বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঋণে জর্জরিতদের মুক্তির উপায় কী?

যতটুকু জানি, ক্ষুদ্রঋণ হলো একটি ছোটো ব্যবসা শুরু বা প্রসারিত করার জন্য ঋণপ্রার্থীকে খুব অল্প টাকা ঋণ দেওয়ার একটি পদ্ধতি। মিডিয়ার কল্যাণে জানতে পারি এই অনুশীলনটা বাংলাদেশে আধুনিক রূপে শুরু হয়েছিল। ক্ষুদ্রঋণের সংজ্ঞার মধ্যে ব্যবসা শুরু বা প্রসারিত করার কথা বলা আছে। আবার বাংলাদেশে কার্যক্রমটির আধুনিক রূপ পেয়েছিল বলে দেশ-বিদেশে কথিত আছে। একটা মহল ক্ষুদ্রঋণের প্রবর্তক হিসেবে একজন বিশেষ ব্যক্তির কথা বলেন।
ক্ষুদ্র ঋণ ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে বিরাজমান। তখন বিষয়টি সমিতি নামে ছিল। কিছু লোক একত্রিত হয়ে সমিতি করতো। ঐ সমিতিতে দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিত্তিতে অল্প পরিমাণ টাকা জমা রাখতো। সদস্যদের প্রয়োজনে ঐ সমিতি থেকে ঋণ নিত। এটাই ক্ষুদ্র ঋণ। এটা কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিই জানার কথা। তাহলে একজন বিশেষ ব্যক্তিকে ক্ষুদ্র ঋণের প্রবক্তা বা প্রবর্তক বলেন কিভাবে। বরং এটা বলা যায় যে, সার্ভিসসহ চক্রবৃদ্ধি সুদ অভিনব কায়দায় হাতিয়ে নেওয়ার আধুনিক রুপের প্রবর্তক তাকে বলা যায়।
উপরের তিনটি কথাকে আমি ডাহা মিথ্যা বলে মনে করে এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এর প্রতিবাদ না করলে বাংলাদেশের দিনে এনে দিনে খাওয়া বা খেটে খাওয়া মানুষের উপর অন্যায়, জুলুম ও অবিচার হবে বলে মনে করি। মূলত গ্রামে-গঞ্জে ক্ষুদ্রঋণ তারাই গ্রহণ করে, যারা মনে করে এই মুহুর্তে আমার কিছু নগদ টাকার প্রয়োজন। সেটা যেখান থেকেই আসুক না কেন, আগে-পরে চিন্তা করার দরকার নেই। পরে যে শোধ করতে হবে এটাও ভাবার দরকার নেই তাদের। নগদ টাকার শর্তে যেকোনো কাগজে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত এমন মানুষজন, যেমন: কারো এখনই জরুরি একটা মোবাইল সিম কার্ড দরকার, যা ক্রয় করতে মাত্র ২০০-৩০০ টাকার প্রয়োজন। পরে কী হবে এটা চিন্তা করার দরকার নেই। একটা ফরম দিল ও ফরমটির পিছনে ৩৭টি শর্ত থাকলেও তা না পড়ে স্বাক্ষর করে দিল।
বাংলাদেশের এক শ্রেণির মানুষের প্রবণতা হলো নগদ যেকোনো কিছু পেলেই ঔ পাওনাটাকে বড়ো মনে করে দেখে। ধরা যাক, রিলিপ বিতরণ করলো, টাকার পরিমাণ মাত্র ১০০ টাকা, অথচ চার ঘণ্টা রোদের মধ্যে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা হলো। সে যদি একটু ভাবত ৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করলে কমপক্ষে ২০০ টাকা রোজগার করা সম্ভব। আর যদি সেটা আরো বেশি টাকার রিলিপ হয় তাহলে পুরো দিনও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতো। আর যদি মহিলা হয় তাহলে নিশ্চয়ই আবেগপ্রবণ হয়ে আরো সিরিয়াস।
মর্টগেজ বা জামানত:
এনজিওগুলো ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার পূর্বে দেশবাসীকে বলে আমরা কোনো মর্টগেজ বা জামানত নিই না। বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা প্রথমত সদস্য ফি নিয়ে মহিলাদেরকে সদস্য করে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর চাঁদা পরিশোধ করতে হয় সদস্য হিসেবে। সামান্য কিছু টাকা নেওয়ার জন্য এই বলে একজন সদস্য স্বাক্ষর করে। ইচ্ছেমতো স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেওয়া তো আছেই। স্ট্যাম্পের লেখাগুলো কোনো ধরনের আলোচনা ব্যতীত এনজিওর মনগড়া শর্ত, অনেক সময় ব্লাঙ্ক চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে রাখে। ঋণ গ্রহীতার বাড়ির অন্যান্য নিকটআত্মীয়দেরও স্বাক্ষর নিয়ে রাখে। ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এনজিওগুলো পুরুষকে কোনো ধরনের ঋণ প্রদান করে না, মহিলা হওয়া বাধ্যতামূলক। কারণ জামানত হিসেবে পায় ঐ মহিলার সংসার, ভাঙা ও গড়া। অর্থাৎ সংসার টিকিয়ে রাখার শর্ত। ঋণ শোধ করতে একটু দেরি হলেই শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, ননদ-দেবর, ভাসুর-এর বকা খাওয়ানো, পাড়া-পড়শির খোটা তো রয়েছেই। এনজিওগুলি জানে যে, পান খেতে চুন খসলে এখনও গ্রামের মহিলারা কতটা অসহায়। নেমে আসে তাদের উপর সীমাহীন নির্যাতন। এক পর্যায়ে ঋণ শোধ করতে বাধ্য হয়ে ঐ মহিলা বাবা-মার কাছ থেকে যৌতুকের টাকা নিয়ে এসে হলেও ঋণ শোধ করবেই। পুরুষকে ঋণ দিলে তারা যেকোনো জায়গায় চলে যেতে পারে। মহিলাকে দিলে বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও কোথাও যাবে না। এসবই জামানত। মহিলাদেরকে ব্যবসার জন্য ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হয় বলা হলেও বাংলাদেশের কত শতাংশ মহিলা গ্রামে-গঞ্জে ব্যবসা করে থাকে। এটা বুঝতে কাণ্ডজ্ঞান থাকলেই যথেষ্ট। মূলত গ্রামে-গঞ্জে এনজিওগুলো থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ঘরের চাল, বেড়া নির্মাণ, মেয়েদের বিয়ে দিতে যৌতুক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মেয়ের জামাইকে মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যৌতুক দেওয়া হয় এই টাকা দিয়ে। যদিও বিশেষ নগন্য ক্ষেত্রে গরু কেনা হয়। গ্রামে গঞ্জে যথাযথ চিকিৎসা না থাকায় অধিকাংশ গরু ছাগলই রোগা হয়ে থাকে অথবা মারা যায়। বর্তমানে দেখা যায় গ্রামে-গঞ্জে মহিলারা একই সময়ে একাধিক এনজিও হতে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে মেয়ের জামাইকে অথবা নিজের ছেলেকে অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার জন্য এই টাকাগুলি খরচ করে। হাতেগোনা কিছু লোক গন্তব্যে পৌঁছতে পারলেও অধিকাংশই ফেরত আসে। কেউবা সলিল সমাধি হয়ে যায়। দেখা গেল, কোনো ক্ষেত্রেই লাভ তো দুরের কথা মূলধনও ফেরত আসার সম্ভাবনা নাই।
সেবা: এনজিওগুলি বলে তারা নাকি সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে মানুষের উপকার করে থাকে। এনজিওগুলির এসব কর্মকাণ্ড ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করায় এখন গ্রামে গঞ্জে কেউ কাউকে টাকা ধার দিচ্ছে না। ধার চাইলেই ক্ষুদ্র ঋণ দেখায়। ভুলভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুলাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ ঋণ নিচ্ছে। যেমন ধরা যাক, মেয়ের ননদের বিয়ে, মেয়ের জামাই বাড়ির লোকজন আবদার করলো কিছু টাকা দেওয়ার জন্য। বলা হলো আমাদের কাছে টাকা নেই। এবার জামাই বাড়ি থেকে বলে দিল ক্ষুদ্রঋণ আছে না। খোটা হতে বাচতে ঋণ নিয়ে দিল।
সুদ/সার্ভিস চার্জ: ধরা যাক, একজন ব্যক্তি বাংলাদেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিল। এই ঋণের যে পরিমাণ সার্ভিস চার্জ ও সুদ দিতে হবে, যাহা ক্ষুদ্রঋণের বেলায় অনেক বেশি। এটা সেবার নামে প্রতারণা ব্যতীত কীইবা হতে পারে।
ঋণ প্রদানের মেয়াদ: বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী এনজিওগুলি প্রচারণা করে থাকে যে, ঋণ এক বছরের জন্য দেওয়া হয়। বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এক বছর মানে কী? এক বছর বলতে কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি মাত্রই বুঝতে পারবে যে, যেদিন টাকা প্রদান করবে ঐদিন হতে ঋণ গ্রহণকারী এক বছর টাকাগুলি ব্যবহার করতে পারবেন। বাস্তবতা হলো যেদিন ঋণ প্রদান করা হয় ঐদিনই সার্ভিস চার্জ নামের বেশ কিছু টাকা এবং প্রথম কিস্তির নামে একটা অংশ কেটে রাখা হয়। আবার এক সপ্তাহ/পনেরো দিন পর অথবা সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যেই পরের কিস্তি শোধ করতে হয়। মূলত গ্রাহক গড়ে ৬ মাসও এ টাকা ব্যবহার করতে পারে না। গ্রাহক টাকা ব্যবহার করার পূর্বেই কীভাবে ঐ টাকার সুবিধা গ্রহণ করেন যে প্রথম দিন থেকেই কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হয়। এর চেয়ে বড়ো প্রতারণা আর কী হতে পারে। যেহেতু মানুষ এনজিও থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে সাধারণত ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করে না। যা এনজিওগুলো খুব ভালো করেই জানে। যার পেটে ভাত নাই দিনে এনে দিনে খায়। তার ঘরের বেড়া থেকে কী আয় আসে। অন্যদিকে বাল্যবিবাহ ও যৌতুকের কাজেও যেহেতু ঋণের টাকা ব্যবহার করা হয়েছে। বাল্যবিবাহ ও যৌতুক তো কোনো আয়ের উৎস হতে পারে না। তাহলে ঋণের টাকা কোথায় থেকে পরিশোধ করা হবে। এবার যে ভিটির উপর ঘর করতে ঋণের টাকা খরচ হয়েছে, সেই ভিটি বিক্রয় করে সর্বহারা হয়ে এলাকা ছাড়া হওয়া ব্যতীত গত্যান্তর নেই। এবার শুরু হল পারিবারিক কলহ। স্বামী পালিয়ে যায়। ছেলে-মেয়েদের পড়া বন্ধ। যিনি জামানতদার অর্থাৎ স্বাক্ষরকারী, এবার তার সঙ্গে বিরোধ। এক পর্যায়ে আত্নহত্যার পথ বেচে নেওয়া। এনজিওগুলি নাছোড় বান্দা। আমার অধীনস্থ এক কর্মকর্তা যিনি অতীতে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত একটি স্বনামধন্য এনজিওতে চাকুরি করে এসেছেন। তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন যে, তাকে প্রতি রাতেই ক্ষুদ্রঋণ গ্রাহকের বাড়িতে শালিস বসাতে হয়েছিল। তিনি প্রতি মাসেই গ্রাহকের মর্মান্তিক অবস্থার কারণে নিজের বেতনের সিংহভাগ টাকা দিয়ে গ্রাহকের কিস্তি পরিশোধ করতেন। তার প্রতি এনজিওটির নির্দেশনা ছিল যেকোনো মূল্যে টাকা পরিশোধ করতেই হবে। প্রায়শ ঋণ গ্রহিতাকে শায়েস্তা করে টাকা আদায় করতে পুলিশকেও ব্যবহার করতে হয়েছে। বাংলাদেশের এনজিওগুলি ঋণ গ্রহিতাদের কাছ থেকে প্রায় শতভাগ সুদসহ মূল টাকা আদায় করতে সক্ষম হচ্ছেন। যা বাংলাদেশ তো দুরের কথা উন্নত বিশে^র তফসিলি ব্যাংকগুলির পক্ষে কখনো সম্ভব হয় নাই। একাজ করতে গিয়ে এনজিওগুলি কী অমানুষিক ভীবৎসতার পথ বেছে নিচ্ছে।
১) তারা সামাজিকভাবে একঘরে করে ফেলার পন্থা অবলম্বন করে। ২) বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে ৩) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়। ৪) জামিনদারকেও একঘরে করে ফেলা হয়, তার বিরুদ্ধেও পুলিশকে লেলিয়ে দেওয়া হয়। ৫) ঋণ গ্রহীতা মারা গেলে দাফন করার পূর্বে তারা আত্নীয় স্বজনকে ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য করে ৬) রাত-বিরাতে তাদের বাড়িতে গ্রামের মাতাব্বরদেরকে নিয়ে এসে সালিশ বসায়।
আমি জনাকীর্ণ জনসভায় ড. ইউনূস-এর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর উপস্থিত জনসাধারণকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কে কে উপকৃত/স্বাবলম্বী হয়েছেন। একজনও পাওয়া যায় নাই। আবার জিজ্ঞাসা করলাম কে কে ক্ষুদ্রঋণ নিয়েছেন। কয়েকশ লোককে হাত উঠাতে দেখেছি।
এখন প্রশ্ন হলো, তফসিলি ব্যাংকগুলি যথাযথ জামানত/মর্টগেজ গ্রহণ করেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রদানকৃত ঋণ পরবর্তীতে খেলাপি হয়ে যায়। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গ্রহীতাগণ ব্যবসায়িক কাজেই ঋণ ব্যবহার করেন। অন্যদিকে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী এনজিওগুলি কীভাবে শতভাগ টাকা গ্রাহক থেকে গ্রহণ করতে সক্ষম হন।
ক্ষুদ্রঋণের এই সুবিধা থাকাতে গ্রাম-গঞ্জের মাদক কারবারিরা তাদের মা, বৌ অথবা বোনদের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করে মাদকসেবন ও মাদক কারবারের টাকা খুব সহজেই জোগাড় করতে সক্ষম হচ্ছেন। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই প্রকৃতপক্ষে এই বিষয়গুলি বুঝার মতো যথেষ্ট শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে নাই। তাই আবেগের বশবর্তী হয়ে ঋণের ফাঁদে পড়ে একুল-ওকুল সব কুল হারা হয়ে দিশেহারা। ঋণ যদি দিতেই হয় তবে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোর উচিত ব্যবসার নামে টাকা নিলে কী ব্যবসা করছেন সেটা যথাযথভাবে মনিটরিং করা। প্রকৃতপক্ষে যারা ব্যবসায়িক কাজে ঋণ নিচ্ছেন তাদের ব্যবসা প্রসারের জন্য আরও বেশি ঋণ দেওয়া। আমি যতটুকু জানি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম করলেও তারা বাংলাদেশের মতো প্রতারণামূলক, স্বেচ্ছাচারী ও স্ট্রিম রোলার চালিয়ে কার্যক্রম করছে না বলে তাদের প্রয়াস সফল হচ্ছে। বাংলাদেশের এই বিষয় নিয়ে তারা এখনও অন্ধকারে আছে। একদিন তারা এ ন্যক্কারজনক কার্যক্রমের বিষয়ে সম্যক অবগত হবেন এবং হয়তো এ নোবেল প্রত্যাহারের দাবি তুলবেন। সেদিন বেশি দুরে নয়। অতএব সংশ্লিষ্ট সকলের এখনই নিজেদেরকে শুধরে নেওয়ার উপযুক্ত সময় বলে মনে করি।ড. আনোয়ার হোসেন: আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী সংগঠন ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এন্টি এ্যালকোহল-এর সভাপতি

মন্তব্য করুন