হবিগঞ্জে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, হবিগঞ্জ
  প্রকাশিত : ২৯ জুলাই ২০২৪, ১৬:৩৭
অ- অ+

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে হবিগঞ্জে পুলিশ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ওই মামলায় বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, যুবলীগ নেতা, শিল্পপতি সাধারণ ব্যবসায়ীদের আসামি করা হয়েছে। নিয়ে মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে তাদেরকে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলার অন্যান্য থানায় দায়ের করা মামলাগুলো নিয়েও রয়েছে বিতর্ক।

ক্ষোভ জানিয়েছে হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ।

গত ১৮ জুলাই হবিগঞ্জ শহর পরদিন ১৯ জুলাই শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নছরতপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ-বিজিবির ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। হবিগঞ্জ শহরের সংঘর্ষের ঘটনায় ২০ জুলাই ৯৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত এক হাজারজনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।

এদিকে নছরতপুরের ঘটনায় ২২ জুলাই ১০১ জনের নাম উল্লেখ করে -৩শজনকে আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দুটি মামলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে নুরুল হক টিপুকে আসামি করা নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক।

তিনি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলনরত একজন কর্মী। তাকে হবিগঞ্জ শহর নছরতপুরে সংঘর্ষের দুটি মামলাতেই আসামি করা হয়।

নুরুল হক টিপু বলেন- “হবিগঞ্জ শহরতলীর পোদ্দারবাড়ি এলাকায় আমার পৈত্রিক ভূমিতে প্রবেশে বাঁধা দেয় একটি পক্ষ। এনিয়ে আমি পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করি। এর প্রেক্ষিতে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) খলিলুর রহমানকে অভিযোগটি নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেন পুলিশ সুপার। খলিলুর রহমানের কার্যালয়ে আমি গেলে প্রথমবার আমার অভিযোগটি তিনি গুরুত্ব সহকারে শুনেন। কিন্তু এক সপ্তাহ পর আবার যাওয়ার পর তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কটাক্ষ করে আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। আর যে ভূমি নিয়ে আমার অভিযোগ, সেখানে আমি বা আমার পরিবারের লোকজন না যাওয়ার জন্য তিনি শাসিয়ে দেন। কোনো কারণে গেলে আমাকে দেখে নেয়ার হুমকিও দেন খলিলুর রহমান।

নুরুল হক টিপু বলেন- “আমি ১৮ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের আয়োজনে শহরের টাউন হলের সামনে কোটা বহালের দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অংশ নিয়েছি। পরদিন আমি ব্যক্তিগত কাজে কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইনে ছিলাম। অথচ শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নছরতপুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাতেও আমাকে আসামি করা হয়েছে। আমি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডকে জানানোর পর নেতৃবৃন্দরা পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবগত করেছে।

একই মামলায় হবিগঞ্জ পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফরহাদ মিয়াকেও আসামি করা হয়েছে। মামলায় ৪৮ নাম্বার আসামি করা হয়েছে যুবলীগের সক্রিয় কর্মী জামাল মিয়াকেও।

এছাড়াও সদর থানা হাসপাতালের সামনের ফার্মেসি ব্যবসায়ী মোস্তাক খান চৌধুরী রুমেল নামে একজনকে সদর থানার মামলায় ১২নং শায়েস্তাগঞ্জ থানার মামলায় ৬৫নং আসামি করা হয়েছে। অথচ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়- হবিগঞ্জ শহরের সংঘর্ষের সময় তিনি তার ফার্মেসিতে আহত পুলিশ সদস্য সাংবাদিকদের জরুরি সেবা দিচ্ছেন।

মোস্তাক খান চৌধুরীর বড় ভাই জানান- গত মার্চ মাসে তাদের আরেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরপর তিনবার চুরি সংঘটিত হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শহরের ব্যবসায়ীরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এসব বিষয় নিয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) খলিলুর রহমান তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। যে কারণে মোস্তাক খান চৌধুরী রুমেলকেও হয়রানির জন্য দুই মামলায় আসামি করা হয়।

হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কান্তি দাশ বলেন- ‘নুরুল হক টিপুকে দুটি মামলায় আসামি করা নিয়ে আমরা বিস্মিত হতবাক হয়েছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা পুলিশের কাছ থেকে এমনটা আসা করিনি। ঘটনার দিন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের আয়োজনের অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে নুরুল হক টিপু তার লোকজন নিয়ে অংশ গ্রহণ করেন। দুই একজন পুলিশ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে তাকে আসামি করা হয়েছে বলে আমরা মনে করছি।আমরা বিষয়টি তাৎক্ষণিক হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর প্রধানকে জানিয়েছি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমানের ওপর ওঠা এসব অভিযোগকে ভুল বলে মন্তব্য করেছেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আক্তার হোসেন।

তিনি বলেন, ‘যাদেরকে আসামি করা হয়েছে, তাদের অনেকের হয়ত পূর্বে পলিটিক্যাল সমস্যা ছিল। আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে। যদি তাদেরকে ফুটেজে দেখা না যায়, তাহলে হয়রানি না করার জন্য আমি বলে দিয়েছি। যদি কোন পুলিশের বিরুদ্ধে কাউকে অহেতুক হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া যারা হামলা-ভাংচুরে অংশ নেয়নি এমন লোকদেরকে হয়রানি না করতে নির্দেশ দেওয়া আছে।

ঢাকাটাইমস/২৭জুলাই/পিএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সারজিস বনাম নওশাদ: ভোটে কার পাল্লা ভারি?
মনোহরদীতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা গণধোলাইয়ের শিকার
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদও জয় করব: নাহিদ
নরসিংদীতে নির্মাণাধীন কারখানায় হামলা, যুবদল নেতা গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা