অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে আলোচিত হন এমপি আজীম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ মে ২০২৪, ১৯:৩৭

২০১৭ সালের মে মাসে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে যাত্রীবাহী একটি বাস ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হয়। খবর পেয়ে স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার দুর্ঘটনায় হতাহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। এসময় অন্যদের সঙ্গে উদ্ধারকাজে তিনিও অংশ নেন।

শুধু তাই নয়, নিজে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যান ঝিনাইদহ-৪ আসনের এই এমপি। সেসময় তার এই মানবিক কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। এমন কাজে সবাই তাকে প্রশংসা করেন। ২০১৪ সালে তিনি প্রথমবারের মতো এমপি হয়েছিলেন। এরপর আরও দুইবার এমপি নির্বাচিত হন।

জানা যায়, ওই বছরের ১৮ মে দুপুর দেড়টার দিকে কালীগঞ্জের বৈশাখী তেল পাম্প এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিন বাসযাত্রী নিহত ও ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আংশকাজনক হওয়ায় তাদের যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেসময় আজীম ঢাকা টাইমসকে বলেছিলেন, 'নির্বাচনি এলাকায় একটি বাস সজোরে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে বাসের সব যাত্রী গুরুতর আহত হন। কেউ কেউ মৃত্যু যন্ত্রণায় কাঁতরাচ্ছিলেন। তাৎক্ষণিক আমরা সবাইকে উদ্ধার করে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। তবে বেশিরভাগ গুরুতর আহত হওয়ার চিকিৎসকরা কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেফার্ড করেন। হাসপাতালে দুটি অ্যাম্বুলেন্স আছে কিন্তু ওই মুহূর্তে ড্রাইভার ছিল না। এদিকে গুরুতর আহত যাত্রীরা মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। তখন নিজেই ড্রাইভিং করে আহতদের যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম এবং তাৎক্ষণিক ডাক্তার চিকিৎসাসেবা দেয়ার কারণে তারা সুস্থ হয়ে উঠেন। আল্লাহর হুকুম ছিল, যে কারণেই এটি সম্ভব হয়েছিল। যদি সঠিক সময় গুরুতর আহতদের হাসপাতালে না নেয়া যেত হয়তো অনেকের প্রাণহানিও ঘটতে পারত।'

এদিকে গত ১১ মে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকার দলীয় এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার চিকিৎসার জন্য ভারত যান। কিন্তু হঠাৎ ১৪ মে সবার সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দেশটিতে তার দীর্ঘদিনের বন্ধু গোপাল বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর থেকে তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ বুধবার হঠাৎ খবর আসে কলকাতার নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনে তিনি খুন হয়েছেন। সেই ভবনের ফ্ল্যাট থেকে তার শরীরের অংশ উদ্ধার হয়েছে। তবে তার মরদেহ উদ্ধার নিয়ে নানান বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কারণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধারণা করছে, তার মরদেহ খণ্ড-বিখণ্ড করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছে।

এরইমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, আনারকে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা বাংলাদেশি। তাকে হত্যার রহস্য উদঘাটনে দুইদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।

কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আনার বলেছিলেন, ২০১৭ সালের বাস দুর্ঘটনা ছাড়াও আরেক ঘটনা আমার জীবনে ছিল। আমার নির্বাচনি এলাকার মালিয়াট ইউনিয়নের ভিটেখোলা নামক একটি জায়গার এক বাসিন্দা ঢাকায় মারা গিয়েছিলেন। তখন বর্ষা মৌসুম ছিল। মৃত ব্যক্তির বাড়ি যাওয়ার পথে একটি কাঁচা রাস্তা ছিল। যখন মরদেহ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা থেকে এসেছে তখন ড্রাইভার বলল পাকা রাস্তা থেকে আর কাঁচা রাস্তায় যাবে না। তার ভয় ছিল, কাঁচা রাস্তায় গর্ত আছে কি না, গাড়ি আটকে যায় কি না। তখন সে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে চাবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও মোটরসাইকেল চালিয়ে জানাজার উদ্দেশে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথেই দেখলাম লাশের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে ড্রাইভারের তুমুল ঝগড়া। ড্রাইভার কাঁচা রাস্তা দিয়ে যাবেই না। তখন আমি অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার থেকে চাবিটা নিলাম। ড্রাইভারকে বললাম, তোমার গাড়ির দায়িত্ব আমার, আমিই গাড়ি চালিয়ে যাব। তখন আমি নিজেই কাঁদা রাস্তায় আস্তে আস্তে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে লাশ বাড়িতে নিয়ে যাই।'

স্থানীয় সূত্র বলছে, নিজের নির্বাচনি এলাকায় কেউ মারা গেলে তিনি সেই বাড়িতে ছুটে যেতেন। হুন্ডি এবং স্বর্ণ-চোরাচালানের সঙ্গে দীর্ঘদিন সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। সেই কারণেই তাকে হত্যা করা হতে পারে।

ঢাকাটাইমস/২২মে/এসএস/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :