সরাসরি মুসলিমদের নিশানা করেই ভোট প্রচারে মোদি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০২ মে ২০২৪, ১১:৪২
অ- অ+

আর আকারে-ইঙ্গিতে নয়, ধর্মীয় মেরুকরণ এবং নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি মেনে না চলার অভিযোগের মাঝেই লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এবার সরাসরি মুসলিমদের নিশানা করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

মঙ্গলবার তেলেঙ্গানাতে একটি সভায় মোদি বলেন, কংগ্রেস যদি তফসিলি জাতি ও জনজাতি, দলিত, ওবিসি-র সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে মুসলিমদের দিতে চায়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী কিছুতেই তা হতে দেবেন না।

গত কয়েকদিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নানা বক্তব্যকে ঘিরে সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। মি মোদির বিরুদ্ধে ধর্মীয় মেরুকরণ, ঘৃণা-সূচক বক্তব্য-সহ একাধিক অভিযোগ তুলেছে তারা। অভিযোগ উঠেছে নির্বাচনের আবহে আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গেরও।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তার দলের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখাও চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এরমধ্যেই আরও একবার মোদির গলায় একই সুর শোনা গেল। তবে অন্যান্য বারের মত আকারে-ইঙ্গিতে নয়, বরং সরাসরি।

তেলেঙ্গানার জাহিরাবাদের প্রচারসভা থেকে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘যত দিন আমি বেঁচে আছি, দলিত জনজাতিদের সংরক্ষণকে ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিমদের হাতে তুলে দেব না, দেব না, দেব না! কংগ্রেস এবং তাদের যত সহযোগী রয়েছ, তারা কান খুলে এই কথাটা শুনে নাও।’

এত বিতর্কের পরও কেন একই পথে হাঁটছেন প্রধানমন্ত্রী, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে মঙ্গলবার নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে বলেছেন, কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পথে রয়েছে এবং সেই কারণে ‘মঙ্গলসূত্র’ আর ‘মুসলমানদের’ প্রসঙ্গ বারে বারে নিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদেরও অনেকে মনে করেন বিজেপি সাম্প্রদায়িক ইস্যুকেই সামনে এনে ভোটে জিততে মরিয়া।

হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির গবেষক ও লেখক স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নটাই যাতে না থাকে তার চেষ্টা করছে বিজেপি। ওরা চায় অন্য ইস্যু নয়, সাম্প্রদায়িকতার ইস্যুটা সামনে রেখে ভোট হোক।’

দু’দফা ভোটের পর নিজেদের অবস্থা সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছে বিজেপি, তেমনটাও মনে করছেন অনেকে।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বিশ্বনাথ চক্রবর্তী নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

তার বক্তব্য, ‘ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কেন পদক্ষেপ নিচ্ছে না?’

এরআগে সরাসরি উল্লেখ না করলেও সাম্প্রতিক নির্বাচনী প্রচারসভা থেকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে যে কয়টি বিষয় ঘুরে ফিরে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে, বিরোধীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, কৃষকদের প্রতি বিজেপির সমর্থন, অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যে নারীদের বেহাল দশা, উন্নয়নের খতিয়ান এবং আরও অনেক প্রসঙ্গ।

উঠে এসেছে রামমন্দিরের প্রসঙ্গ, অথবা কীভাবে পশ্চিমবঙ্গের মতো কয়েকটি রাজ্যে রাম নবমী বা দুর্গাপূজা করতে দেওয়া হয় না। এছাড়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন চালু করা, জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার, তিন তালাক বাতিলের ফলে মুসলিম নারীরা কতটা লাভবান হয়েছেন কিংবা ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের মতো বিভিন্ন বিষয়ও এসেছে।

গত ২১ শে এপ্রিল রাজস্থানের এর জনসভায় নরেন্দ্র মোদী সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ১৮ বছরের পুরনো একটি মন্তব্য টেনে এনেছিলেন।

রাজস্থানে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘কংগ্রেস পার্টি কীভাবে বাবাসাহেব আম্বেডকরের সংবিধান নিয়ে খেলা করার চেষ্টা করছে দেখুন। এদেশে সংবিধান তৈরির সময় ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের তীব্র বিরোধিতা হয়েছিল, যাতে আমাদের এসসি, এসটি, ওবিসি সম্প্রদায় সুরক্ষা পেতে পারে। কিন্তু মনমোহন সিং একটি ভাষণ দিয়েছিলেন এবং আমি সেই সভায় উপস্থিত ছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে।’

‘মনমোহন সিং বলেছিলেন যে দেশের সম্পদের উপর মুসলমানদের প্রথম অধিকার রয়েছে। এটা মনমোহনজীর বক্তব্য। এটা কাকতালীয় ছিল না, বা শুধুমাত্র একটা বিবৃতি ছিল না। কারণ কংগ্রেস পার্টির চিন্তাভাবনা সবসময়ই তুষ্টির, ভোটব্যাঙ্কের’, বলেন তিনি।

এছাড়া রাজস্থানের বানসওয়ারায় নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতায় সরাসরি ‘মুসলিম’ শব্দের উল্লেখ ছিল না, কিন্তু ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট।

সেখানে ‘অনুপ্রবেশকারী’, ‘যাদের বেশি সন্তান থাকে’ এই সব বলে প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছিলেন তার বক্তব্যের নিশানা কারা ছিল। সে সময় পরপর তিনটি সভায় তার বক্তব্যকে ঘিরে ধর্মীয় মেরুকরণের অভিযোগ উঠেছিল।

এরপর বিরোধীদের তো বটেই, নাগরিক সমাজ এমন কী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও কড়া সমালোচনার শিকার হতে হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে।

নির্বাচন কমিশনে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মানুষ ও সংগঠন মিলিয়ে ২০ হাজার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। আদর্শ আচরণবিধি না মানার অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল কংগ্রেসও।

এরপর গত ২৫শে এপ্রিল কমিশনের পক্ষ থেকে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির কাছে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে ১৪ দিনের মধ্যে।

সূত্র: বিবিসি

(ঢাকাটাইমস/০২মে/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মানবিক করিডরের নামে কোনো কিছু জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, মির্জা ফখরুলের হুঁশিয়ারি 
জম্মু-কাশ্মীরে হামলার ভারতীয় প্রতিবেদন ‘ভুয়া এবং মিথ্যা’: পাকিস্তান
নিষিদ্ধ হচ্ছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ: আসিফ মাহমুদ
হোটেল আমারিতে পুলিশ-ডিএনসির যৌথ অভিযান চলছে 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা