যশোরে অ্যান্টিভেনম পর্যাপ্ত, রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্ক না হওয়ার পরামর্শ

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো সম্প্রতি যশোরেও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিষধর রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক বেড়েছে। এখন পর্যন্ত এ জেলায় রাসেলস ভাইপারের কামড়ে কেউ আক্রান্ত হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। আক্রান্ত হলেও আতঙ্কিত না হয়ে রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিভেনম মজুত রয়েছে বলেও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
যশোর মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডাক্তার এবিএম সাইফুল ইসলাম বলেন, আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া না হলে বাঁচানো সম্ভব হয় না। তাই কেউ আক্রান্ত হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি সাপটির কবল থেকে বাঁচতে সচেতনতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছেন এ চিকিৎসক।
এবিএম সাইফুল ইসলাম জানান, সাপে কামড়ানো রোগীকে আতঙ্কিত হতে দেওয়া যাবে না। আক্রান্ত স্থানটি যথাসম্ভব নড়াচড়া করা যাবে না। সাপে কামড়ানো স্থানটি দ্রুত পরিষ্কার ব্যান্ডেজ বা সুতি কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, যাতে ধুলোবালি না লাগে। হাতের কোনো অংশে সাপে কাটলে সঙ্গে সঙ্গে ঘড়ি, ব্রেসলেট, আংটি ইত্যাদি খুলে ফেলতে হবে। কাপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুইয়ে দিতে হবে। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কখনই কাত করে শোয়ানো যাবে না। সব সময় সোজা করে শোয়াতে হবে।
আক্রান্ত ব্যক্তির বুকের নিচে কিছু একটা দিয়ে বুকটা উঁচু করে রাখতে হবে, যাতে আক্রান্ত স্থানটি হার্ট লেভেলের নিচে থাকে।
রাসেলস ভাইপার একদশক আগে পদ্মা অববাহিকা ধরে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সরকারিভাবে মুন্সীগঞ্জে সর্বপ্রথম রাসেলস ভাইপার ধরা পড়ে ২০১৯ সালে। ওই বছরের ২৮ এপ্রিল পদ্মা তীরবর্তী লৌহজংয়ের ঘোড়দৌড় বাজার এলাকায় গৌতম কুমার সাহার বাড়িতে রাসেল ভাইপার ধরা পড়ে। বরেন্দ্র অঞ্চলের বাসিন্দা হলেও সাপটির রাজত্ব এখন দেশের অন্তত ২৮টি জেলায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই সাপটির ছোবলে চলতি বছরের ৫ মাসে মৃত্যুবরণ করেছে অন্তত ১০ জন। যাদের অধিকাংশই কৃষক এবং জেলে।
এ ব্যাপারে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আব্দুস সামাদ বলেন, বিষধর সাপের দংশনের পর দ্রুত ওষুধ বা অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের মাধ্যমে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব।
আব্দুস সামাদ বলেন, রাসেলস ভাইপার সাধারণত ধানি জমিতে, নদীর অববাহিকায় ও ঘাসের মধ্যে বিচরণ করে। বর্ষাকালে তারা শুকনো স্থানে নিজেদের আবাসস্থল গড়ে তোলে। এই সাপের কামড়ে মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- শক, পেশি প্যারালাইসিস, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তক্ষরণ এবং কিডনি অথবা রেনাল ফেইলিওর।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে জরুরি বিভাগে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন সরবরাহ রয়েছে এবং ভর্তি রোগীর জন্য মেডিসিন ওয়ার্ডে বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডাক্তার মাহমুদুল হাসান বলেন, যশোরে এখন পর্যন্ত এই সাপের অস্তিত্ব বা কামড়ে কেউ আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এটা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক থাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। জেনারেল হাসপাতালসহ ৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনমের ব্যবস্থাসহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রচারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী নেওয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/২১জুন/পিএস/কেএম)

মন্তব্য করুন