতি জানিয়েছে, খাদ্যের অভাবে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ শিশু মারা গেছে। এতে বলা হয়, বাস্তুচ্যুত হওয়ার ফলে ১০ লাখ মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে ইসরায়েলি হামলা ও বাধায় ইউএনআরডব্লিউএর মতো সাহায্য সংস্থাগুলোর কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

জাতিসংঘ বলেছে, এ যুদ্ধে ২০০ জনেরও বেশি সাহায্য কর্মী নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ফিলিস্তিনি।

২৬টি হাসপাতাল ধ্বংস এবং ৪ শতাধিক চিকিৎসক নিহত

ইসরায়েলি বাহিনী বারবার গাজা উপত্যকার হাসপাতালগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, এর মধ্যে কয়েকটি বৃহত্তম স্বাস্থ্য কেন্দ্র অবরোধ করে রেখেছে তারা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস ৩০ মার্চ বলেছেন, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১০টিতেই ন্যূনতম কার্যক্রম চলছে।

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস্তুপে পরিনত হয়েছে গাজার একটি হাসপাতাল

স্বাস্থ্যের অধিকারের বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টার তলালেং মোফোকেং সোমবার বলেছেন, গত ৭ অক্টোবর থেকে অন্তত ৩৫০ জন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার নিহত হয়েছেন এবং ৫২০ জন আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৪৮৫ জন চিকিৎসা কর্মী নিহত হয়েছে।

এদিকে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গাজার কিছু বিখ্যাত স্বাস্থ্য কেন্দ্র অবরোধ করেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এমনই একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র- খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে কয়েক সপ্তাহ অবরোধ করে রাখার পর ইসরায়েলি বাহিনী সরে গেলে হাসপাতালটির ভেতরে পাওয়া একটি গণকবর থেকে প্রায় ৩০০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।

এ ছাড়া চলতি মাসের শুরুতে গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালেও মরদেহ উন্মোচিত হয়েছিল, যা কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা অবরুদ্ধ ছিল।

সূত্র: আলজাজিরা

(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মানবিক করিডরের নামে কোনো কিছু জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, মির্জা ফখরুলের হুঁশিয়ারি 
জম্মু-কাশ্মীরে হামলার ভারতীয় প্রতিবেদন ‘ভুয়া এবং মিথ্যা’: পাকিস্তান
নিষিদ্ধ হচ্ছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ: আসিফ মাহমুদ
হোটেল আমারিতে পুলিশ-ডিএনসির যৌথ অভিযান চলছে 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা