কোটা আন্দোলনে বলপ্রয়োগ:

উদ্বেগ জানিয়ে চিঠি জাতিসংঘ মানবাধিকারপ্রধানের, যা বললো বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৫৭
অ- অ+

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, হতাহতের ঘটনা, নির্বিচার গ্রেপ্তার ও নির্যাতনে গভীর উদ্বিগ্ন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে এ উদ্বেগ জানান জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক।

ফলকার টুর্ক গত ২৩ জুলাই চিঠি লেখেন। এরপর ২৯ জুলাই এই চিঠির জবাব দেয় বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের দেওয়া জবাবে বলা হয়েছে, পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়া তৃতীয় পক্ষের সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পার্থক্যের বিষয়ে পরিষ্কার হতে হবে। বর্তমানে ঘটনার বিচারিক ও প্রশাসনিক তদন্ত চলছে। এ সময় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন ও এর সংশ্লিষ্টদের বাংলাদেশ নিয়ে চূড়ান্ত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা উচিত, তা না হলে সেটি আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমসহ মানুষের ধারণা অন্যদিকে প্রভাবিত করতে পারে।

তদন্তের আগে একপক্ষীয় প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কোনো বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করে বাংলাদেশ।

জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের দপ্তর বাংলাদেশে প্রায় পুরোপুরি ইন্টারনেট বন্ধ ও যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাহত হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে হতাহতের একাধিক খবর পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ফলকার টুর্কের চিঠিতে। বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভ দমনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বুলেটের ব্যবহার, নির্বিচার গ্রেপ্তার, আটক, নির্যাতন ও নিগৃহীত করাসহ মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে।

বিক্ষোভকারীরা সরকারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠীর সহিংস আক্রমণের শিকার হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। এতে আরও বলা হয়েছে, আর্মড পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের মতো আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন আরও ঝুঁকি তৈরি করে। জাতিসংঘ বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়েও অবগত বলে জানিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মনে করেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য বিচার ও জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত জরুরি।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন বাংলাদেশের চলমান সংকট নিরসনে সহায়তা করতে প্রস্তুত- এমন কথাও বলা হয়েছে চিঠিতে।

চিঠির জবাবে যা বলেছে বাংলাদেশ

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের চিঠির জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, তিন সপ্তাহ কোটা সংস্কার নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। এ সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে এবং তাদের সর্বোচ্চ আদালতের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। এ সময়ে আন্দোলনকারীরা যাতে নিরাপদ পরিবেশে আন্দোলন করতে পারে, তা নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পরবর্তী সময়ে এ আন্দোলনে কিছু রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় চরমপন্থি ও জঙ্গিগোষ্ঠী তৃতীয় পক্ষ হিসেবে অনুপ্রবেশ করেছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রসচিব তার জবাবে আরও বলেন, এ তৃতীয় পক্ষের নেতৃত্ব দিয়েছে বিএনপি–জামায়াতে ইসলামী জোট এবং তাদের ছাত্রসংগঠনগুলো।

তারা ভুল তথ্য ও উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভুল পথে পরিচালিত এবং কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘাত ও সহিংসতার উসকানি দেয় বলে দাবি করা হয়েছে চিঠিতে। বলা হয়েছে, পরিস্থিতি খারাপ হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের আড়ালে দুঃখজনকভাবে কিছু মানুষ নিহত হয় এবং কিছু গুরুতর বর্বরতার ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ সময় তৃতীয় পক্ষ এ আন্দোলনকে নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় এবং সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের রাজত্ব কায়েম করে।

চিঠিতে ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে পররাষ্ট্রসচিব কিছু স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সুর মিলিয়ে ঢালাও মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/০১/আগস্ট/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
হামদর্দ বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভা অনুষ্ঠিত
পাবনা-ঢাকা সরাসরি এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর দাবিতে মানববন্ধন
নড়াইলে পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু
মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী খুন: ডিবির অভিযানে আরও দুইজন গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা